1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

মাছের আঁশ : রফতানি বৈচিত্র্যে আশা জাগানো নতুন পণ্য

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২

যশোরের মাছ ব্যবসায়ীরা আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তবে তারা মাছ নয় এবার মাছের আঁশ রফতানি করেই দেশে আনছে ডলার। শুনতে সত্যিই অবাক লাগছে? হ্যাঁ এই ব্যবসার সাথে জড়িত যশোর জেলার অনেকের মুখে হাসিও ফুটছে।

যশোরের মাছ বাজারগুলোর বটি ওয়ালারা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন এ আঁশ। তারপর এক-দুই হাত ঘুরে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ রফতানি হচ্ছে। বিদেশে এ আঁশ দিয়ে তৈরি হয় ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র, কৃত্রিম কর্নিয়া ও কৃত্রিম হাড়, ওষুধ, মাছ ও মুরগির খাবার, নেইলপালিশ, লিপস্টিকসহ নানা প্রসাধনী।

যশোরের মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, যশোরে মাছের আঁশের চাহিদা এখন অনেক বেশি। বড় বাজারে নিয়মিত মাছ কাটেন (বটি ওয়ালা) জনি। মাছ কাটতে প্রতি কেজিতে তিনি নেন ১০ টাকা করে। এর বাইরে মাছের আঁশ বিক্রি করে বছরে কমপক্ষে বাড়তি আয় করছেন ২০ হাজার টাকা।

মাছ কাটার কাজ করেন এমন আরো একজন জাহিদ। তিনি জানান, শুধু আঁশ নয় মাছের নাড়িভুঁড়িও বিক্রি হয়। নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার করা হয় মাছের খাদ্য হিসেবে। শুনেছি এগুলো শুকিয়ে বিদেশেও পাঠানো হয়। মাছের ফুলকো শুকনো করে বিদেশে সুপ তৈরি হয়। এছাড়া মাছের ফুলকা, পিত্ত, চর্বি দিয়ে আরো অনেক রকমের জিনিস তৈরি হয়।

শহরের শুধু বড় বাজার নয়, আশপাশের সব বাজারের বটি ওয়ালারাও নাড়িভুড়ি ও আঁশ বিক্রি করে থাকেন। কেউ কেউ বাসা বাড়ি থেকেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।

শহরের বড় মাছ বাজারের একজন আড়তদার বাবলু, যিনি প্রতিদিন বিভিন্ন বাজার থেকে কয়েক মণ মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, আঁশ শুকিয়ে তিনি চট্টগ্রামের হক সাহেব, সিরাজ হাজী, আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে প্রতি মণ আঁশ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা এই আঁশ চট্টগ্রামের আড়তদাররা বিদেশে রফতানি করেন।

তিনি জানান, দেশে এ ব্যবসা প্রথম শুরু করেন ঢাকার শামসুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী। যিনি তার জাপানি বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে মাছের আঁশের ব্যবসা শুরু করেন।

মাছের আঁশ দিয়ে আসলে কী হয়?
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন মাছের আঁশে আছে কোলাজেন ফাইবার আ্যামাইনো এসিড এর মতো কয়েকটি গুণ। ফলে এই আঁশ দিয়ে তৈরি হয় পাউডার, যা ওষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্প ও খাদ্য শিল্পসহ পরিবেশ রক্ষার নানা সামগ্রীতে কাজে লাগে। মাছের আঁশ সংগ্রহের ফলে পরিবেশও দূষণ মুক্ত হচ্ছে বলে পরিবেশবিদদের অভিমত।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আঁশ সংগ্রহ করার পর সেই আঁশগুলো পরিষ্কার পানিতে অথবা অল্প গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এমনভাবে পরিষ্কার করা হয় যেন মাছের গায়ে লেগে থাকা তৈলাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণ ধুয়ে যায়। তারপর সামান্য রোদে শুকানোর পর ঝরঝরে করা হয়। এরপরই বিক্রির উপযোগী হয়। অবশ্য কেউ কেউ মিক্সার গ্রান্ডারে গুড়ো করে পাউডার আকারেও মাছের আঁশ বিক্রি করেন।

ব্যবসায়ীদের মতে, মাছের ধরন অনুযায়ী আঁশের দাম ভিন্ন হয়। রুই, কাতলার মতো বড় মাছের আঁশের দাম একটু বেশি। চিংড়ি মাছের মাথার খোসার দাম আরেক রকম। মাছের ফুলকার দামও আলাদা। প্রতিটা মাছের চর্বিরও দাম ভিন্ন।

রফতানি প্রাক্রিয়াজাতকরণ সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি আঁশ রফতানি করেন। তবে এই ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ সাত থেকে আটটি দেশে রফতানি হয়। প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার টন আঁশ রফতানি হয় জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোয়। সেখানে মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জিলেটিন তৈরি করা হয়। ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে মাছের আঁশ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কোলাজেন ও জিলেটিন মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হয়, যা ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রীতে কাজে লাগে।

মাছের আঁশ ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার যদি এ বিষয়ে নজর দেন, তাহলে এ ব্যবসার আরো পরিধি বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এই শিল্পকে যেন সামনের দিকে আরো এগিয়ে নেয়া যায় সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানাবো।
সূত্র : ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com