1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে বাংলাদেশী অভিবাসীদের পছন্দের শীর্ষে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২

তৌসিফ শাহারিয়ার দ্বীন ইসলামের বাড়ি বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলায়। গত চার বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় একজন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে নিজের জীবন এবং আয়-উপার্জনে বেশ খুশি তিনি।

তিনি বলেন, ‘বেতনের দিক থেকে এই দেশ এগিয়ে। জীবনমান এখানে অনেক উন্নত। আমার প্রতিমাসের বেতন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ওভারটাইম করলে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয় মাসে। এই দেশে কাজ করলে অন্য দেশের চেয়ে অনেক ভালো পরিস্থিতিতে থাকা যায়। দেশে রেমিটেন্স পাঠানো যায়।’

তৌসিফ শাহারিয়ার দ্বীন ইসলামের মতো আরো শত শত বাংলাদেশী এখন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে উন্মুখ। মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে যখন বাংলাদেশিরা নানা ধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে, তখন সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া এক আদর্শ শ্রমবাজার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশের সামনে।

বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়া এখন অনেকের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা যেসব দেশে কাজ করছেন তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সেরা।

‘আদর্শ গন্তব্য’

তিনি বলেন, ‘অভিবাসী কর্মীর সংখ্যার দিকটা বিবেচনা না করে যদি আপনি জীবনমান, বেতন এসবের কথা চিন্তা করেন, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া এখন এক নম্বরে আছে। কারণ যারা যাচ্ছে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কোম্পানি সিলেক্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বেতন এক লাখের উপরে। ওভার টাইমে যে টাকা পান সেটা দিয়ে বেতন আরো বেশি হয়।’

দক্ষিণ কোরিয়ায় দক্ষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেরকম সাফল্য পেয়েছে এবং সেখানে যাওয়া কর্মীরাও যেরকম খুশি, সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এখন এই বাজারের দিকে আরো বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার আরো ২৫০ জন বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী হিসেব কাজ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। আর এরা সবাই সেখানে গেছেন দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তির অধীনে বোয়েসেলের তত্ত্বাবধানে।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানো হয় দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী। যে কর্মসূচীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেখানে কর্মী পাঠায় তার নাম এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম বা ইপিএস। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি জনশক্তি রফতানি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল ২০০৮ সাল থেকে ইপিএস কর্মসূচির আওতায় স্বল্প ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইপিএস-এর আওতায় নির্ধারিত ১৬টি দেশ থেকে কোরিয়ান ভাষা দক্ষতা ও স্কিল টেস্টের মাধ্যমে অদক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে।

তবে কোভিড মহামারির কারণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত দেশগুলো থেকে কর্মীদের কোরিয়ায় যাওয়া বন্ধ রেখেছিল।

বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতির পর নির্ধারিত কোভিড বিধি অনুসরণ করে গত বছরের ডিসেম্বর হতে আবার কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে প্রথম যে দলটি দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো হয় সেখানে ছিল ১১১ জন কর্মী। আর এ বছরের প্রথম ধাপের জন্য বাংলাদেশকে ১৯৪১ জন কর্মী পাঠানোর কোটা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কোটা পূরণের পর আরো অতিরিক্ত তিন হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ফলে ইপিএস কর্মসূচির আওতায় চলতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে যা করতে হবে

কেউ যদি দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড বা বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন করতে হয়। এরপর লটারির মাধ্যমে আগ্রহীদের মধ্য থেকে কর্মী বাছাই করা হয়।

যারা লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হন, তাদেরকে কোরিয়ান ভাষা শিখতে হয়।

সাধারণত প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে নিবন্ধন শুরু হয়। লটারিতে নাম উঠলে ভাষা শেখার জন্য গড়ে প্রায় দুই মাস সময় পান প্রার্থীরা। এরপর ভাষা পরীক্ষায় বসতে হয়। ২০০ নম্বরের এই পরীক্ষার মধ্যে রিডিং টেস্টের জন্য থাকে ১০০ নম্বর, আর লিসেনিং টেস্টের জন্য ১০০ নম্বর। ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কাজের দক্ষতার পরীক্ষা বা স্কিল টেস্ট নেয়া হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরাই প্রার্থীদের কাজ করার দক্ষতা যাচাই করেন। এরপর প্রার্থীর নিজ জেলায় সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হয়।

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নিজ থানা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

কোন খাতে কর্মী নেয়া হয়

কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী হিসেবে যাওয়ার জন্য সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাদেরকে চাকরি দেয়ার ক্ষমতা বোয়েসেলের নেই। দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো ক্ষুদ্র বা মাঝারি প্রতিষ্ঠান যখন তাদের প্রতিষ্ঠানে বাইরে থেকে কর্মী এনে নিয়োগ দিতে চান, তখন তাদেরকে ওই দেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। মন্ত্রণালয় তখন চাহিদা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়। বাৎসরিক কোটা অনুযায়ী চাহিদার ভিত্তিতে তখন দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জব রোস্টার থেকে লেবার কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার চাকরিদাতা হলো সেখানকার ছোট ছোট বেসরকারি কোম্পানি। কোনো কোম্পানি কোনো কর্মীকে জব অফার প্রদান করলেই কেবল তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরি পান।

‘ভাষা খুব গুরুত্বপূর্ণ’

দক্ষিণ কোরিয়ার ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন ম্যাক্সিম চৌধুরি। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য অবশ্যই ভালো দেশ। তবে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এখানে ভাষার উপর বেশি জোর দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আগের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের পরিবেশ ভালো। একজন বেতন-ওভারটাইম মিলিয়ে দুই লাখের মত আয় করতে পারেন। তবে যারা এখানে আসেন তারা বইয়ের ভাষা শিখে আসেন। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় এখানকার প্রচলিত ভাষায় তারা সেভাবে কথা বলতে পারেন না। তাই ভাষাটা আরো ভালো করে রপ্ত করে আসলে সমস্যা কম হয়।’

কত মানুষ কোরিয়াতে গেছেন

বোয়েসেলের ২০১৯ সালের সর্বশেষ তথ্যে বলা হচ্ছে, ২০০৮ সাল থেকে কোরিয়ার ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোট ২৭ হাজার ৩৬৩ জন যোগ্য কর্মীর তথ্য জব রোস্টারের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

তার মধ্যে থেকে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ হাজার ৬৬৯ জন কোরিয়াতে গেছেন। বাকিরা যাওয়ার প্রক্রিয়াতে আছেন।

বোয়েসেল বলছে, চলতি বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় চার হাজার ৯৪১ জন কর্মী পাঠিয়ে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তারা।

কত খরচ হয়

তৌসিফ শাহারিয়ার দ্বীন ইসলাম চার বছর আগে যখন দক্ষিণ কোরিয়াতে যান তখন তার খরচ হয়েছিল দুই লাখ টাকা।

এর মধ্যে এক লাখ জামানত রাখতে হয়েছিল বোয়েসেলের কাছে। এই এক লাখ টাকা ফেরতযোগ্য। কন্ট্রাক্ট শেষে বাংলাদেশে গিয়ে বোয়েসেলের কাছে আবেদন করলে টাকা ফেরত পাওয়া যায়। বাকি এক লাখ টাকা বিমান ভাড়া এবং অন্য বিষয়ে খরচ হয়েছিল।

বোয়েসেলের কাছে জমা রাখা জামানতের পরিমাণ অবশ্য এখন বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। কেউ যদি দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার আগেই কোম্পানি পরিবর্তন করেন, তাহলে আবার এই জামানতের অর্থ ফেরত পাবেন না।

ইসলাম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীরা এই নিয়মের পরিবর্তন চাচ্ছেন।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com