1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

নিবন্ধিত তালিকা থেকে ৪ হাজার হজযাত্রী উধাও

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩

বিভিন্ন এজেন্সির নিবন্ধিত তালিকা থেকে চার হাজারের বেশি হজযাত্রী উধাও হয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেক হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধনের টাকা এজেন্সিকে পরিশোধ না করেই ফোর্স ট্রান্সফার নিয়ে গেছেন।

অনেক আগে প্রাক-নিবন্ধন করলেও এখন মোট হজযাত্রীদের হিসেবে গড়মিল পাচ্ছেন অনেক এজেন্সি মালিক। গত এক মাসে নিয়মিত ও ফোর্স ট্রন্সফারের মাধ্যমে অনেক হজযাত্রী এক এজেন্সি থেকে অন্য এজেন্সিতে বদল হয়েছেন। তবে প্রাক-নিবন্ধনের এজেন্সিকে না জানিয়ে অন্য এজেন্সিতে হজযাত্রী ট্রান্সফার হওয়ায় এজেন্সিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ ও তিক্ততাও বেড়েছে। এ বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়েও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। মন্ত্রণালয় অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সেগুলোর শুনানি করে পর্যায়ক্রমে সমাধানও করছে।

এদিকে হজ এজেন্সিগুলো বলছে, ফোর্স ট্রান্সফারের অধিকাংশ হজযাত্রী প্রাক নিবন্ধনের অর্থ পরিশোধ না করেই মন্ত্রণালয়ের কারো কারো সাথে অসৎ পন্থা অবলম্বন করে অন্য এজেন্সিতে চলে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী দুই পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি করে দেনা-পাওয়া পরিশোধ সাপেক্ষে এক এজেন্সি থেকে অন্য এজেন্সিতে হজযাত্রী ট্রান্সফার করা যাবে। কিন্তু এখানে ঘটেছে উল্টা ঘটনা। মূল এজেন্সিকে না জানিয়ে গ্রুপ লিডার তার স্বার্থমতো অধিক মুনাফার আশায় হজযাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য এজেন্সিতে। ফলে মূল এসেন্সি নিয়মমতো ক্ষতিপূরণ হিসেবে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত হাজী প্রতি দুই হাজার টাকা গচ্ছা দিয়েছেন। একই সাথে অনেক এজেন্সি এখন পর্যন্ত হজ যাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সমুদয় টাকাও হাতে পাননি। ফলে একদিকে এই এজেন্সিগুলো হজযাত্রী হারাচ্ছেন। অপরদিকে নিবন্ধন ও ক্ষতিপূরণের টাকাও পাচ্ছেন না।

শনিবার বেশ কিছু হজ এজেন্সি মালিক এই প্রতিবেদককে জানান, হজযাত্রী ট্রান্সফার (এক এজেন্সি থেকে অন্য এজেন্সিতে বদলি) একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। কিন্তু এ বছর ফোর্স ট্রান্সফারের মাধ্যমে নিয়ম-নীতির কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করেই এই কাজটি করা হচ্ছে।

অনেক হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধনের সময় টাকা পরিশোধ করেননি। কথা ছিল চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় পুরো টাকা সমন্বয় করা হবে। কিন্তু এখন আমাদের সাথে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা না করে এবং পাওনা টাকা পরিশোধ না করেই অন্য এজেন্সিতে ট্রান্সফার নিয়ে নিচ্ছেন। আর এই কাজটি করা হচ্ছে হজের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে।

ফাহিয়া ট্যুরস (হজ লাইসেন্স নম্বর ৯৪৭) এর স্বত্ত্বাধিকারী রিয়াজ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানান, আমার এজেন্সি থেকে পঞ্চাশের অধিক হজযাত্রী উধাও হয়ে গেছে। দু’দিন আগেও এই হজযাত্রীরা আমার তালিকায় নিবন্ধিত ছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই ৫০/৫৫ জন হজযাত্রী অন্য এজেন্সিতে ট্রান্সফার হয়ে গেছেন। তারা কেন কিভাবে ট্রান্সফার হয়ে গেছে, আমি কিছুই জানি না। এই হজযাত্রীদের অনেকের কাছে আমার প্রাক-নিবন্ধনের টাকাও পাওনা রয়েছে। এই ট্রান্সফার নিয়মের বরখেলাপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই এজেন্সি মালিক আরো জানান, আমি অনেক হজযাত্রীর প্রাক নিবন্ধন ২০১৯-২০২০ সালে করে রেখেছি। কিন্তু এখন তারা আমার সাথে যোগাযোগ না করেই গ্রুপ লিডারের প্রলোভনে অন্য এসেন্সিতে চলে গেছেন। আমি এর প্রতিকার চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এর প্রতিকার চাইব।

কাজী এয়ার এন্টারন্যাশনাল (হজ লাইসেন্স নম্বর ০০৭৮) এর মালিক কাজী মফিজুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, হজযাত্রী যেভাবে ট্রান্সফার হয়েছে, এটা কোনো নিয়মের মধ্যেই পড়ে না। আমার মাধ্যমে নিবন্ধত হজযাত্রী আমাকে না জানিয়ে অন্য এজেন্সি নিয়ে যায় কিভাবে? আমি তো অনেকের কাছে এখনো টাকাও পাওনা আছি। ইতোমধ্যে আমরা এমন বিক্ষুব্ধ অনেক এজেন্সি মালিক লিখিত অভিযোগ মন্ত্রণালয় এবং হাব সভাপতি বরাবরও দাখিল করেছি। সেগুলো শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছি।

হামীম ট্রাভেন্স অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক সালেহ আহমেদ জানান, আমি এখন সৌদি আরবে আছি। আমার এজেন্সি থেকেও বেশ কিছু হজযাত্রী আমাদের অগোচরেই অন্য এজেন্সিতে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। এটা কিভাবে হলো, আমি নিজেও জানি না। দেশে এসে আমি এর প্রতিকার চাইব।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হজযাত্রী ফোর্স ট্রান্সফার হয়েছেন। কিন্তু মূল এজেন্সি মালিককে জানাননি বা এজেন্সির ক্ষতিপূরণের দুই হাজার টাকা এবং প্রাক-নিবন্ধনের টাকাও পরিশোধ করেননি এমন হজযাত্রীর সংখ্যা চার হাজারের অধিক। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, নিয়মিত ট্রান্সফারের অংশ হিসেবেই অনেক হজযাত্রী ট্রান্সফার বা অন্য এজেন্সিতে চলে যেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। আমরা দুই পক্ষকে ডেকে শুনানির মাধ্যমেই ট্রান্সফারের অনুমোদন দেই।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে নিয়মবহির্ভূতভাবে হজযাত্রী ফোর্স ট্রান্সফারের বিষয়ে হাব এবং মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বিভিন্ন এজেন্সি মালিকরা।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে জানান, হজযত্রী ট্রান্সফার বা ফোর্স ট্রান্সফার বিষয়ে কিছু নিয়ম এবং নীতি র্ধম মন্ত্রণালয়ই বেঁধে দিয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ কারো নেই। তারপরও কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেগুলোর কিছু আমরা হাব থেকে সমাধানও করে দিয়েছি। তবে কিছু সমস্যার সমধান আমরা করতে পারিনি। সেগুলো কিছুটা জটিল। তাই সেগুলো আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি দেখবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো: মতিউল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, অনেক এজেন্সি ফোর্স ট্রান্সফার বিষয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ দাখিল করে। আমরা সব বিষয় দেখে উভয় পক্ষকে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করি। তবে গত কয়েক সপ্তাহ আগে আমরা যেসব আবেদন পেয়েছি, সেগুলোর সমাধান করে দিয়েছি। এখনো যদি কেউ নির্দিষ্ট বিষয়ে আমাদের অবহিত করে, আমরা আবারো ওই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ-১) আবুল কাশেম মোহাম্মাদ শাহীন প্রতিবেদককে বলেন, ফোর্স ট্রান্সফার হয়েছে এটা ঠিক। তবে এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। ফোর্স ট্রান্সফারের সংখ্যা যেহেতু কম, তাই অভিযোগও খুব বেশি থাকে না। তারপরও সংক্ষুদ্ধ কেউ যদি প্রতিকার না পেয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আবেদন পেলে বিষয়টি দেখব।

তিনি আরো জানান, ফোর্স ট্রান্সফার অপশনটির আর সুযোগও নেই। নিবন্ধনের সময় শেষ হওয়ার পর এই সুযোগটিও অটো বন্ধ হয়ে যাবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, হজযাত্রী ট্রান্সফার একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। বেসরকারি পর্যায়ে শুধু নয়, সরকারি হজযাত্রীরাও কেউ চাইলে ট্রান্সফার হয়ে বেসরকারি পর্যায়ে হজযাত্রা করতে পারে। তবে কিছু নিয়ম-নীতি সব জায়গাতেই মানতে হবে। আর কিছু এজেন্সি মালিক যদি ফোর্স ট্রান্সফার নিয়ে আপত্তি জানায়, তাহলে তারা লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে অবশ্যই তা সমাধান করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com