বিশিষ্ট সাংবাদিক, ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাব ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অন্যতম সদস্য মাইনউদ্দিন আহমেদ (৬৯)-এর মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারী) অপরাহ্নে তার মরদেহ নিউজার্সী রাজ্যের মালবরো মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়। পারিবারিক সিদ্ধান্তেই এটি হয়েছে। এর আগের দিন সোমবার বাদ এশা ওজনপার্কের বায়তুল মামুর মসজিদ এন্ড কমিউনিটি সেন্টারে তারনামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নামাজে জানাজায় নিউইয়র্কের বাংলা ভাষার মিডিয়াগুলোর সম্পাদক ও সাংবাদিকগণ অংশ নিয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। গত ১ জানুয়ারী রোববার দিবাগত রাত ১১টা ২৯ মিনিটে জ্যামাইকা মেডিক্যাল সেন্টারে (হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মরহুমের পুত্র রিয়াজ আহমেদ নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান, বেলা আড়াইটার দিকে মালবরো মুসলিম কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় বিশেষ মুনাজাতে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। মরহুমের আতœীয়-স্বজন ছাড়াও কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদের দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অন্যতম সদস্য ও সাপ্তাহিক প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদ গত সপ্তাহে ওজনপার্কের বাসায় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি কিডনী সমস্যা সহ নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র আর দুই কন্যা সহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তিনি স্ত্রী আর এক পুত্র নিয়ে নিউইয়র্কের ওজনপার্কে বসবাস করছিলেন। তার এক পুত্র আর দুই কন্যা বাংলাদেশে বসবাস করেন।
তাঁর গ্রামের বাড়ী নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায়। মরহুম মাইন উদ্দিন আহমেদের নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ ব্রকলীনের কনিআইল্যান্ডস্থ আর রাইয়ান ফিউনেরাল হোমে রাখা হয়। বায়তুল মামুর মসজিদ এন্ড কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন এই মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মওলানা দেলোয়ার হোসাইন।
নামাজের আগে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মরহুমের ভায়রা আব্দুর রহমান ও পুত্র রিয়াজ আহমেদ। এসময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের। জানাজায় বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকসহ কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশ নেন। এতে সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর, নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইউএনএ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি তাসের খান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মমিন মজুমদার, কোষাধ্যক্ষ রশিদ আহমদ, ফটো সাংবাদিক সানাউল হক ও নিহার সিদ্দিকী প্রমুখ সাংবাদিক অংশ নেন। এছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন, লেখক ও কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, সাহিত্য একাডেমীর মোশাররফ হোসেন, সাবেক টিভি প্রযোজক ফিরোজ কবির, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট কাজি ফৌজিয়া, ড. জাহাঙ্গীর কবির, গোপাল স্যানাল, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদ-এর পুত্র রিয়াজ আহমেদ ইতিপূর্বে বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানিয়েছিলেন, আব্বা গত ২৭ মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জরুরী ভিত্তিতে জামাইকা মেডিক্যাল সেন্টারের (হাসপাতাল) জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চেকআপে তার কিডনীতে টিউমার ধরা পরে, ডাক্তাররা ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাই করছিলেন।
সার্জারির পরিকল্পনা করা হচ্ছিলো। সার্জারির পর বায়োপসির মাধ্যমে ক্যান্সার বিষয়ক সন্দেহ দূর হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসার দিক নির্ধারণ করা হবে বলে চিকিৎসকগণ জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, প্রয়োজনে অব্বাকে মানহাটানস্থ মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে স্থানান্তর করার চিন্তাভাবনা হচ্ছিলো। সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমদ তাঁর দীর্ঘ পেশাগত জীবনে ইংরেজিসাংবাদিকতায় দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঢাকার ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার, ডেইলী নিউ নেশন প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি দীর্ঘ সময় সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সর্বশেষ তাঁর কর্মস্থল ছিল ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ওই পত্রিকা থেকে তিনি একাধিকবারবিএফইউজে’র কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর প্রবীণ সদস্য, জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও চ্যানেল ২৫ লি: এর অন্যতম উপদেষ্টা। ছিলেন ইংরেজী দৈনিক ‘দ্যা এশিয়ান এজ’ পত্রিকার সহকারি সম্পাদক। নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশন-এর সংবাদ পর্যালোচনামূলক ‘প্রেস ভিউ’ অনুষ্ঠানের নিয়মিত অতিথি আলোচক ছাড়াও নিয়মিত কলাম লিখতেন সাপ্তাহিক দেশ-এ। তাঁর লেখা একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
Leave a Reply