একদিকে তীব্র তাপদাহ, অন্যদিকে ভয়াবহ লোডশেডিং। গত দুই সপ্তাহ ধরে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় হুমকির মধ্যে পড়েছে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। হিটস্ট্রোকে প্রতিদিনই শেডে মুরগি মারা যাচ্ছে।
গাজীপুর সদরের নয়াপাড়ার ফকির মার্কেটের ক্ষুদ্র খামারি মামুন ফকির জানান, তার শেডে ৮০০ ব্রয়লার মুরগি ছিল। গত মঙ্গলবার সারাদিন বিদ্যুৎহীন ছিল। পরের দিনও লোডশেডিং ছিল। হিটস্ট্রোকে প্রায় পৌনে ২০০ মুরগি মারা গেছে।
তিনি জানান, সাধারণত ৩৪ থেকে ৩৫ দিন বয়স হলে মুরগি বিক্রি করে দেই। কিন্তু এবার ভয়ে নির্ধারিত সময়ের ৫ থেকে ৬ দিন আগেই বাকি মুরগি বিক্রি করে দিতে হলো। প্রতিকেজি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে পাইকারীতে বিক্রি করেছি। এবার ২৫ হাজার টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
গাজীপুর সদরে প্যারাগনের মুরগির বাচ্চা ও ফিডের ডিলার শফিকুল ইসলাম জানান, এই মুহূর্তে আমার আওতাধীন ক্ষুদ্র খামারিদের শেডে ৩০ হাজার মুরগি রয়েছে। তাদের সাথে প্রতিনিয়ত কথা হচ্ছে। যার শেডে ৮০০ থেকে ১ হাজার মুরগির আছে, দৈনিক ৩০ থেকে ৪০টি করে মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, তাপদাহের পাশাপাশি চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। খামারিরা ঠান্ডা পানি স্প্রে করে মুরগির শেডের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, কোথাও কোথাও পানিও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এমনিতেই খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তার ওপর এই তাপদাহে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। ফলে খরচ আরো বাড়ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মহসিন জানান, একটা শেডে ব্রয়লার/লেয়ার মুরগির তাপমাত্রা সহ্যের ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর ওপরে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না। কিন্তু আজ (বুধবার) তাপমাত্রা ১১৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেকর্ড হয়েছে। শেডে পানি ছিটানো ছাড়া গত্যান্তর নাই।
তিনি বলেন, একদিকে তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে ভয়াবহ লোডশেডিং। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে মুরগি রক্ষায় পানি ছেটাচ্ছেন খামারিরা। গড়ে ০.৪ শতাংশ মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খন্দকার মহসিন বলেন, পোল্ট্রি সেক্টরে খুবই খারাপ অবস্থা চলছে। বর্তমান হিটস্ট্রোকের নেতিবাচক প্রভাব আগামী জুলাই নাগাদ পড়বে। মুরগির উৎপাদন অনেক কমে আসবে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৯৩ হাজার মুরগির খামার (লেয়ার ও ব্রয়লার) রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে পোল্ট্রি খাতের সাথে আছি। এতো তাপমাত্রা আগে কখনো দেখি নাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মুরগির কিডনি, হার্ট, ফুসফুস কাজ করতে না পারার কারণে স্ট্রোক করে থাকে। গাদাগাদী করে থাকায় এবং পানির কোনো ঘাটতি থাকলে এই প্রকোপ বেড়ে যায় অনেকাংশে। গরমের সময় রক্ত চলাচল দ্রুততর হওয়ার জন্য হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। কোনো কোনো সময় রক্ত জমাট হতে পারে। এই রক্ত জমাট হওয়াটাই হিটস্ট্রোক।
পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাবে খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে খামারিদের। নতুন করে শেডে মুরগির বাচ্চা তুলছেন না তারা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী জুলাই মাস থেকে। তখন দেশে মুরগির উৎপাদন অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply