1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন

১০ বছর আগের সিনেমায় করোনা ভাইরাস!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১১ মার্চ, ২০২০

চীন থেকে একটি ভয়াবহ এবং রহস্যময় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, এ রকম গল্প নিয়ে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি মোটামুটি সফলতা পেয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে এসে সেটি ‘হিট’ হয়ে ওঠে। কারণ চলচ্চিত্রটির গল্প আর বাস্তবতার সাথে অবিশ্বাস্য মিল দেখা গেছে।

২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র কনটেজিয়নকে কোনোভাবেই ব্লকবাস্টার বা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র বলা যাবে না।

যদিও বেশ কয়েক জন তারকাকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিল, যাদের মধ্যে রয়েছেন ম্যাট ডেমন, গিনেথ প্যালট্রো, জুডি ল, কেট উইনস্লেট এবং মাইকেল ডগলাস, তারপরেও সেটি ওই বছরের ব্যবসায়ের দিক থেকে ৬১তম হয়েছিল।

কিন্তু নয় বছর পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফিরে এসেছে ‘কনটেজিয়ন’। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল আইটিউন স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চলচ্চিত্রটি। সেই সাথে গুগল সার্চের তালিকায় শীর্ষে চলচ্চিত্রটির নাম খোঁজার প্রবণতাও বাড়ছে।

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্র তৈরি করেছে ওয়ার্নার ব্রাদারস। তারা বলেছে, চীনে যখন প্রথম করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন বিশ্বের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় এটির অবস্থান ছিল ২৭০তম।

তিন মাস পরে, কনটেজিয়নের জায়গা হয়েছে নবম অবস্থানে। তার সামনে রয়েছে শুধুমাত্র হ্যারি পটার সিরিজের আটটি চলচ্চিত্র।

এর একমাত্র কারণ হলো করোনা ভাইরাস। প্রায় এক দশক আগে তৈরি চলচ্চিত্রটির কাহিনীর সাথে বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অনেক মিল রয়েছে।

জীবনের অনুকরণে শিল্প
চলচ্চিত্রটিতে একজন নারী ব্যবসায়ী (গিনেথ প্যালট্রো অভিনয় করেছেন) একটি রহস্যময় এবং মারাত্মক ভাইরাসে মারা যান। চীনে একটি সফরের সময় তিনি ওই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত ওই ভাইরাসের ব্যাপারে কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি।

কনটেজিয়নের দর্শকরা বলছেন, বর্তমান বাস্তব জীবনের ভাইরাস সংক্রমণ যেমন চীন থেকে শুরু হয়েছিল, তেমনি চলচ্চিত্রটির এরকম কাহিনীর মিলের কারণেই সেটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

সেই আগ্রহ আরো বেড়েছে গিনেথ প্যালট্রোর একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের কারণে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার সময় বিমানে বসে তিনি মুখে মাস্ক পরা এটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ”আমি এই চলচ্চিত্রটিতে আছি। নিরাপদ থাকবেন। করমর্দন করবেন না। নিয়মিত হাত ধোবেন।”

সাদৃশ্য
কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রটির সাথে বাস্তব ঘটনাবলীর অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে।

প্যালট্রো অভিনীত চরিত্রটি এমইভি-ওয়ান নামের একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় হংকংয়ের একজন বাবুর্চির সাথে করমর্দনের মাধ্যমে, যিনি একটি শুকর জবাই করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই শুকরটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বাদুরের মাধ্যমে।

এরপর দেশে ফিরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিছুদিন পরে মারা যান। এরপরে তার ছেলেরও একই রোগে মৃত্যু হয়। কিন্তু তার স্বামী, ম্যাট ডেমনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাইরাসটি আক্রমণ করতে পারেনি।

বাস্তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, গত ডিসেম্বর মাস নাগাদ চীনের উহান শহরে পশু থেকে মানব শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করে।

এটাও ধারণা করা হয় যে, করোনা ভাইরাস বাদুরের মাধ্যমে বিস্তার ঘটেছে, যেমনটা ঘটেছিল সার্স মহামারির ক্ষেত্রে ২০০২-২০০৩ সালে। বাদুর থেকে সেটা অন্য একটি প্রাণী হয়ে মানব শরীরে আসে।

অন্য কোনো প্রাণী থেকে করোনা ভাইরাস এসেছে, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে চীনের কর্তৃপক্ষ উহান শহরের একটি পশুপাখির বাজারকে ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল বলে শনাক্ত করেছে।

যেভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, চলচ্চিত্রের কল্পিত ভাইরাসটিও একে অপরকে স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণা
কল্পিত এবং বাস্তব ভাইরাস, উভয়ের ক্ষেত্রেই ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটে। তবে চলচ্চিত্রের কল্পিত এমইভি-ওয়ান ভাইরাসের ধারণাটি এসেছিল বাস্তবের আরেকটি ভাইরাস নিপাহ থেকে, যা অবশ্য করোনা ভাইরাস গোত্রের নয়।

কল্পিত ভাইরাসের চেয়ে অবশ্য বাস্তব ভাইরাস কম প্রাণঘাতী। চলচ্চিত্রে মৃত্যুহার বলা হয় ২৫%, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ৩.৪%।

কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রে এমইভি-ওয়ানে আক্রান্ত হয়ে একমাসের মধ্যেই বিশ্বে দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে চীনে তিন মাস আগে করোনা ভাইরাসের বিস্তারের পর এখন মৃতের সংখ্যা চার হাজার পেরিয়ে গেছে।

ওই চলচ্চিত্রের সঙ্গে শুধুমাত্র তুলনা করা যায় ১৯১৮-১৯২০ সাল নাগাদ বিস্তার হওয়া স্প্যানিশ ফ্লুর সাথে যাতে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

আইসোলেশন
চলচ্চিত্রে যখন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন এপিডেমিক ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (যা বাস্তবের একটি প্রতিষ্ঠান) কর্মীরা সংক্রমিতদের শনাক্ত এবং আইসোলেশন করতে শুরু করেন।

ওই চলচ্চিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের শহর শিকাগো কোয়ারেন্টাইন করা হয়, যার সাথে চীনের এলাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলার তুলনা করা যেতে পারে।

কোভিড-১৯ বিস্তার ঠেকাতে দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেকটা একই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি।

ভীতি
কনটেজিয়নের এই ফিরে আসার ব্যাপারটি অবাক করেছে চিত্রনাট্যকার স্কট জি বার্নসকে। তবে ফরচুন ম্যাগাজিনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের মূল আইডিয়াটি ছিল এটাই তুলে ধরা যে, এ ধরণের প্রাদুর্ভাবের জন্য আধুনিক সমাজ কতটা নাজুক।

বার্নস বলেছেন, ”কনটেজিয়ন এবং করোনা ভাইরাসের মধ্যে যে মিলগুলো দেখা যাচ্ছে, সেটা কাকতালীয়, আসলে এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।”

”যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এর ফলে সমাজে কী ঘটছে, ভয় কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তার ফলে কী ঘটছে সেটা।”

তিনি হয়তো চলচ্চিত্রের বিশেষ একটি চরিত্রের কথা বোঝাতে চেয়েছেন, যিনি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খুঁজে বেড়ান।

জুডি ল অভিনীত ওই চরিত্রটি ভাইরাস নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে বেড়ান এবং ভাইরাসের একটি জাল ঔষধের প্রচারণা চালান।

বাস্তবেও তার সাথে মিল পাওয়া যায়। অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা দশ লাখের বেশি পণ্যের বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ এসব পণ্যের বিক্রেতার দাবি করেছিলেন যে, সেগুলো কোভিড-১৯ সারাতে সহায়তা করে।

সুপরিচিত আমেরিকান টেলিভিশন তারকা জিম বাক্কের নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন, কারণ এক সপ্তাহ আগে তিনি একটি টনিকের প্রচারণায় বলেছিলেন যে, সেটা ভাইরাস থেকে আরোগ্য হতে সাহায্য করে।

বর্তমান প্রাদুর্ভাবে এই গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে যে, ভাইরাসটি আসলে একটি রাসায়নিক অস্ত্র হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল।

এমনকি চিত্রনাট্যকার বার্নসের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কোন কোন ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে এসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তিনি গোপন সংস্থার সদস্য, যারা বিশ্বের ব্যাপার-স্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।

”আমি মনে করি, সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো এসব ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া, যা ভাইরাসের মতোই বিপদজনক।”

বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসযোগ্যতা
কনটেজিয়নের জনপ্রিয়তার পেছনে আরো একটি কারণ থাকতে পারে যে, বার্নস এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

চিত্রনাট্য লেখার সময় তিনি ভাইরোলজিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্টদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন, যাদের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন।

তারা তাকে চমৎকার কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।

”তারা আমাকে বলেছিলেন, একটি প্রাদুর্ভাব সত্যিই হবে কিনা, সেটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো, কোন সময়ে হবে।”

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com