বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অঘটন। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে বিস্ময়ের বিস্ফোরণ। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ীরা হেরে গেলো নামিবিয়ার কাছে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ক্রমশ ক্রিকেট বিশ্বে সমীহ আদায় করে নেয়া নামিবিয়া। অথচ লঙ্কানদের বলা হচ্ছিলো বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স। কিছুদিন আগে ভারত-পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপাও জিতে এসেছে তারা।
আজ পর্দা উঠেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের। তাসমান সাগর পাড়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞ। গিলংয়ের সিমন্ডস স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে আজ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় নামিবিয়া। টসে জিতে লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নামিবিয়াকে।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নামিবিয়ার। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৬ রানে। ব্যক্তিগত ৩ রানে চামিরার শিকার হয়ে ফিরে যান মিচেল বেন লিংগেন। ১৬ রানের মাথায় আরেক ওপেনার লা কককে হারায় তারা। পঞ্চম ওভারে মাত্র ৩৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে নামিবিয়া।
সেখান থেকে স্টেফান বার্ডকে সাথে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে তুলেন অধিনায়ক গিরহার্ড ইরাসমাস। দুজনের ৪১ রানের জুটি ভাঙে ২৪ বলে ২০ করে ইরাসমাস ফিরে গেলে। ২৪ বলে ২৬ করে স্টিফান বার্ড ফিরেন ১৪ তম ওভার শেষে। ২ বল পর কোন রান না করেই ফিরে যান দক্ষিণ আফ্রিকার এক সময়ের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ডেভিড উইসি। দলের রান তখন ৬ উইকেটে ৯৩।
মনে হচ্ছিলো কোন রকমে হয়তো মধ্যম একটা সংগ্রহ দাঁড় করাবে নামিবিয়া। কিন্তু তারা যা করেছে তাতে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার হতবিহ্বল হয়ে গেছে ক্রিকেট পাড়া। শেষ পাঁচ ওভারের ৩০ বলে নামিবিয়া স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৬৮ রান! হয়তো আধুনিক ক্রিকেটে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে, তবুও দলটা যখন নামিবিয়া, তখন অবাক হবার মতোই ঘটনা বটে।
বড় সংগ্রহের দুই কারিগরের একজন জান ফায়লিংক, তিনি করেন ২৮ বলে ৪৪ রান। তবে লঙ্কান বোলারদের সব চেয়ে বেশী ভুগিয়েছেন জে জে স্মিত। মাত্র ১৬ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটার। নামিবিয়ার সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৬৩ রানে। ৩৭ রানে মাদুশান নেন ২ উইকেট।
১৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দূর্বল নামিবিয়ার বিপক্ষে সহজ জয়ই হয়তো আশা করেছিল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। তবে শুরুতেই তাদের ধারণা ভুল করে লঙ্কানদের ঘাবড়ে দেন নামিবিয়ার বোলাররা। দলীয় ১২ রানে লঙ্কান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ডেভিড উইজি। কুশাল মেন্ডিসকে ফেরান ৬ রানে। তবে ভড়কে দেয়ার বড় কাজটা করেন পেসার বেন শিকোংগো। চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাত করেন লঙ্কান শিবিরে। পর পর দুই বলে হ্যাট্রিকের আশা জাগিয়ে ফেরান পাথুন নিশানাকা ও গুনাথিলাকাকে।
২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপতে থাকে লঙ্কানরা। সপ্তম ওভারে দলীয় ৪০ ফ্রায়লিংকের শিকার হয়ে ১২ রানে ফিরে যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অধিনায়ক দাসুন শানাকা আর রাজাপাকশের ব্যাটে। তবে বিরনার্দ স্কোটিজের শিকার হয়ে ৩৪ রানের জুটি ভাঙে ২১ বলে ২০ রানে রাজাপাকশের বিদায়ে।
রাজাপাশের বিদায়ে লঙ্কানদের স্কোর তখন ৭৪ রান ৫ উইকেট হারিয়ে। স্কোরবোর্ডে আরও ৬ রান যোগ করর ফিরে যান হাসারাঙ্গাও। ৮০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আরো ১২ রান যোগ করতেই হারায় আরো ৩ উইকেট। ৯২ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে জয়ের স্বপ্ন তো দূর, দলীয় ১০০ পেরোনো নিয়েও তখন সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে শেষ উইকেট জুটিতে থিকসানা ও চামিরার ১৬ রানের জুটিতে শতক পেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। অল আউট হবার আগে স্কোরবোর্ডে সংগ্রহ করে ১০৮ রান। ফলে ৫৫ রানের বড় জয় পায় ক্রমশ ক্রিকেট বিশ্বে এগিয়ে যাওয়া নামিবিয়া।
Leave a Reply