পাঁচ স্তম্ভবিশিষ্ট জীবন-পদ্ধতির ঐশ্বরিক নিরাপদ আবাসগৃহের নাম ইসলাম। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা ইসলামের অন্যতম ব্যতিক্রমী এক ইবাদত; যা কল্যাণে, সওয়াবে ও বিবিধ উপকারিতায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। আজ পবিত্র রমজানের এগারোতম দিবস। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘ওয়া আউসাতুহা মাগফিরাহ’ অর্থাৎ রমজানের মধ্য দশক হচ্ছে মাগফিরাত তথা ক্ষমার। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাত এই তিন ভাগে বিভক্ত রমজানের মধ্য ভাগ মাগফিরাতের আজ প্রথম দিন। পরম রবের প্রতি আত্মসমর্পিত ও আত্মনিবেদিত বান্দাহর জন্য সর্বাগ্রগণ্য আরাধ্য ঈপ্সিত বিষয় হলো মাগফিরাত। আর মাগফিরাতের পূর্বশর্ত হলো ইবাদত এবং ‘আদ দোয়াউ মুখ্খুল ইবাদাহ’ তথা ইবাদতের সারনির্যাস হিসেবে দোয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মহিমাময় রমজান হলো সেই প্রকৃষ্ট সময়; যখন পবিত্র কোরআন-হাদিস নির্দেশিত পন্থায় পালনকৃত ইবাদতের মাধ্যমে রোজাদার বান্দারা মাগফিরাত তথা মহান প্রভুর ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার দুর্লভ সুযোগ লাভ করে থাকেন।
‘খুলিকাল ইনসানা যায়িফাহ’ আল্লাহপাকের এ ঘোষণা অনুযায়ী মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দুর্বল প্রজাতির মানুষের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হলো অপরাধ করা, পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়া; আর সেটি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, ছোট কিংবা বড় গুনাহর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। অন্যদিকে মহান স্রষ্টার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো বান্দাকে ক্ষমা করা, মাফ করে দেওয়া। তবে এজন্য বান্দা নিজেকে অনুশোচনায় আচ্ছন্ন করতে হয়, তওবার শর্তাদি পরিপালনের মাধ্যমে পরম রবের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বীয় মস্তক অবনত করে দিতে হয়। কৃত অপরাধের বিষয়ে লজ্জিত হওয়া, যাবতীয় পাপাচারের জন্য ক্ষমা-প্রার্থনা করা আর ভবিষ্যতে কখনো পাপাচারে লিপ্ত না হওয়ার দীপ্ত অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়াই তওবা কবুলের পূর্বশর্ত। এ প্রক্রিয়ায় সম্পন্নকৃত তওবার মাধ্যমে বান্দাকে নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ ঘোষণা করা হয়; ‘আত্তায়িবু মিনায্যানবি কামাল্লা যান্বা লাহু’ অর্থাৎ পাপাচার থেকে তওবাকারী মানুষ এমন হয়ে যায় যে, সে আর কোনো পাপই করেনি। পবিত্র রমজানে রোজাদার বান্দাকে সিয়াম সাধনার এ অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত ঘনিষ্ঠতার দিক থেকে মহান আল্লাহর অতীব নিকটবর্তী করে দেয়; যেই সুযোগে বান্দা কায়মনোবাক্যে সম্পন্ন ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরম সত্তার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের নেয়ামত লাভে ধন্য হতে পারে। রমজানের চলমান এই মধ্য দশক হচ্ছে সেই উপযুক্ত সময় যখন মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের ক্ষমা করার অসিলা খুঁজেন।
পরিশেষে ‘উদউনি আস্তাজিবলাকুম’ অর্থাৎ তোমরা আমায় ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে আমাদের বিনীত প্রার্থনা ‘আল্লাহম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন সাইয়িইল আসকাম’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! সর্বপ্রকার ব্যাধি থেকে আমরা তোমার কাছে পরিত্রাণ চাই। একই সঙ্গে রোজাদার হিসেবে আমরা হৃদয়ের বিশালতা আর মহানুভবতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বলব ‘আস্তাগফিরুল্লাহালি ওয়ালাকুম ওয়ালি সায়িরিল মুসলিমিনা ফাস্তাগফিরুহু ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমায় ক্ষমা করো, আমাদের সবাইকে মাফ করো, সব মুসলমানের ইস্তেগফার কবুল করে নাও; নিশ্চিতভাবেই তুমি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন : লেখক ও গবেষক; অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply