ঘূর্ণিঝড় মোখা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আরো জোরদার হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিম্নচাপের আগের অবস্থা সুস্পষ্ট লঘুচাপ বিরাজ করছিল। এটা মঙ্গলবার রাতের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যাওয়ার কথা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলেই আঘাত হানতে পারে এবং উপকূলে ওঠার আগে সমুদ্রে থাকা অবস্থায় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ধারণার চেয়েও বেশি হতে পারে।
এ দিকে বঙ্গোপসাগরে বিরাজমান প্রক্রিয়াটির জেরে সারা দেশেই চলছে চরম গরম অবস্থা। কোনো কোনো স্থানে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের নির্দিষ্ট কিছু অংশে সামান্য বৃষ্টি হলেও অন্য কোথাও এক ফোটা বৃষ্টিও হয়নি বলে আবহাওয়া অফিস বলছে। গতকাল শুধু গোপালগঞ্জে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে শুকিয়ে যাওয়া প্রকৃতি আরো বেশি তেতে উঠেছে। মাথার ওপরে আকাশের দিকে তাকালে শুধু নীল আর নীল, এক খণ্ড মেঘও চোখে পড়ে না। খরতাপের এই সুযোগে গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে গেছে। এটাই ছিল গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তীব্র গরমের এই অবস্থার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং জনজীবনকে আরো অতিষ্ট করে তুলেছে।
আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ধারণার চেয়েও বেশি গতিতে আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে। এটা অবশ্য মিয়ানমারেও আঘাত হানার আশঙ্কা নাকচ করেননি তিনি। তবে ভারতে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও তা আগামী ১৪ মে সকাল থেকে ১৫ মে সকালের মধ্যে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটা হতে পারে একটি সুপার সাইক্লোন।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য গতিবেগ সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে আরো পরে। বিশেষ করে উপকূল থেকে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঝড়টি এগিয়ে এলে তখন সুস্পষ্ট করে গতিবেগ সম্বন্ধে বলা যায়। মোস্তফা কামাল বলেন, অনেক দূরে রয়েছে বলে স্থলভাগে কখন এবং কোথায় আঘাত হানবে তা শতভাগ সুস্পষ্টভাবে এখনি বলা যাচ্ছে না। মডেল পূর্বাভাস থেকে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগ এবং মিয়ানমারের মংডুর দিকে সামান্য ঝুঁকেও পড়তে পারে। এটা তখনই হতে পারে যখন ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা ডান দিকে সরে যাবে। সবকিছুই স্পষ্ট করে বলা যাবে আরো কিছুটা সময় অতিক্রমের পর।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস সন্ধ্যা ৬টা পূর্বাভাসে এ প্রক্রিয়াটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ হয়েছে বলে বলেছে। তবে ভারতীয় আবাহওয়া দফতরগুলো রাতের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলেও বলছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে বরিশাল থেকে কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় ৭ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আর বাতাসের ঝাপটায় দুর্বল ভিত্তির ওপর নির্মিত বাড়িঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে এবং প্রাণহানীও রোধ করা যাবে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেও যেন অন্ধকারে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আলো থাকে সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।
Leave a Reply