-স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে রোববার
-গতিবেগ হবে ১৫০ কিলোমিটার
ঘূর্ণিঝড় মোখার শুরু আজ বৃহস্পতিবার থেকে। এটা হয়তো সাগরে আরো দুই অথবা তিন দিন ঘূর্ণায়মান থাকবে। উপকূলে উঠে আসতে পারে শনিবার সকাল থেকে রোববার সকালের মধ্যে। গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় প্রথমে নিম্নচাপ এবং কিছুক্ষণ পরেই নিম্নচাপ পর্যায় শেষ করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় প্রক্রিয়াটি। আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় গভীর নিম্নচাপের পরবর্তী ধাপে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের উপকূল থেকে গভীর নিম্নচাপটি অনেক দূরে অবস্থান করছে। গতকাল দুপুর ১২টায় কক্সবাজার থেকে এক হাজার ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল এবং চট্টগ্রাম থেকে ছিল এক হাজার ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। অন্য দিকে মংলা বন্দর থেকে এক হাজার ৫১০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা বন্দর থেকে এক হাজার ৪৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। কিন্তু এটা শিগগিরই সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে। দিক পরিবর্তন করে উত্তর ও উত্তরপূর্বদিকে অগ্রসর হতে থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে ঘুরে গেলে তা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের উপকূলের দিকে যেতে পারে। আগামীকাল শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় মোখা প্রবল গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর গতকাল দুপুর ১২টায় পূর্বাভাসে জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর অত্যন্ত উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া দফতর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এ দিকে র্ঘূণিঝড় মোখার ব্যাপারে কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ চলতি মাসের প্রথম থেকেই পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। তিনি গতকাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামী ১৪ মে (রোববার) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং পেছনের অংশ অর্থাৎ শেষ অংশ সন্ধ্যা থেকে পরদিন ১৫ মে সোমবার ভোরের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
মোস্তফা কামাল বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেম ঘূর্ণিঝড় মোখার এ পর্যন্ত ৫১টি মডেল তৈরি করেছে। এই মডেলগুলোর বেশির ভাগই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার নির্দেশ করেছে। মোখার কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর ওপর দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্বাভাসের সাথে বাস্তবে কিছুটা পার্থক্য থাকে। বঙ্গোপসাগরে যে গভীর নিম্নচাপ রয়েছে তা রাডার সিস্টেম কিংবা মহাকাশে ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইট চিত্র থেকে বিশ্লেষণ করে তথ্যগুলো আবহাওয়া দফতর প্রচার করছে। সে কারণে আগের দিনের তথ্যের সাথে পরের দিনের তথ্যের কিছুটা গরমিল থাকে।
Leave a Reply