শুধু বিশ্বকাপ ফুটবল মাঠের দর্শকরাই নন, নারী ক্রীড়া সাংবাদিকদেরও পোশাকেও নেই শালীনতার বালাই। কে কতো খোলামেলা বস্ত্র পরতে পারে চলে সেই প্রতিযোগিতাও। এদের মাঝে ব্যতিক্রম ওয়াদাদ হাসুসি। লেবাননের এই নারী ফটো সাংবাদিক মেনে চলছেন পর্দা প্রথা। মাথায় হিজাব পরেই কভার করেছেন পাঁচ বিশ্বকাপ। এর মধ্যে পুরুষ বিশ্বকাপ তিনটি। দুটি নারী বিশ্বকাপ ফুটবল।
এছাড়া ২০২০ (করোনার জন্য ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত) টোকিও অলিম্পিক গেমস এবং ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে অনুষ্ঠিত ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসও কভার করেছেন। কাজে মধ্যেও ভুলে যান না নামাজ। সময় হলেই দাঁড়িয়ে যান জায়নামাজে।
৬০ বছরের কাছাকাছি ওয়াদাদের সাথে প্রথম দেখা ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে। এরপর রাশিয়া বিশ্বকাপেও তাকে পেয়েছিলাম। এবার কাতার ২০২২ বিশ্বকাপেও তাকে পাওয়া গেল ভারী ক্যামেরা নিয়ে মাঠে ছুটতে। কভার করেছেন ২০১৫ কানাডা এবং ২০১৯ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপও। ব্রাজিলে লম্বা কালো বোরখা পরলেও এখন শুধু হিজাব।
লেবাননে জন্ম হলেও ওয়াদাতের স্থায়ী আবাস এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ১৯৮৮ সালে লেবানন ছেড়েছেন সেখানে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিলেও তিনি এখন ক্রীড়ার ফটো সাংবাদিক। এই ফটো সাংবাদিকতায় তার আসা বাবার হাত ধরে। তার বাবাও ছিলেন ফটোগ্রাফার।
বর্ষীয়ান এই নারী সাংবাদিকের কভার করা বিশ্বকাপগুলোর মধ্যে কাতারই সেরা। কারণ খুবই অল্প দূরত্বে স্টেডিয়াম গুলোর অবস্থান। জানান, ব্রাজিল বিশ্বকাপে এক স্টেডিয়াম থেকে অপরটিতে যেতে সময় ও টাকা সবই গেছে। রাশিয়ায় বিভিন্ন শহরে যোগাযোগের জন্য ট্রেন সার্ভিস ফ্রি ছিল। কিন্তু দূরত্বতো কম ছিল না। কিন্তু কাতারে সেই সমস্যাই নেই। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা লাগে।
এই হিজাব পড়ে বড় আসর কভার করতে গিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়েছেন ওয়াদাদ। বলেন, ফাইনালের সময় একজন আমার মাথায় আঘাত করে। এতে খুলে যায় হিজাব। যদিও লোকটি বলেছিল এটা দুর্ঘটনাবশত। তবে উপর থেকে যারা দেখেছেন তারা আমাকে জানিয়েছিল, লোকটি ইচ্ছে করেই এ কাজ করেছিল।
আর মাঠে তার বাজে অভিজ্ঞতা ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিতে জার্মানীর কাছে ব্রাজিলের ১-৭ গোলের পরাজয়টি। তার দেয়া তথ্য, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না ব্রাজিলের মতো দল এভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে জার্মানদের কাছে। ব্রাজিল ৪ গোল খাওয়ার পর আমি আর কোনো ছবি তুলিনি। ক্যামেরা বন্ধ করে খেলা দেখেছি। জানান, খেলা শেষে আমার যাওয়ার কথা ছিল বেল হরিজন্ত থেকে সাওপাওলোতে। কিন্তু আমি আর যাইনি সেখানে।’
ধর্মপ্রাণ এই মুসলিম ফটো সাংবাদিকের অনুরোধ সব মুসলিম মেয়ে এবং নারী যেন পর্দা করে চলে। কারণ আমরা মুসলমান। কোনো মেয়ে মুসলামান কিনা তা চেনার উপায়ও এই হিজাব।
Leave a Reply