মাত্র এক মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আদা ও পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আগে থেকে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। নিত্যপণ্যের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। গতকাল রাজধানীর বাজারঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এক মাস আগেও রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালোমানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অথচ গত মাসেই আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক।
ক্রেতারা বলছেন, মাছ-গোশত, মসলা ও শাকসবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
টিসিবির তথ্যানুযায়ী, গতকালের বাজারদরের তালিকায় পেঁয়াজ, আদা, ডিম ও কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশী পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২১ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশী ও আমদানি রসুনের দাম পরিবর্তন হয়নি, কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে আদা-পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। দেশে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চ থেকে হিলিসহ দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। মসলাপণ্য দুটির বাজার মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি কম হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে আমদানির বিকল্প নেই। পেঁয়াজ আমদানি না করা গেলে বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী হবে। কারণ বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। ঋণপত্র খোলায় (এলসি) জটিলতার কারণে চাহিদামতো আদা ও রসুন আমদানি করতে পারছেন না তারা।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অন্য দিকে চাল কুমড়া পিস ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির সরবরাহ কম। ঢাকায় পাইকারি বাজারে সবজি কম আসছে আগের তুলনায়। এ ছাড়া অনেক ধরনের সবজির মৌসুম এখন শেষের দিকে ফলে সেসব সবজির দাম বাড়তি। চাহিদার তুলনায় ঢাকায় কম আসায় কাওরান বাজারসহ পাইকারি বাজারগুলোতেই সবজির দাম বাড়তি। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
বাজারে পাটশাক জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, কলমিশাক জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচু দুই আঁটি ২০ টাকা, লালশাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, শাপলা ডাঁটা ১০ টাকা, ডাঁটা শাক ১০ টাকা, সবুজ ডাঁটা ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ধনেপাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
মুদি দোকানগুলোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা ও চিনি ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনো চিনির সঙ্কট কাটেনি। বেশির ভাগ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগির কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দেশী প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply