আজ ১২ জুন সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এটি নগরবাসীর জন্য পঞ্চম নির্বাচন। ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল দলীয় প্রতীকের বাইরে। ২০১৮ এবং এবার ২০২৩ সালের নির্বাচন হচ্ছে সরাসরি দলীয় প্রতীকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আসার পর থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে দুপুর ১২টার মধ্যেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ বাদে সকল দলের প্রার্থী।
বিগত নির্বাচনের মতো এবারো কারচুপি ও ভোট ডাকাতির আশঙ্কায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও গতবারের আলোচিত মেয়র প্রার্থী বাসদের ডা. মণীষা চক্রবর্তী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাদে অন্যান্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন।
সবদলের অংশগ্রহণ না থাকায় এবারের নির্বাচন নিয়ে জনগণের বিশাল একটি অংশের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তারা এই নির্বাচনকে একতরফা নির্বাচন হিসেবেই ধরে নিয়েছেন। বিগত নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বরিশালে সবসময়ই বিএনপির ভোটব্যাংক বেশি।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবার মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের পদধারী সক্রিয় নেতারা অনেকটাই নির্জিব ও নিস্ক্রিয়।
এবার নৌকা প্রতীক পাওয়া মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করেছেন সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীরা।
আওয়ামী লীগের চলমান এই বিভাজন দূর না হওয়ায় ফলাফল ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের হাতপাখা ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসের লাঙল প্রতীক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসতে পারেন।
এদিকে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবীব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বিএনপির ভোটব্যাংকের বড় একটি অংশ তার দিকে ঝুকে পরতে পারে।
এদিকে বরিশাল নগরীর মধ্যে থাকা পলাশপুর ও ভাটারখাল/কেডিসি কলোনির (বস্তি) ভোটারদের মাঝে নৌকার প্রার্থী টাকা বিলিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। এ বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। আলোচিত এই কলোনিগুলোতে ১৫ হাজারের বেশি ভোট রয়েছে। এসব ভোট টাকার বিনিময়ে বিক্রি হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। দুই প্রার্থীর অভিযোগ সত্য হলে আজকের ফলাফলে নৌকার প্রার্থী অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।
বরিশালের সিটির নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের একান্ত আলাপচারিতায় সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা জানান, ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি, তার প্রমাণ তো তখনকার মিডিয়াগুলো দেখলেই পাওয়া যায়। দুপুরের মধ্যেই একজন ছাড়া অন্য সকল মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পরও কি সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলার সুযোগ আছে?
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।
ইতিহাস
বরিশাল সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা। ব্রিটিশ সরকার নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৮৬৯ সালে ‘বরিশাল টাউন কমিটি’ নামে প্রথম মিউনিসিপ্যালিটি গঠন করেন। যা ‘টাউন কমিটি অ্যাক্ট ১৮৬৮’ দ্বারা বাস্তবায়িত হয় ও পদাধিকার বলে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা পরবর্তীকালের ডেপুটি কমিশনারগণ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। সে অনুযায়ী তৎকালীন জেলা প্রশাসক জে.সি. প্রাইজ টাউন কমিটির প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৮৭৬ সালে মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্ট দ্বারা বরিশাল শহরকে মিউনিসিপ্যালিটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৫ জন কমিশনার দ্বারা মিউনিসিপ্যালিটি গঠন করা হয়। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, কমিশনারদের মধ্যে ১০ জন নির্বাচিত, চারজন মনোনীত ও একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। জনসাধারণের মধ্যে থেকে রুপাই মাঝি ছিলেন বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটির প্রথম চেয়ারম্যান।
ওইসময় বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটির আয়তন ছিল ৭ বর্গমাইল (১৮.১৩ বর্গ কিলোমিটার) ও জনসংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৫০১ জন। প্রতিষ্ঠাকালে বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটির ওয়ার্ড ছিল ২টি, পাকিস্তান আমলে বাড়িয়ে ১০টি ওয়ার্ড করা হয় ও শহরের আয়তন হয় ২০ বর্গকিলোমিটার ও জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ। বাংলাদেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত এ মিউনিসিপ্যালিটির ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচিত মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পৌরসভার আয়তন বাড়িয়ে ২৫ বর্গকিলোমিটার করা হয়।
১৯৮৫ সালে বরিশাল পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন স্থাপনকল্পে ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন আইন, ২০০১’ প্রণীত হয় ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একটি স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৫ জুলাই ২০০২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়, ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে বর্ধিত এর আয়তন দাঁড়ায় ৫৮ বর্গকিলোমিটারে।
জনসংখ্যা, ভোটার ও ভোটকেন্দ্র
২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। তবে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন। বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বরিশাল নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪ হাজার ৯১৭ জন, আর সবচেয়ে কম ভোটার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ হাজার ১৯২ জন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১৬৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর মধ্যে সাতজন মেয়রপ্রার্থী। এবার নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪ কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট পর্যবেক্ষণে ১ হাজার ১৪৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ হাজার ৪০০ পুলিশ, আনসার, এপিবিএন, র্যাব দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
বরিশাল সিটির প্রশাসক, চেয়ারম্যান এবং মেয়রদের ধারাবাহিক তালিকা
জে.সি. প্রাইজ (১৮৬৯-১৮৮৪) বরিশাল টাউন কমিটির প্রথম সভাপতি।
প্যারীলাল রায়, বরিশাল পৌরসভার প্রথম মনোনীত চেয়ারম্যান (১৮৮৫-১৮৮৮)।
দীনবন্ধু সেন, ভাইস চেয়ারম্যান (১৮৮৫-১৮৮৮)।
দ্বারকানাথ দত্ত, চেয়ারম্যান (১৮৮৯-১৮৯২)।
ডা. তারিণী কুমার গুপ্ত, ভাইস চেয়ারম্যান (১৮৮৯-১৮৯২)।
অশ্বিনী কুমার দত্ত (১৮৯৩-১৯০৯), চেয়ারম্যান, মোট ১১ বছর।
ডা. তারিণী কুমার গুপ্ত, ভাইস চেয়ারম্যান (১৮৯৩-১৮৯৬)।
ডা. তারিণী কুমার গুপ্ত, চেয়ারম্যান (১৯১০-১৯১৯) (পরপর ৩ বার)।
নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত (১৯২০-১৯৩৪), চেয়ারম্যান পরপর ৫ বার (সর্বোচ্চ)।
শরৎ চন্দ্র গুহ (১৯৩৫-১৯৪০), চেয়ারম্যান পরপর ২ বার।
বরদাকান্ত ব্যানার্জি, চেয়ারম্যান (১৯৪১-১৯৪৫)।
মৌলভী মোফাজ্জেল হক, (১৯৪৬-১৯৫২) বরিশাল পৌরসভার প্রথম মুসলিম চেয়ারম্যান।
খানবাহাদুর হাশেম আলী খান (১৯৫২-১৯৫৪)।
মৌলভী মোফাজ্জেল হক (১৯৫৪-১৯৫৮), চেয়ারম্যান (দ্বিতীয় দফায়)।
১৯৫৮-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বর্তায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের ওপর।
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (১৯৭৩-১৯৭৫), চেয়ারম্যান।
ডা. মো: আব্দুল আজিজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, (১৯৭৫-১৯৭৮)।
আবদুর রহমান বিশ্বাস (১৯৭৬-৭৭) চেয়ারম্যান।
আনিচ তালুকদার (১৯৭৯-১৯৮২)- (ভারপ্রাপ্ত)।
গোলাম মাওলা (১৯৮৪-১৯৯০) চেয়ারম্যান।
আহসান হাবিব কামাল (১৯৯১-২০০৩) ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
মো: মজিবর রহমান সারওয়ার (২০০৩-২০০৮) প্রথম নির্বাচিত মেয়র।
আওলাদ হোসেন দিলু (২০০৭- ২০০৮) ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
শওকত হোসেন হিরণ (২০০৮-২০১৩) দ্বিতীয় নির্বাচিত মেয়র।
আলতাফ মাহমুদ শিকদার (জুন ২০১৩-অক্টোবর ২০১৩) ভারপ্রাপ্ত মেয়র।
আহসান হাবিব কামাল (২০১৩-আগস্ট ২০১৮) তৃতীয় নির্বাচিত মেয়র।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ (২০১৮-বর্তমান) চতুর্থ নির্বাচিত মেয়র।
বরিশালের সাত মেয়র প্রার্থী কে কোথায় ভোট দেবেন?
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া সাত প্রার্থী ভোটের শুরুতেই নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ হবে। এবার সব কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলবে ভোট গ্রহণ।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত নগরীর কালিবাড়িরোডস্থ সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
নগরীর গোরস্থান রোডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম রূপাতলী হাউজিং আ. রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
এছাড়া ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু।
টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন কালুশাহ সড়কের আলেকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
হরিণ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর ইস্কান্দার শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেবেন।
হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো: আসাদুজ্জামান সদররোডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
খোকনের বিশ্বাস ও রুপনের অভিযোগ
উন্নয়নের প্রশ্নে বিএনপির সমর্থকরাও আমাকে ভোট দিবে : খোকন
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, সবকিছু ম্যান টু ম্যান ভেরি করে। বিজয়ী হলে বরিশালের উন্নয়ন করার নিশ্চয়তা আমি দিয়েছি। যার কারণে জনগণ আমাকে ভোট দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেইসাথে বিএনপির সমর্থকরাও মনে করছে আমাকে ভোট দিতে পারলে নগরবাসী সেবা পাবে। দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষ আমাকে ভোট দিবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিবে।
রোববার (১১ জুন) দুপুর দেড়টায় নগরের সদররোডস্থ আওয়ামীলীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় নির্বাচনের পরিবেশ আর প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন, যেহেতু আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকতেই পারে, করতেই পারে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সবকিছু স্বাভাবিক ও চমৎকার পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। এখানে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
খোকন আরো বলেন, অভিযোগ যে কেউ করতে পারে। কোনো বিষয়ে আমি পাল্টা জবাবও দিতে চাই না। তবে আমি বলবো নির্বাচনের পরিবেশটা ভালো আছে। এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
ভোটের জন্য বস্তিতে অর্থবিতরণ, সিটিতে বহিরাগতদের বিচরণসহ জাতীয় পার্টির প্রার্থীর তোলা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়।
বরিশাল সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে বরিশাল সিটি নির্বাচন। যেকোনো নির্বাচনের প্রভাব থাকলেও এ ধরনের নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে আমার অনুমান হচ্ছে না।
প্রচারণায় ধর্মের ব্যবসার বিষয়ে খোকন বলেন, আমি অভিযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। ধর্মকে কেউ যদি টুলস্ হিসেবে ব্যবহার করে সেটা তারাই খতিয়ে দেখবে।
সংবাদ সম্মেলন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, সাবেক সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালে নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ নেই : রুপন
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন অভিযোগ করেছেন নির্বাচনের কোনো স্বাভাবিক পরিবেশ নেই।
রোববার (১১ জুন) দুপুরে কালুশাহ সড়ক তার নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়ে এই অভিযোগ করেন।
রুপন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বহিরাগতদের নগরীতে এনে রেখেছেন। কালো টাকার ছড়াছড়ি চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা, বস্তিতে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন। এর অসংখ্য প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে।
বরিশালের ভোটার যারা তারাইতো বরিশালে থাকার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন থানা, জেলা, পৌরসভার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বরিশাল সিটিতে অবস্থান করছেন। বহিরাগতদের কারণে বরিশাল শহরে যানজট লেগে আছে।
এই মেয়র প্রার্থী বলেন, এত বহিরাগত নগরীতে এনে সরকার সমর্থকরা কি করতে চাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। নির্বাচন কমিশনের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আমার কোনো কথাও শোনেনি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আমার পাঁচজন কর্মীকে হয়রানিমূলক গ্রেফতার করেছে।
২৮ মে নির্বাচন অফিসে স্শরীরে হাজির হয়ে বলেছিলাম ৩০টি ওয়ার্ডে সরকার দলীয় প্রার্থীর ৩০০ কার্যালয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা তখন বলেছেন, লিখিত অভিযোগ দেয়া লাগবে না। দু’দিনের মধ্যে কার্যালয় সরানো হবে। কিন্তু তার কোনো পদক্ষেপ নেননি নির্বাচন অফিস। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। আমি চাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে কথা বলেছেন তেমনি সুষ্ঠু ভোট দেবেন। সুষ্ঠু ভোট দিলে আমার জয় নিশ্চিত।
Leave a Reply