ভারতের রাজধানীতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর স্বাস্থ্য ছাড়পত্র নিয়ে শনিবার দেশে ফিরবেন ২৩ বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় শনিবার বিকালে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে নয়াদিল্লি ছাড়বেন তারা।
বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ও এক শিশুসহ একটি পরিবারের ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।
২৩ সদস্যের ওই দলে থাকা এক শিক্ষার্থী ফোনে বলেন, ‘আমরা শুক্রবার স্বাস্থ্য ছাড়পত্র পাবো এবং শনিবার ঢাকায় ফিরতে পারবো বলে আশা করছি।’
ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনকে তিনি জানান, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকের সাথে করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে নিজেদের ৩১২ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ সরকার ও বাকি বাংলাদেশিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে নিবন্ধন করা হয়।
আটটি পরিবার এবং পাঁচ শিশুসহ ৭৬ ভারতীয় নাগরিক এবং অন্যান্য দেশের ৩৬ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনার পর প্রথমে বিমানবন্দরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরে তাদেরকে প্রাথমিক সকল সুবিধা সরবরাহ করা হয়।
বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ২৩ জন বাংলাদেশের, ছয়জন চীনের, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের দু’জন করে এবং মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের একজন করে নাগরিক ছিলেন।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি উহান থেকে প্রথম দলকে ফিরিয়ে আনার ৪৮ ঘণ্টা আগে নয়াদিল্লির ছাওলাতে কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প প্রস্তুত করেছিল আইটিবিপি।
বাংলাদেশি নাগরিকদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির ঢাকাস্থ হাইকমিশন।
অপর এক শিক্ষার্থী ইউএনবিকে বলেন, ‘ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং ভারত সরকার যে অভূতপূর্ব কাজ করেছে সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’
দলের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকায় সবার জন্যই বেদনাদায়ক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বেইজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাস স্বত:স্ফূর্তভাবে সাহায্য করে ও তাদেরকে সরিয়ে নিতে সম্মতি জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী চীনের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমাদের সুরক্ষিত রাখতে এবং আমাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের প্রচেষ্টা নি:স্বার্থ ছিল। নিজেদের নাগরিকদের মতো বিদেশি নাগরিকদেরকেও তারা দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীলতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমরা সবসময় আপনাদের এই সহায়তা মনে রাখব।’
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং স্থানীয় আরো তিনটি বিমান সংস্থা নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ভারতে তাদের সকল ফ্লাইট স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের শনিবার সুষ্ঠুভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশে ফেরত আসার জন্য অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষার্থী।
১২ মার্চ বা তার আগে ভারতীয় হাই কমিশন বা ভারতের সহকারী হাই কমিশন দ্বারা প্রদত্ত সকল বৈধ ভিসা ১৩ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন জানায়, ১৩ মার্চ থেকে নতুন কোনো ভিসা দেয়া হবে না।
নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির সরকার।
কূটনীতিক, কর্মকর্তা, ইউএন/আন্তর্জাতিক সংস্থা, কর্মসংস্থান এবং প্রকল্প ভিসা ছাড়া বিদ্যমান অন্য সকল ভিসা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছে ভারত।
১৩ মার্চ থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো।
বিশ্বের ১১৮টি দেশের কমপক্ষে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
গত দু’সপ্তাহে চীনের বাইরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ এবং তিন গুণ বেড়েছে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের সংখ্যা।
সূত্র : ইউএনবি।
Leave a Reply