স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩শ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের অনুসন্ধানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে বারংবার তলব করা হলেও হাজির হচ্ছেন না তিনি। শুধু তাই নয়, তার কাছে অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়েও পাচ্ছে না কমিশন। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আব্দুর রশীদ মিয়া অনুসন্ধানের শুরু থেকেই চরম অসহযোগিতা করছেন।
সর্বশেষ গত ১৫ মে এ প্রকৌশলীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য। কমিশনের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মানসী বিশ^াস সংশ্লিষ্ট নথিপত্রসহ আব্দুর রশীদ মিয়াকে দুদকে হাজির হতে তার কর্মস্থল আগারগাঁওয়ের এলজিইডি ভবনের ঠিকানায় নোটিশ পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মাধ্যমেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছেও দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারণ সেখানে এ প্রকৌশলীর গ্রামের বাড়ি। চিঠিতে আব্দুর রশীদ মিয়ার নামে, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়দের নামে স্থানীয় পর্যায়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকলে সেসবের তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, আব্দুর রশীদ মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এলজিইডির প্রশাসন ও ট্রেনিং বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অর্জনের। এর আগে অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩শ কোটি টাকা কামিয়েছেন এবং এ টাকায় যেসব সম্পদ গড়েছেন, সেগুলোর অধিকাংশই তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়দের নামে। এ ছাড়া এলজিইডিতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রার্থীপ্রতি তিনি কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের মধ্যে বেশকিছুরই সত্যতা পাওয়া গেছে। তার সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রশীদ মিয়ার বক্তব্য নিতে ইতিপূর্বে গত ১০ ও ১৬ এপ্রিল এবং ২ মে তিন দফায় তাকে নোটিশ পাঠানো হয় দুদক থেকে। কিন্তু তিনি আসেননি। সর্বশেষ নোটিশে অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়াকে নিজের, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের এনআইডি কার্ড, স্মার্টকার্ড, পাসপোর্ট, জন্মসনদের ফটোকপিসহ হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়ার অঢেল সম্পদ সম্পর্কে অভিযোগে বলা হয়, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় জমি, হিমছায়াপুরে বাগানবাড়ি, একই এলাকায় ১০ নম্বর শাহবন্দেগী ইউনিয়নে খন্দকার তলা মৌজায় ৫ একর জমি, শেরপুর সেরময়া মৌজায় ১২ বিঘা জমি, রাজশাহীতে ৫ ও ৭ তলা দুটি বাড়ি, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ২৫ শতাংশ জমিতে ফুডগার্ডেন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কে আরও একটি ফুডগার্ডেন রয়েছে। এসব সম্পদের আনুমানিক বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকে তার নামে কোটি টাকার বেশি এফডিআর এবং রাজধানীতে একাধিক এলাকায় তার বেনামে ফ্ল্যাট রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আব্দুর রশীদ মিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এ ছাড়া দুদকে হাজির না হওয়ার অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য জানতে চাইলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
Leave a Reply