1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ডলার সংকটে বন্ধের উপক্রম

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

কয়লা আমদানি করতে না পারায় উৎপাদনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। ডলার সংকটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পায়রার মতো বড় কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। এদিকে ডলার সংকটে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রেও কয়লা আমদানির জটিলতায় উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও অন্যতম সফল বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির মালিকানাধীন পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩০২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। গড়ে দেশের দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় এ কেন্দ্রটি। জানা গেছে, আমদানিকৃত কয়লার বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ । ফলে কয়লা আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ আছে, তা দিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা যাবে। এ সময়ের মধ্যে কয়লা আমদানি সম্ভব না হলে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংকটে দেশে শুরু হওয়া লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রমজান মাসে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এ কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এটিই একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরো মাত্রায়, এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। তাদের মতে, পায়রার মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভীষণ সংকট দেখা দেবে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে দৈনিক গড়ে কয়লা লাগে ১০ হাজার টন। যার পুরোটাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে সিএমসি। কিন্তু ডলার সংকটে গত ছয় মাস কয়লা ক্রয়ের বিপরীতে কোনো বিল পরিশোধ না করায় বাকি পড়ে গেছে ২৯ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার (৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রায়)। সিএমসি বলছে, টাকা না দিলে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্তত কিস্তিতেও যদি টাকা পরিশোধ করা হয়, তা হলে তারা কয়লা সরবরাহ করতে পারবে।

বিসিপিসিএল বরাবর গত ১৩ এপ্রিল চিঠি দিয়ে সিএমসি জানায়, ২৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওভারডিউয়ের কারণে ‘পিটি বায়ান রিসোর্সেস টিবিকে’ নামের ইন্দোনেশিয়াভিত্তিক কৌল-মাইনিং কোম্পানির কয়লা সরবরাহে পুনরায় ঋণপত্র (এলসি) খুলতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চায়নার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ।

সিএমসির চিঠিতে বলা হয়, এপ্রিলে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হলে মে মাসের জন্য এলসি খোলা যাবে। আবার মে মাসে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে পরিশোধ করা হলে প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ঋণপত্র খোলায় কোনো বাধা থাকবে না।

এ চিঠি পাঠানোর দুই সপ্তাহ পর গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ইমেইল করে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তাগাদা দেয়। সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে সেদিনই বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব

মো. হাবিবুর রহমান বরাবর চিঠি পাঠান বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম। সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

এ চিঠিতে বিসিপিসিএল জানায়, ইতিপূর্বে ওভারডিউ পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর অ্যাকাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা কামনা করা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না পাওয়ায় ওভারডিউয়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ওভারডিউ দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।

এ চিঠির অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের কাছেও পাঠিয়েছে বিসিপিসিএল।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসি) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান মালিকানা রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি, সেই কোম্পানির দাম পরিশোধ করে সিএমসি। বিসিপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কয়লা আমদানিসংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয় মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রোভাইড করে সিএমসি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলো- আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা কিনি, তার ইনভয়েসের এগেইনস্টে সিএমসি এলসি করে পেমেন্ট করে। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের পেমেন্ট মেথড হলো ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ)। শর্তানুযায়ী, আমরা ছয় মাস পর সিএমসিকে বিল দেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কৌল-মাইনিং কোম্পানিকে সিএমসি যে পেমেন্ট দেবে, আমরা জুলাইয়ে সিএমসিকে তা পরিশোধ করব। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাস তো পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরও পাঁচ মাস চলে গেছে। আমরা বকেয়া শোধ করতে পারছি না।’

এত টাকা বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করে কয়লা আমদানি অব্যহত রাখা জরুরি। কারণ, কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয় পড়বে। ফলে একদিকে সাধারণ মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়বে; অন্যদিকে শিল্পোৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই এখন দিন দিন লোডশেডিং বাড়ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিুবর রহমান বলেন, পায়রার কয়লা আমদানী বাধাগ্রস্ত হবে না। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি, আশা করি কয়লার জোগান নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো বাধা তৈরি হবে না।

এদিকে ডলার সংকটে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রও কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতায় আছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অংশীদারত্বে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট গত ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে এটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নানা সংকটে অব্যাহতভাবে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রামপাল চালু হবে। দু-একদিনের মধ্যেই রামপাল চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com