1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব পরিস্থিতি ও সাংহাই সহযোগিতা শীর্ষ সম্মেলন

গাজীউল হাসান খান
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সমরবিশারদদের বেশির ভাগের মতে, দুই দেশের মধ্যে চলমান কোনো বড় সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধে কোনো তৃতীয় দেশের অন্তর্ভুক্তি কিংবা প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার অর্থই হচ্ছে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সিরিয়া কিংবা ইয়েমেনে যা ঘটেছে বা ঘটছে তাকে আধুনিক সমর কৌশলের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘প্রক্সি ওয়ার’। কারণ সেই সংঘর্ষের প্রাথমিক অবস্থায় তৃতীয় কোনো দেশ সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ময়দানে নামেনি। বর্তমানে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ বা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রথম দিকে অবস্থা সে রকম থাকলেও, অর্থাৎ তৃতীয় কোনো ইউরোপীয় দেশ প্রত্যক্ষভাবে না জড়ালেও এখন ক্রমে ক্রমে সেই দৃশ্যপট অনেকটাই দ্রুত পাল্টাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী সমরবিশারদ কিংবা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা রাশিয়া-ইউক্রেন সশস্ত্র সংঘর্ষের প্রথম দিকে বলেছিলেন, এতে পশ্চিমা সামরিক জোটভুক্ত ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের প্রত্যক্ষভাবে জড়ানোর অর্থই হবে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’। ন্যাটোর নেতৃত্বদানকারী পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য ও অন্যরা এই চলমান সংঘর্ষের গোড়ায় বলেছিল, এতে তারা সরাসরিভাবে এই সংঘর্ষে যুক্ত হবে না। কারণ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যভুক্ত কোনো দেশ নয়। তবে রাশিয়ার অর্থাৎ তাদের ভাষায় ‘আক্রমণকারী দেশের’ বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে তারা সাহায্য করবে। কিন্তু এখন সেই বক্তব্যের মোড় অতি দ্রুততার সঙ্গে বাঁক নিচ্ছে অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতির দিকে।

বিশাল ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রুশভাষী অধ্যুষিত অঞ্চল দোনেত্স্ক, লুহানস্ক কিংবা খেরসন ও জাফরেজিয়া অনেকাংশে দখল ও মূল রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সংযুক্ত করে নেওয়ার কারণে ন্যাটো নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আসতে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে উল্লিখিত অঞ্চলগুলোর সাংবিধানিকভাবে অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গের একটি সাম্প্রতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এখন বিশ্বব্যাপী নতুনভাবে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। স্টলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের পরাজয় হবে ন্যাটো সামরিক জোটের পরাজয়। ইউক্রেনের মতো কৌশলগত অবস্থানে রাশিয়াকে কোনোভাবেই জয়ী হতে দেওয়া যাবে না। তাই ন্যাটোকে ইউক্রেনে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য অবশ্যই তৈরি থাকতে হবে। এ যুদ্ধে ইউক্রেনের সাফল্য ন্যাটোর জন্য প্রতিরক্ষার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইউক্রেনে সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ শক্তিশালী বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

শুধু এসব সমরাস্ত্রই নয়, এখন থেকে দূর আকাশে সংস্থাপিত উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট এবং এমনকি যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন বর্ধিতসংখ্যক পশ্চিমা সামরিক ব্যক্তিরা। এই বিষয়টি নিয়ে আগেও অভিযোগ করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তর। তবে সামনে তা আরো প্রত্যক্ষরূপ ধারণ করবে বলে তাদের আশঙ্কা। সে কারণেই তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্পৃক্ত থাকা ও যুদ্ধ করার অভিযোগ উত্থাপন করে এসেছে। রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনসহ তাদের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের অভিযোগ হচ্ছে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সর্বোচ্চ সমরবিদরা ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন আক্রমণ পরিচালনা করছেন।

সম্প্রতি ব্রাসেলসে প্রদত্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর যে ভূমিকার কথা বলেছেন, সেটাকে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ চলমান যুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক জোটের সরাসরি অংশগ্রহণের স্বীকৃতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মেদভেদেভ বলেছেন, তাঁর অজ্ঞাতসারে ভুল করে হলেও স্টলটেনবার্গ স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁরা ইউক্রেন যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মার্কিন এফ-১৬ ও এফ-১৮ জঙ্গি বিমান থেকে এজিএম-৮৮সহ যে শক্তিশালী মিসাইল ব্যবহার করা হচ্ছে তার উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাডার বিধ্বংসী যেসব মিসাইল বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, তারও বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের গোপনে যুদ্ধ করার কথা এরই মধ্যে অনেকটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তদুপরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ন্যাটো সামরিক জোট তাদের আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সময় যতই লাগুক না কেন। এতে শান্তিকামী, বিশেষ করে যুদ্ধবিরোধী মানুষ অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছে। কারণ এই চলমান যুদ্ধ থামানো কিংবা এর একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কথা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ছাড়া এমনকি জাতিসংঘও জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। অথচ বিশ্বব্যাপী ক্রমে ক্রমে এখন নেমে আসছে অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রভাব। এতে সাধারণ মানুষ দিন দিনই অসহায় হয়ে পড়ছে।

জ্বালানিসংকটে ভুক্তভোগী ফ্রান্সের মানুষ ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য গত সপ্তাহে প্যারিসে বিক্ষোভ করেছে। জার্মানির মাঝারি ও ক্ষুদ্র কলকারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে। ব্রিটেনে লিজ স্ট্রাসের রক্ষণশীল সরকার জ্বালানি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সংকটে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় নীরবে-নিভৃতে বিশ্ব প্রায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এই বিভেদ নীতি ও আদর্শগত। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেনের নেতৃত্বে অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে এখনো জোটবদ্ধ হয়ে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যদিকে চলছে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান, তুরস্ক ও অন্যদের আর্থ-রাজনৈতিক সম্মিলিত মেরুকরণ প্রক্রিয়া। এই বিষয়টি এখন ক্রমে ক্রমে আরো পরিষ্কার হয়ে উঠছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাদের মধ্যবর্তী নির্বাচন। ডেমোক্রেটিক দলীয় জো বাইডেন হয়তো মনে করছেন, মার্কিনরা একটি যুদ্ধপ্রিয় জাতি। তাই নির্বাচন পর্যন্ত যুদ্ধংদেহি মনোভাব ধরে রাখতে পারলে হয়তো মধ্যবর্তী নির্বাচন তাঁর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিতর্ক অনেকটাই সরগরম হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকানদের কথা বাদ দিলেও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন ভয়ানক উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সাধারণ ডেমোক্র্যাটরা ভাবছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। এতে না হবে জ্বালানিসংকটের সুরাহা, না হবে বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি। করোনা-পরবর্তী স্থবির বিশ্ব এ ধরনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সশস্ত্র সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এতে বিনিয়োগ, উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য কিংবা পর্যটন খাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির স্বপ্ন ক্রমেই মুখ থুবড়ে পড়ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রসের প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) বাইডেনের ডেমোক্রেটিক দল সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারলেও উচ্চতর হাউস অর্থাৎ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। এতে অনেকটা অচল হয়ে পড়বে বাইডেন প্রশাসন। তারা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার শিকারে পরিণত হতে পারে। সে অবস্থায় বাইডেনের দ্বিতীয় টার্মে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা উবে যেতে পারে।

পাশ্চাত্যের এমন একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির বিপরীতে প্রাচ্যে এগিয়ে আসছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন হচ্ছে ইউরো-এশিয়ার সর্ববৃহৎ আর্থ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। আগামী বছরের শেষের দিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিষ্ঠানের ২৩তম শীর্ষ সম্মেলন। চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং সর্বশেষ ইরানসহ ৯টি দেশ এই প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ সদস্য। আগামী সম্মেলনের আগে তুরস্ক এই প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ সদস্য পদ লাভ করতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান ২০১৭ সালে এসসিওর সদস্য পদ লাভ করে। আসন্ন সম্মেলনে আফগান তালেবান সরকারপ্রধানসহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে চীনের শি চিনপিং, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের শাহবাজ শরিফ, ইরানের ইব্রাহিম রাইসিসহ সব নেতাই অংশগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এক থেকে দুই বছর আগে বিশ্বব্যাপী ওয়াকিফহাল মহলে একটি রব উঠেছিল যে করোনা-পরবর্তী বিশ্ব আর আগের মতো হবে না। পরিবর্তিত হবে বিশ্ব বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতিসহ যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত বিন্যাস। কারণ বিশ্বে সব দিক থেকে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। সুতরাং আগের আঞ্চলিক জোট, বিশ্বব্যবস্থা কিংবা বৃহৎ শক্তির কায়েমি স্বার্থগত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে, তেমনি মানবিক মূল্যবোধ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং এমনকি সম্পদের সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে অবক্ষয়ের প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছে। পরিবর্তিত হয়েছে পরাশক্তি কিংবা সামরিক শক্তি এবং বৈশ্বিক জোটগত বিভক্তির ধরন। এতে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান, তুরস্ক ও অন্যরা নতুন বৈশ্বিক নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে ক্রমেই ঝুঁকছে। প্রাচ্যে, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতকে নিয়ে ‘কোয়াড’ নামে যে জোট গঠন করেছিল, তাতে শেষ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে অন্যদের থাকা সম্ভব হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি সিআইএর মতে, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অবস্থান কখনো নিশ্চিত করা যাবে না।

আঞ্চলিক অবস্থান ও জাতীয় স্বার্থগত কারণে জ্বালানি, বাণিজ্য কিংবা প্রতিরক্ষার চাহিদা মেটাতে ভারত রাশিয়া, চীন, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করতে বাধ্য হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পথ সুগম হচ্ছে। এরই মধ্যে চীন-ভারতের লাদাখ সীমান্ত থেকে উভয় দেশের সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা এবং এমনকি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে অন্যদের বাণিজ্যের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এসসিওর কারণে ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের আলাপ-আলোচনার জট খোলারও একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর থেকে ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের সার্বিক উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার নিরিখে তা কত দূর এগোবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বহুপক্ষীয় ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নিশ্চিত করা, ডলারের একাধিপত্য কাটিয়ে ওঠা কিংবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যকে নিষ্কণ্টক কিংবা তার পথ সুগম করতে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় আসন্ন এসসিওর শীর্ষ সম্মেলনটি কাঙ্ক্ষিতভাবেই হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন, ভারত, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও অন্যরা আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নতুন উদ্যমে কাজ করছে বলে জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক ও অন্যরা এই সম্মেলনটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী বিশ্বব্যবস্থা নির্ধারণ, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা প্রতিরোধ, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রশ্নে একটি সুষম অর্থনৈতিক নীতিমালা ও কাঠামো গড়ে তোলা, পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা কিংবা অবিনাশী পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার হাত থেকে বিশ্বমানবতাকে রক্ষা করাই হোক এসসিওর শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্য।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com