নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক এডামস অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। যেমন তার ভালোবাসা তার নিজ ধর্মে, তেমনই অন্য ধর্মের প্রতিও তার গভীর শ্রদ্ধা। রোজার আগে সিটি হলে তিনি মুসলিম সংবাদকর্মীদের সাথে রাউন্ডটেবিলে বসে জানিয়েছিলেন, তিনি রমাদানে পাঁচ বরোতেই বিভিন্ন মসজিদে যাবেন, মুসল্লিদের সাথে ইফতারে যোগ দেবেন। শুধু মসজিদে নয়, তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজিত ইফতার পার্টিতেও যোগ দেবেন। মেয়র এই ইফতার পার্টিতে যোগ দেয়া শুরু করলেন বাংলাদেশীদের আয়োজিত ইফতার পার্টি দিয়ে। গত ১ এপ্রিল ব্রংক্সের বাংলাদেশী মুসলিম কম্যুনিটি আয়োজিত ইফতার পার্টিতে গিয়ে নিউইয়র্ক সিটির মুসলিম কম্যুনিটিকে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠার আহবান জানালেন, ‘আপনারা ভোটার রেজিস্ট্রেশন করে ভোটার হন। ভোট দিয়ে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করুন।’ তিনি ব্রংক্সের বাংলাদেশী পরিচালিত ৫টি মসজিদকে সম্মাননা প্রদান করেন। পরের দিন রবিবার তিনি গেলেন আরো একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের ইফতার পার্টিতে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল টিবিএন টুয়েন্টি ফোর আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ দেন ফ্লাশিং মেডো পার্কের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনায়। মেরুন জ্যাকেট পরিহিত মেয়রকে একগুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানায় টিবিএন কর্তৃপক্ষ। মেয়রকে এই অনুষ্ঠানে অত্যন্ত উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। টিবিএন টুয়েন্টি ফোরের আয়োজনে যোগ দেন সিনেট মেজোরিটি লিডার চাক শুমার। তিনি বাংলাদেশী ইফতার টেস্ট করেন। তাঁর মাথায় টুপি পরিয়ে দেন কুইন্স কাউন্টি ডেমোক্রেটিক লিডার এট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী। সিনেটর চাক শুমার টুপিটি সাথে নিয়ে যান বলে জানান এটর্নি চৌধুরী। মেয়র সোমবার যান স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে আরব কম্যুনিটির ইফতার পার্টিতে। অফিসে ডেতে সেখানে তিনি যান ডার্ক বøু স্যুট এবং স্ট্রাইপড টাই পরে। মসজিদের অভ্যন্তরে মুসল্লীরা ফ্লোরে বসে ইফতার করেন। মেয়র এডামসকেও তারা ফ্লোরে বসান। মেয়র হাসিমুখে ফ্লোরে বসে চিকেন খান। তার চেহারা দেখে বোঝা যায়নি তিনি বিরক্ত বা বিব্রত হয়েছেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সিটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদালতে এ্যারেইনমেন্টের কারণে অন্য অনেক কর্মসূচী ব্যাহত হয়। মেয়র এডামস এদিন ইফতারের পরিবর্তে ব্রæকলীনের একটি মসজিদে মুসল্লিদের সাথে যোগ দেন তারাবীহর নামাজের আগে। সেখানে অবশ্য মেয়রকে ডাইনিং টেবিলে ডিনার সার্ভ করা হয়। বুধবার জ্যামাইকা এভেন্যুতে পুলিশকে লক্ষ্য করে এক দুর্বৃত্ত গুলি ছুঁড়লে, সন্ধ্যায় মেয়রের অন্যান্য কর্মসূচী বাতিল হয়ে যায়। মেয়র বুধবার কোথাও যাননি।
মেয়র অফিসের প্রেস ডিপার্টমেন্ট থেকে জানা গেছে মেয়র রোজার মাসের বাকি দিনগুলিতে পাঁচ বরোর বিভিন্ন মসজিদে যাবেন এবং মুসলিম কম্যুনিটির সাথে কথা বলবেন। শুধু মুসলিম কম্যুনিটিই নয়, শুক্রবার গুড ফ্রাইডে এবং রবিবার ইস্টার সানডেতে মেয়র খৃস্টধর্মাবলম্বীদের চার্চে যাওয়ার কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি পাসওভাওে জুইশ কম্যুনিটির অনুষ্ঠানে যান।
উল্লেখ্য, এ বছর মেয়র বাংলাদেশ কম্যুনিটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তার সরকারী বাসভবন গ্রেসি ম্যানসনে বাংলাদেশ হেরিটেজ মান্থ উদযাপন করেন ২১ মার্চ মঙ্গলবার। আর এর প্রায় এক সপ্তাহ পরই ৩০ মার্চ ম্যানহ্যাটানের সাউথ এন্ডে বাউলিং গ্রিনে নিজে হাতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট ও কূটনীতিকদের নিয়ে। সেখানে আমেরিকার পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশী পতাকা ওড়ে দুইদিন।
ব্রংক্স বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটি
ইউএসএনিউজঃ নিউইয়র্কে এবারের রমজানে বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়োজিত ব্রংক্সে প্রথম ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন সিটি মেয়র এরিক এডামস। ব্রংক্স বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটি এ ইন্টারফেইথ ইফতারের আয়োজন করে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস ইফতার অনুষ্ঠানে মুসলিম আমেরিকানদের ভোটার রেজিস্ট্রেশন করার আহবান জানিয়ে বলেন, যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তখন নিজেরাই নিজেদের শক্তিশালী করতে পারবেন। এতে মুসলিম কমিউনিটি শক্তিশালী হবে। মেয়র এরিক এডামস বলেন, এমন নেতা নির্বাচন করবেন যারা আপনাদের জন্য কথা বলবেন। আপনাদের হয়ে কাজ করবেন। মেয়র ১ এপ্রিল শনিবার ব্রংক্সের পিএস ১০৬ স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন ডিটেকটিভ মাসুদ রহমান। তত্ত¡াবধানে ছিলেন কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এ ইসলাম মামুন, এমডি আলাউদ্দিন, এমবি তুষার, ইব্রাহীম বার ভুঁইয়া প্রমুখ। স্পন্সরদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল চৌধুরী জাকি, মোহাম্মদ এন মজুমদার, ডা. আতাউল চৌধুরী তুষার, মো. খলিলুর রহমান (খলিল বিরিয়ানী), রোকন হাকিম, বখতিয়ার রহমান খোকন (নিরব), বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশন, আল আকসা সুপারমার্কেট ও রেস্টুরেন্ট এবং মুসলিম হিউম্যানিট।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি লিডার আব্দুল চৌধুরী জাকি। অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মেয়র অফিসের প্রধান এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মীর হাসান, মেয়র অফিসের ইমিগ্রেশন এফেয়ার্স কমিশনার ম্যানুয়েল কাস্ত্রো, ব্রংক্স কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ এন মজুমদার, আব্দুস শহীদ, আব্দুর রহিম বাদশা, মাহবুবুল আলম, আব্দুল হাসিম হাসনু, জুনেদ চৌধুরী, শামীম মিয়া, সামাদ মিয়া জাকারিয়া, মনজুর চৌধুরী জগলু, ইমরান রন শাহ, কাজি রবিউজ্জামান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মেহেরুন মুনাওয়ার। রমজানের তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ইসলামিক স্কলার ড. হামুদ আল সিলিউই ও ড. জাকির আহমেদ। দোয়া পরিচালনা করেন ড. জাকির আহমেদ।
মেয়র এরিক এডামস বলেন, রমজান মাসে সিটির ৫টি বরোতেই ইফতার পার্টিতে অংশ নেব। প্রথম অংশ নিলাম ব্রংক্সে বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে। তিনি ভোটার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য স্থানীয় মসজিদগুলোর প্রতিও আহবান জানান। এসময় মেয়র ব্রংক্সে বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত স্থানীয় ৫টি মসজিদকে সম্মাননা প্রদান করেন। মসজিদগুলো হচ্ছে পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, বাংলাবাজার জামে মসজিদ, পার্কচেস্টার ইসলামিক সেন্টার, নর্থ ব্রংক্স মসজিদ ও বায়তুল আমান ইসলামিক সেন্টার।
পিএস ১০৬ স্কুলটির হলরুমে বিভিন্ন কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ প্রায় ৬ শত বাংলাদেশী ইফতারে অংশ নেন বলে আয়োজকরা জানান।
টিবিএন টুয়েন্টি ফোর
নিউইয়র্কঃ নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অ্যামেরিকানদের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় অসামান্য ভ‚মিকা রাখায় ‘ট্রু ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশী অ্যামেরিকান’ সম্মাননা পেলেন নিউইয়র্কের শীর্ষ দুই রাজনীতিবিদ সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শুমার এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস। নিউইয়র্কের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল টিবিএন টোয়েন্টি ফোর এই সম্মাননা দেয়।
গত ২ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনায় টিবিএন টোয়েন্টি ফোর আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী আহমেদুল বারোভ‚ঁইয়া সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন মেয়র ও সিনেটরের হাতে। এ সময় সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শুমার এবং মেয়র এরিক এডামস ছাড়াও যোগ দেন এসেম্বলি মেম্বার, স্টেট সিনেটর, কাউন্সিলমেম্বারসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তারা সবাই বাংলাদেশী কমিউনিটির ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। নিউইয়র্কের প্রবীণ রাজনীতিবিদ চাক শুমার বলেন, বাংলাদেশী অ্যামেরিকানরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিউইয়র্কে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলেছ। মেয়র এডামস বলেন, টিবিএন টোয়েন্টি ফোরের মতো গণমাধ্যমকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশীরা আরো সংঘবদ্ধ হতে পারে এবং নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাদের প্রয়োজনে যেকোন ধরনের সহায়তা করারও আশ^াস দেন মেয়র।
টিবিএন টোয়েন্টি ফোর আমেরিকার মূলধারার রাজনীতি, অর্থনীতি সহ সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করছে। গণমাধ্যমটির লক্ষ্য কমিউনিটিকে রাজনৈতিক শক্তিতে বলিয়ান করা। বাংলাদেশীদের এই অগ্রযাত্রায় যে রাজনীতিবিদরা ভূমিকা রাখছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সিনেটর চাক শুমার এবং সিটি মেয়র এরিক এডামস।
Leave a Reply