উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে তীব্র ক্ষমতার লড়াইয়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী খার্তুম। এতে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ২শ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ানসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন সামরিক শাসক গোষ্ঠীর দুই অংশ সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। গতকাল শনিবার হঠাৎ করেই তা প্রবল সংঘাতে রূপ নেয় এবং এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে তিনজন জাতিসংঘ কর্মীও আছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। একটি সামরিক ঘাঁটিতে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় এই কর্মীরা গুলিবিদ্ধ হন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, সেনাপ্রধানের বাসভবন এবং খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনসহ দুটি বিমানবন্দরের দখল নেওয়ার দাবি করেছে।
তবে আরএসএফ-র ওই দাবি প্রত্যাখান করেছে সেনাবাহিনী। বিমানবন্দরসহ খার্তুমের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাল্টা দাবি করেছে তারাও। এসব জায়গায় সারারাত তুমুল লড়াই চলেছে।
সুদানের ডক্টরস ইউনিয়ন জানিয়েছে, সহিংসতায় অন্তত ২৭ জন নিহত এবং প্রায় ২শ জন আহত হয়েছে। তবে হতাহতদের মধ্যে ঠিক কতজন বেসামরিক ব্যক্তি, তা জানা যায়নি। এর আগে ডক্টরস ইউনিয়ন তিনজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল।
বিবিসি জানায়, দেশের পশ্চিমে কাবকাবিয়ায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে আরএসএফ এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তিন কর্মী নিহত হয়েছে। দুজন স্টাফ গুরুতর আহত হয়েছে এবং আরএসএফ ডব্লিউএফপি’র কয়েকটি গাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে।
রাজধানীজুড়ে গুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। টিভি ফুটেজে কয়েকটি এলাকা থেকে উড়তে দেখা যাচ্ছে ধোঁয়া। স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সামরিক যুদ্ধবিমানগুলোকে অনেক নিচ দিয়ে উড়তে দেখা গেছে। আশেপাশের নগরীগুলোতে গুলি চলার খবর দিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সুদানে আরএসএফ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালু, যিনি হেমেতি নামে অধিক পরিচিত। তিনি সেনাপ্রধান বুরহানকে ‘অপরাধী’ এবং ‘মিথ্যাবাদী’ বলেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আপনি কোথায় লুকিয়েছেন। আমরা আপনাকে ধরব এবং বিচারের আওতায় আনব, অথবা অন্য সব কুকুরের মতো আপনিও মরবেন।’
খার্তুম তথা সুদানের প্রকৃত অবস্থা কী তা এখনো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না। উভয় পক্ষই পরস্পরের দিকে আগে হামলা করার এবং অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ আনলেও পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করছে।
উত্তর আফ্রিকার দরিদ্র দেশ সুদান অর্থনৈতিকভাবে আগে থেকেই ভঙুর অবস্থায় রয়েছে। দেশটির নানা আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সহিংসতার ইতিহাসও দীর্ঘ। এ অবস্থায় আরএসএফ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে চলতে থাকা সংঘর্ষ দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনেক বেশি খারাপ করে তুলবে।
অবশ্য সুদানের রাজনীতি সেই ২০২১ সালের এপ্রিলের সামরিক অভ্যুত্থানের আগে থেকেই উত্তপ্ত হয়ে আছে। ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সুদানকে শাসন করা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে উৎখাত করা হয়। তিনি প্রায় তিন দশক ধরে সুদানের ক্ষমতা আকড়ে ধরে ছিলেন।
বশিরকে উৎখাতের পর সভরিন কাউন্সিল (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করে আসছে। যে কাউন্সিলের মূলে রয়েছেন সামরিক জেনারেলরা।
Leave a Reply