যাপিতজীবন এবং জীবিকার সন্ধানে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানাভাবে ব্যস্ত থাকতে হয়, নানা ধরনের কাজের মাঝে বিভিন্নভাবে নড়াচড়া করতে হয়। দিন ও রাতে বহুবার বিভিন্নভাবে দেহভঙ্গি পরিবর্তন করতে হয়। এগুলো আমাদের মেরুদণ্ডে নানা মাত্রার চাপ তৈরি করে থাকে। চাপ নিতে ভুল হওয়ার কারণে অনেক সময় আমরা ব্যাক পেইনে (পিঠ বা কোমর ব্যথা) ভুগে থাকি।
মেরুদণ্ড মূলত বিভিন্ন ধরনের কশেরুকা, মাংসপেশি, লিগামেন্ট ও কশেরুকার মধ্যবর্তী নরম জেলির মতো পদার্থ বা ডিস্কের সমন্বয়ে গঠিত। দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার দুপাশ দিয়ে বের হয়ে থাকে শরীর নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলো। এগুলোর কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরুদণ্ড তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কশেরুকা, মাংসপেশি, লিগামেন্ট, ও ডিস্কের সজীবতা রক্ষা করতেও প্রয়োজন সঠিক রক্ত চলাচল ব্যবস্থা। কোনো কারণে ডিস্কের ওপর চাপ পড়লে সেটি পরে স্নায়ুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে। তখন তীব্র ব্যথা হয়। যেহেতু কশেরুকা একটি হাড়, তাই এটির সঠিক গঠন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এগুলোর অভাবেও কশেরুক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ভঙ্গুর হয়, যা ঘটে থাকে সাধারণত অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে। অস্টিওপোরোসিস থাকা মানে রক্তে ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কম থাকা। এছাড়াও অস্বাভাবিক নড়াচড়া বা মুভমেন্টের কারণে লিগামেন্টস ও মাংস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঠাৎ করে বেশি ভার বহন করলেও মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চাপ কমানোর উপায় : যদি কোনো বস্তু অনেক ভারী হয়, তবে তা তুলতে আরও এক-দুজনের সাহায্য নেবেন। এতে ওজনটা ভাগ হয়ে যাবে। কোনো বস্তু তোলার সময় পা দুটি যথেষ্ট ফাঁকা করে নেবেন, এতে সাপোর্ট বাড়ে। তুলতে যাওয়া বস্তুটির যথাসম্ভব কাছাকাছি যাবেন। বসে বা দাঁড়িয়ে যেভাবেই হোক, দূরের কোনো বস্তু তুলতে যাবেন না। আমরা অনেক সময় তা-ই করে থাকি। যেমন অফিসে হাত থেকে কলম বা কাগজ পড়ে গেল, বসে থেকেই শরীর বাঁকিয়ে দূর থেকে তোলার চেষ্টা করি। তা না করে উঠে গিয়ে কাছাকাছি গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তুলুন। কোনো কিছু তোলার সময় হাঁটু ভাঁজ করবেন, পিঠ নয়। বস্তু তোলার সময় পেটের পেশি শক্ত করে নেবেন। যখন জিনিসটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াবেন, তখন মেরুদণ্ড বা পিঠ বাঁকা করবেন না, সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবেন। তোলা বা বহন করার সময় মেরুদণ্ড টুইস্ট করে (কোমর থেকে ওপরের অংশ মোচড় দেওয়া) এদিক-ওদিক তাকাবেন না।
আর যদি মেরুদণ্ডে কোনো না কোনো কারণে সমস্যা তৈরি হয়, প্রচণ্ড ব্যথা করে, তা হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান; ডিপার্টমেন্ট অব ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড রি-হ্যাবিলিটেশন
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, উত্তরা, ঢাকা
চেম্বার : বাংলাদেশ পেইন, ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, মালিবাগ মোড়, ঢাকা
Leave a Reply