সমগ্র পৃথিবী যখন পাপ পঙ্কিলতার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত ছিল, পাশবিকতা আর আস্ফালন ব্যাপকহারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, হত্যা লুণ্ঠন মানুষের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া ছিল মানহানির কারণ। তখন ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্ব শ্রেণীর মানুষের অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে একজন আপসহীন মহামানবের আবির্ভাব অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল!
এমন সময় মানবতাকে সভ্যতার আলোর দিকে এগিয়ে নিতে মুক্তির মহান বাণী নিয়ে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অবিসংবাদিত মহামানব হজরত মুহাম্মদ সা:।
জাহেলি যুগের অবাঞ্ছনীয় পরিস্থিতি বালক মুহাম্মদ সা:-এর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে, তিনি সমাজকে রক্ষা করতে সর্বদা চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। তাঁর তনু-মনে এক অভিনব চিন্তার উদ্রেক হয়। নবুয়তের ১৫ বছর আগে ২৫ বছর বয়সে তিনি তাঁর সমবয়সী কিছু যুবককে নিয়ে ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি যুব সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন দমনের লক্ষ্যে এই সংগঠনের গোড়াপত্তন হলেও ধারণা করা হয় যে, বিশেষ একটি যুদ্ধের ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংগঠন গঠিত হয়!
এই সংঘের চারজন বিশিষ্ট সদস্য- ফজল, ফাজেল, ফজায়েল ও মোফাজ্জেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘হিলফুল ফুজুল’। এই সংঘের কর্মসূচি ছিল- ১. আমরা দেশের অশান্তি দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব; ২. বিদেশী লোকদের ধন-প্রাণ মান-সম্মান রক্ষা করতে সদা সচেষ্ট থাকব; ৩. বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সহানুভূতি ও সদ্ভাব স্থাপনে কুণ্ঠাবোধ করব না; ৪. অত্যাচারী ও তার অত্যাচারের হাত থেকে অত্যাচারিতকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব!
এভাবে মুহাম্মদ সা:-এর প্রতিষ্ঠিত ‘হিলফুল ফুজুল’ বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কল্যাণী সেবাসংঘের মর্যাদা লাভ করে এবং এর মধ্য দিয়ে মহানবী সা: নবী হওয়ার আগেই শান্তির অগ্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেন।
জাহেলি যুগে আরব সমাজের অন্যায় অনাচারের প্রতিরোধে হিলফুল ফুজুল গঠিত হলেও মহানবী সা:-এর নেতৃত্বে গঠিত এ শান্তি সংগঠনটি সর্বকালের যুবকদের জন্য এক আদর্শ শিক্ষা ও পথনির্দেশক! বর্তমান যুগে জাহেলি যুগের মতো কলুষিত সমাজ পরিলক্ষিত না হলেও এখনো সমাজে বহু মানুষ অত্যাচার অনাচার ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এখনো সমাজে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন, সুদ, ঘুষ প্রভৃতি অসামাজিক কাজ কমবেশি প্রচলিত রয়েছে। যদি আজো যুব সমাজ হিলফুল ফুজুলের আদর্শ শিক্ষায় লালিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সোচ্চার হয় এবং সমাজের সব অন্যায় অনাচার প্রতিরোধে শান্তি সংগঠন গড়ে তুলে তবে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন অনেকটাই নিশ্চিত হবে।
লেখক : সদর নোয়াখালী থেকে
Leave a Reply