স্বজনের আহাজারি আর প্রবাসীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যদিয়ে চিরবিদায় জানানো হলো পুুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি সৈয়দ ফয়সাল আরিফকে (২০)। ৭ জানুয়ারি বাদ জোহর বস্টনের রক্সবিউরি মসজিদে জানাযা শেষে আরিফের মরদেহ দাফন করা হয় ৬৭০ রক্সবিউরিটিতে অবস্থিত গোরস্থানে।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসেচুসেটস’র বস্টন ক্যাম্পাসের নবীন ছাত্র আরিফ গত ৪ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে ক্যামব্রিজ সিটিতে নিজ বাসার সন্নিকটে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। পুলিশ দাবি করেছে, আরিফ খালি গায়ে একটি ছুরি হাতে ছিলেন এবং নিজেকে জখমের চেষ্টা করছিলেন। এ অবস্থায় হটলাইনে ফোন পেয়ে ডজনখানেক পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে নিবৃত করা চেষ্টা করলে আরিফ সাড়া না দিয়ে দৌঁড়ে পালাতে থাকেন।
পুলিশ আরো জানায়, টেস্টনাট স্ট্রিট ধরে দৌড়ানোর এক পর্যায়ে হঠাৎ উল্টো পুলিশের দিকে ছুরি উচিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায় পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয় বলে মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী ম্যারিয়েন রায়ান গণমাধ্যমকে জানান। তদন্ত কর্মকর্তা এবং ডিস্ট্রিক্ট এটর্নীর এমন দাবি নাকচ করে দিয়ে ঐ এলাকার এক বাসিন্দা গণমাধ্যমে বলেছেন, আরিফকে গুলি করার সময় তার হাতে তিনি কিছুই দেখেননি। এছাড়া, পুলিশের বিতরণকৃত ভিডিও ফুটেজেও আরিফের হাতে কিছু দেখা যায়নি এবং তার বাম হাতে একটি বই ছিল। এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের পরদিন দুপুরে ক্যাম্ব্রিজ সিটি হলের সামনে ক্ষুব্ধ প্রবাসী এবং আরিফের সহপাঠিরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা ন্যায় বিচার প্রার্থনার পাশাপাশি এমন বর্নবিদ্বেষমূলক হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে ক্যাম্ব্রিজ সিটির মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী বিদেশ সফররত অবস্থায়ই কম্যুনিটিকে জানিয়েছেন যে, সরেজমিনে বিস্তারিত তদন্ত চলছে। তিনি বস্টনে ফিরে সোমবার (৯ জানুয়ারি) অপরাহ্ন ৪টায় (বাংলাাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ৩টায়) আরিফের স্বজন ও কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হবেন। সে অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।
এদিকে, জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, দুপুরে কলেজে যাবার জন্য আরিফ বাসা থেকে বের হয়েছেন। পুলিশের দাবি অনুযায়ী জানালা পথে বের হবার প্রশ্নই উঠে না। আরিফ খালি গায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার যে বিবরণ প্রচার করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে সেটিও বস্তুনিষ্ঠ নয়। হয়তো পুলিশ অথবা অন্য কেউ তাকে আক্রমণ করেছিল, যখন আরিফ শার্টহীন হয়ে পড়েছিলেন এবং সে কারণেই পুলিশের আহবানে সাড়া না দিয়ে দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সবটাই জানা সম্ভব হবে যদি নিরপেক্ষ তদন্ত চালানো হয়।
আরিফের বুকে ৫টি গুলিবিদ্ধ হয় এবং সেই গুলি ছোঁড়া শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মোহাম্মদ মুজিবউল্লাহ’র একমাত্র সন্তান আরিফ ৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। জানাযার প্রাক্কালে আরিফের মা-বাবা, দাদি এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরা কফিনে হাত বুলিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিউ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি আমেরিকান ফেডারেশনের কম্যুনিকেশন্স এ্যান্ড কালচারাল ডাইরেক্টর তাহেরা আহমেদ মিতু উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। আরিফের মতো আর কোন বাঙালির প্রাণ যাতে না ঝরে সেজন্যেই সোচ্চার হতে হবে, প্রতিবাদে সরব থাকতে হবে।
Leave a Reply