রুশ সামরিক ঠিকাদার ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন তার দেশের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাদের মোকাবেলা করতে অগ্রসর হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই ‘বিদ্রোহী’কে রুখতে সামরিক বাহিনীর প্রতি নির্দেশ জারি করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। তবে প্রিগোঝিন সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কী ঘটছে, তা পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এই ঘটনা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বেশ জটিল অবস্থায় ফেলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। তাকে মস্কোর ঘটনাবলী সম্পর্কে তার স্টাফরা অবগত করেছেন বলেও জানানো হয়েছে।
শনিবার প্রিগোঝিন সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি অডিও মেসেজ পোস্ট করেন। এত তিনি বলেন যে তার যোদ্ধারা ইউক্রেন থেকে রুশ নগরী রোস্টভে প্রবেশ করেছে এবং যারাই তাদের থামানোর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি যুদ্ধ করবেন।
এর আগে রুশ কর্তৃপক্ষ প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তের নির্দেশ দেয়। তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগুকে অপসারণ করতে চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে শুক্রবার প্রিগোঝিন অভিযোগ করেন যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার ভাড়াটে সৈন্যদের ওপর রকেট হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে তার বাহিনী রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছে।
তিনি জানান, ওই হামলায় তার দুই হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তিনি অবশ্য নিহতের কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।
প্রিগোঝিন বলেন, ‘আমাদের সাথে ২৫ হাজার লোক আছে। দেশ কেন এমন এই বিশৃঙ্খলায় পড়ল, তা খতিয়ে দেখতে যাচ্ছি।’ তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সামরিক সদস্যদের মধ্যে তার অনেক সদস্য রয়েছে। তাছাড়া সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তাও তার কথায় প্রকট হয়ে ওঠেছে।
তিনি বলেন, তার পদক্ষেপ সামরিক অভ্যুত্থানের মতো নয়। তবে এটা ‘ন্যায়বিচারের জন্য এগিয়ে যাওয়া।’
তবে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এনেছে বলে রুশ সংবাদ সংস্তা তাস শুক্রবার জানিয়েছে।
এছাড়া ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে এবং ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
বাখমুতে রুশ হামলায় কয়েক মাস ধরে ওয়াগনার গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে তাদের দ্বন্দ্বও বেশ পুরনো।
আলজাজিরার সংবাদদাতা আলী হাশেম দোনেৎস্ক থেকে বলেন যে ‘যা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, তা হিমশৈলীর অগ্রভাগ মাত্র।’
প্রিগোঝিন কয়েকবারই প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু এবং রাশিয়ার শীর্ষ জেনারেল ভ্যালেরি জেরাসিমোর বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ এনে বলেছেন, তারা তার বাহিনীকে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ দিচ্ছেন না।
সূত্র : আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি ও অন্যান্য
Leave a Reply