নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না। একমাত্র মানুষ কে কার অপেক্ষা কত বেশি উন্নত এবং অগ্রসর হবে এই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। তার উন্নত জীবসত্তাই উন্নততর জীবনযাপনে পরিচালিত করে। হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে মানুষ এখন আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অভ্যস্ত ডিজিটাল মেকানিজম নিয়ে। মানুষের গতিশীল চিন্তা ও পদক্ষেপ যুগে যুগে সভ্যতার ইতিহাস বদলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে ধ্যান-ধারণা। বর্তমান নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন আধুনিক সভ্যতার একরকম সংজ্ঞাই বলা যেতে পারে। পৃথিবীর সব দেশেই জীবন এখন নগরকেন্দ্রিক। বিশেষ করে উন্নয়নশীল, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা মধ্যম আয়ের দেশের জনসাধারণের মধ্যে শহরে ছোটার প্রবণতা বেশি। জীবনযাপনে এসব দেশে শহর এবং গ্রামের তফাত অনেক। এমন বাস্তবতা আমাদের দেশে একটু বেশিই প্রবল। রাজধানীসহ অন্যান্য বড় শহরের থেকে দূরবর্তী জনপদের জীবনযাপন, কর্মসংস্থান ও আর্থিক সঙ্গতির ব্যবধান দুই মেরুর মতো। তাই তো এক রকম বাধ্য হয়েই অনেকে ছাড়তে হয় নিজের বাড়ি, আপন মানুষ। বেছে নিতে হচ্ছে শক্ত শহুরে জীবন। নগর জীবন সভ্যতার আশীর্বাদ হলেও বিড়ম্বনার শেষ নেই! বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। ঢাকা আমাদের রাজধানী শহর। প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষ এই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে আর কর্মজীবী মানুষ তো হিসাবের অন্তর্ভুক্ত কি না তার সঠিক তথ্য জানা অনেক কঠিন। প্রতিদিনই বাড়ছে ‘জনসংখ্যা’ নামের এই সংখ্যা। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। জনসংখ্যার বিবেচনায় ১৬ কোটির বেশি মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। জীবনযাপনে অন্য যেকোনো সমস্যা নিয়ে মানুষকে ছুটতে দিগি¦দিক প্রয়োজন যাতায়াতের জন্য যানবাহন। এ যানবাহন ভাড়া বিড়ম্বনা সব থেকে প্রকট। এই সমস্যা শুধু শহরে নয়, দেশজুড়ে। বলছি, নোয়াখালী টু ঢাকা বাস ভাড়া নিয়ে কিলোমিটার হিসাবে নোয়াখালী টু ঢাকার ভাড়া অনেকটাই বেশি। আমি নিম্নে কয়েকটি জেলার কিলোমিটারের আলোকে ভাড়া উল্লেখ করলাম-
জেলার নাম কিলোমিটার ভাড়া
রংপুর…. ৪৪৪ কিমি. ৭০০/-
কুড়িগ্রাম…. ৩৫০ কিমি. ৮০০/-
কক্সবাজার…. ৩৮৮ কিমি. ৯০০/-
রাঙ্গামাটি…. ৩১৪ কিমি. ৭৫০/-
ভোলা…. ২৮৫ কিমি. ৫০০/-
খুলনা…. ২৭১ কিমি. ৫০০/-
বরিশাল…. ২৪৯ কিমি. ৫৫০/-
সিলেট…. ২৪৩ কিমি. ৫৫০/-
নোয়াখালী…. ১৯০ কিমি. ৫০০/-
লক্ষ্মীপুর…. ১৩৫ কিমি. ৫০০/-
রামগঞ্জ…. ১২৭ কিমি. ৫০০/-
আমি মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করলাম। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, মানুষকে ধোঁকা দেয়া অনেক কঠিন। মানুষ কেন জানি, বোকা সেজে আছে তাও বুঝা সহজ নয়। নেটে চার্জ দিলেই দেশের প্রতিটি জেলার ঢাকার দূরত্ব কত কিলোমিটার এবং ভাড়া কত, অনায়াসে দেখা যাবে। শিক্ষিত এবং সচেতন নাগরিক একটু চিন্তা করে বলুন, পার কিলো খরচ কত আর আমার আপনার পকেট কেটে নিচ্ছে কত? আজ আমরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। একজন করলে ১০ জন চুপ। একটু প্রতিবাদী হলেই মা-বাবাকে গাল মন্দ না হয় উত্তম মধ্যম।
মোট জনসংখ্যার কত মানুষের আছে নিজস্ব যানবাহন, বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাস ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে কি শহরে যেতে হয়। বর্তমান যাতায়াত ভাড়া কর্মজীবী মানুষের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তাই তো দিন দিন প্রহসনের ভাড়া বিড়ম্বনা মাত্রা বেড়েই চলছে। ব্যাচেলর, চাকরিজীবী, ছাত্রছাত্রী, রিকশাচালক, খেটে খাওয়া মজুর এবং ছাপোষা পরিবার নিয়ে থাকা চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী সবাইকেই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক মূল্য দিতে হচ্ছে বাস ভাড়ার নামে। মৌল-মানবিক চাহিদার অন্য দিক পূরণ হোক বা না হোক বাসস্থানের জন্য কিছু কিছু চাহিদা শিথিল রাখতে হয়! বাস মালিক সমিতির ভাড়া নির্ধারণ, অহেতুক ভাড়া বৃদ্ধি, একরকম মনের খেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ বলেই ফেলছে, এটা সত্যিই অমানবিক। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সরকার, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। মালিক সমিতির আসনে বসে থাকা রাজনৈতিক রাঘব-বোয়ালরা ইচ্ছামতো ভাড়া ধার্য করেন এবং নিয়মিত তা আদায়ও করেন। জনসাধারণকে স্বল্পব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত সড়ক নির্ভর বাসভিত্তিক গণপরিবহন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাস র্যাপিড ট্রানজিট ব্যবস্থার অবকাঠামো নির্মাণ, পরিচালনা, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন ২০১৬। আইনের সাথে সময়ের ব্যবধান কয় বছরের বেশি। স্বাভাবিকভাবেই ওই আইন এখন সময়োপযোগী না। অবশ্য আইনের কথা উল্লেখ করে বা কী লাভ? যা আছে, তার বা প্রয়োগ কোথায়? জীবনধারণের পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে, উদীয়মান তরুণ থেকে শিক্ষিত বেকার যুবক, সবাই বাধ্য হচ্ছে মা-মাটির কোল ছাড়তে। আর এই সঙ্কটের সুযোগ নিচ্ছেন বাস মালিক সমিতি। আর্থিক ও সামাজিকভাবে শক্তপক্ষ হলো মালিক সমিতি। সংখ্যায় তারা কম হলেও তাদের প্রভাব এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা সব মিলে প্রহসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে। আসুন, আমরা সচেতন হই, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি।
Leave a Reply