রাজধানী ঢাকাসহ আট জেলায় গতকাল কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। এ সময় বজ্রপাতও ঘটে। ঝড়ে রাজধানী ঢাকা, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী, পাবনা, শরীয়তপুর ও সুনামগঞ্জে বিপুল গাছপালা উপড়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য কাঁচা বাড়িঘর। ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে ও বজ্রপাতে এসব জেলায় দুই স্কুলছাত্রসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বজ্রপাতে নরসিংদীতে ৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ ও পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, শরীয়তপুরের গোসাইরঘাট ও পটুয়াখালীর দশমিনায় একজন করে মারা যান। ঝড়ে গাছচাপায় একজন মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে।
ঢাকা : রাজধানী ঢাকায় ১০২ কিলোমিটার বেগে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। বিকাল ৫টার পর এই ঝড় শুরু হয়, চলে প্রায় এক ঘণ্টা। এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টিপাতও হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, বিকালে শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ১০২ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায়। তবে আগারগাঁওয়ে ঝড়ের গতি রেকর্ড করা হয়েছে ৭৪ কিলোমিটার। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে। এক থেকে দুই ঘণ্টা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হওয়ার পর আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা
বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুরে পৃথক বজ্রপাতে দুই কৃষকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। দুপুর ২টার দিকে নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক নামে এক ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। একই উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে মেদির হাওরে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান কৃষক মোজাম্মেল হক। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুরে নিজ জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান কৃষক মনু মিয়া। এদিকে নবীনগর পৌর এলাকার কোনাঘাট মোড়ে বেলা ১১টায় ঝড়ে জামগাছ চাপা পড়ে সিএনজি অটোরিকশাচালক আলী হোসেনের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি উপজেলার থোল্লাকান্দি গ্রামে।
চাঁদপুর : সদর উপজেলার পশ্চিম ছোট সুন্দর গ্রামে বজ্রপাতে মো. হাসান মিজি নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বিকাল ৩টার দিকে ওই গ্রামের গফুর মিয়াজী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ধর্মপাশা : ধর্মপাশায় বজ্রপাতে ওমর ফারুক নামে এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় কালাচান ও কাসেম নামে আরও দুজন গুরুতর আহত হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জয়শ্রী ইউনিয়নের বরইয়া নদীর শীমেরখাল নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শ্রীপুর (গাজীপুর) : শ্রীপুরে মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে বজ্রপাতে শিক্ষকসহ পাঁচজন আহত হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পায় ৩৫ শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের লাকচতল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মৌমিতা নামে এক শিক্ষার্থীকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : ভৈরবে বজ্রপাতে কাজী জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। দুপুরে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুইন্দা খলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
রানীনগর (নওগাঁ) : রানীনগরে ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে জামিল প্রামাণিক নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
দশমিনা : দশমিনা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাটাখালী গ্রামে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় গ্রামের আ. রব তার বাড়ির সামনের মসজিদের পাশে থাকা গাভী আনতে যায়। এ সময় বজ্রপাত হলে গরুসহ তার মৃত্যু হয়।
পাবনা : ধান কাটার সময় ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। আহত হয় ১৩ জন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিকেলে উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- জেলার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা শাকিল হোসেন ও রমিজ উদ্দিন।
শরীয়তপুর : গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নে টিউবওয়েল থেকে আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মাঈনউদ্দিন মান নামে এক কৃষক মারা যান। বিকাল ৩টার দিকে কোদালপুর ইউনিয়নের রসিদ সরদার পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
-প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন জেলায় কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
Leave a Reply