1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

ডলার সঙ্কটে আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩

-চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ সরবরাহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
-যথাসময়ে ব্যয় পরিশোধ না করায় গুনতে হচ্ছে জরিমানা
-রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

বিপিসির জ্বালানি তেল, ফার্নেস ওয়েল, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জামাদি, সার, ভোগ্যপণ্যসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। কিন্তু ডলার সঙ্কটে এসব পণ্যের দায় পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। তারা প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়ে চাহিদাপত্র দিচ্ছে। এভাবে গড়ে দিনে দেড় শ’ কোটি ডলার থেকে ১৬০ কোটি ডলারের চাহিদাপত্র ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসছে। কিন্তু রিজার্ভ বেশি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর চাহিদার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সরবরাহ করতে পারছে। গত বৃহস্পতিবার ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। যেখানে চাহিদা ছিল প্রায় দেড় শ’ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কম করে ডলার বিক্রি করেও চলতি অর্থবছরের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সাড়ে ১১ মাসে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে। এ পরিমাণ ডলার এর আগে কখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করতে হয়নি। আর এ কারণে গত বছরে যেখানে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে গত বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

এ দিকে প্রয়োজনীয় ডলার না পাওয়ায় ব্যাংকগুলো আমদানি ব্যয় যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। এর ফলে ব্যাংকগুলোর বাড়তি চার্জ বা জরিমানা গুনতে হচ্ছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। সরকারি ব্যাংকের একজন তহবিল ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, শুধু জরিমানাই গুনতে হচ্ছে না, এর সাথে বাংলাদেশী ব্যাংকগুলোর সুনামও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এমনিতেই মুডিস রেটিংয়ের মান কমিয়ে দেয়া হয়েছে, এর ওপর যথাসময়ে বিদেশী ব্যাংকগুলোর আমদানি ব্যয় মেটাতে না পেরে সঙ্কট আরো বেড়ে যাচ্ছে। নানা সার্ভিস চার্জ মেটাতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পণ্য আমদানি ব্যয়ের ওপর। এর ফলে পণ্যের আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর চাহিদা দিন দিনই বেড়ে যাচ্ছে। আগে গড়ে যেখানে এক হাজার থেকে ১২০০ মিলিয়ন ডলারের চাহিদা আসত। সেখানে গত সপ্তাহজুড়েই ১৬০০ মিলিয়ন বা ১৬০ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলারের চাহিদা আসছে। এর অন্যতম কারণ হলো, আইএমএফের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি সম্মানজনক অবস্থানে ধরে রাখার শর্ত হিসেবে রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগে যেখানে ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল, তা এখন পর্যায়ক্রমে কমাতে কমাতে ৪ বিলিয়ন ডলারের নামিয়ে আনা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে রফতানিকারকদের সহায়তা করতে স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু রফতানিকারকদের প্রয়োজন ডলার, স্থানীয় মুদ্রা নয়। আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা ওই তহবিল থেকে কোনো অর্থ নেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাদের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার না পাওয়ায় সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলারের চাহিদাপত্র বেশি হারে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরবরাহ করতে বাধ্য কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সাধারণত ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট দেখা দিলে বা কোনো পণ্য আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো প্রতিদিন তাদের নিজেদের কাছে কী পরিমাণ ডলার ধরে রাখতে পারবে তার একটি কোঠা দেয়া আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যাকে ব্যাংকিং ভাষায় এনওপি অর্থাৎ নেট ওপেন পজিশন বলে। দিন শেষে নির্ধারিত এ কোঠার অতিরিক্ত ডলার কোনো ব্যাংকের হাতে থাকলে হয় ওই ডলার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার কেনার মতো কোনো ব্যাংক না থাকলে ওই ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোর জরিমানা গুনতে হয়। সাধারণত ব্যাংকগুলোর মূলধনের ১৫ শতাংশ সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা তাদের হাতে রাখতে পারে। এভাবে অতীতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বাড়তি ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন বাজারে ডলার চাহিদা বেশি। কিন্তু যে পরিমাণ চাহিদা ওই অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ডলার সংস্থান করতে পারছে না। ফলে প্রতিটি ব্যাংকেরই কমবেশি ডলার সঙ্কট রয়েছে। আর এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে না। এখানেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে।

অপর একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক বলেন, বিদ্যুতের সরঞ্জামাদিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি না খুললে নানা ধরনের তিরস্কার শুনতে হয়। কিন্তু এলসি খোলার পর ব্যবসায়ীরা ডলার সংস্থান করতে পারে না। আর জরিমানা গুনতে হয় ব্যাংকের।
এ দিকে ডলার সঙ্কটের কারণে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ৭০ পয়সা বেড়ে ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১০৯ টাকা উঠে গেছে। দেশের ইতিহাসে ডলারের এই বিনিময় হার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সায় উঠেছিল। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, বুধবার ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলারের লেনদেন করেছে ১০৮ টাকা ৩ পয়সা থেকে ১০৯ টাকায়। এক বছর আগে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম ছিল ৯২ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ১৬ টাকা ২০ পয়সা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমার অন্যতম কারণ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া। কিন্তু এর বিপরীতে রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্সে তেমন গতি নেই। এ দিকে বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হয়েছে ১১২ টাকা থেকে এক শ’ সাড়ে ১২ টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com