মানুষ শব্দের উৎপত্তিগত অর্থই হচ্ছে ভুল। অর্থাৎ মানুষ মাত্রই ভুল করবে- এটিই স্বাভাবিক। আর এ জন্যই একজন মুমিনের ভুল সংশোধন করে দেবে অপর একজন মুমিন, যা গুরুত্বের সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’ (সূরা আল হুজরাত-১০)
যে আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ভুল সংশোধন করে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করার উপায় বাতলিয়ে দিলেন, সে ভুল সংশোধন করতে গিয়েই আজকে আমাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণ কী? আদৌ কি এ আয়াতের বাস্তব প্রয়োগ আমরা করতে পেরেছি?
একটু পর্যালোচনা করা যাক। আমরা যারা অন্যের ভুল সংশোধন করতে চাচ্ছি বা চাই তারা অবশ্যই ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ করি। আমরা মনে করি মহান আল্লাহ তায়ালা তো এমন কাজ করতে বলেছেন যে, তোমরা পরস্পরে পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে সাহায্য করো।’ (সূরা আল মায়িদা-২) তাহলে একজন মানুষ পাপকাজে নিমজ্জিত, ভুলে জর্জরিত ও আদবহীনভাবে চলাফেরা করছে, যা নিঃসন্দেহে পাপ ও সীমালঙ্ঘন কাজের শামিল তাহলে আমি তাকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য যে কাজ করছি তা তো নিশ্চিত পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে সাহায্যেরই শামিল।
তাহলে এতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে পদ্ধতিতে। আমরা আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করতে চাই কিন্তু নিজ পদ্ধতিতে। তাহলে কিভাবে সম্ভব? দেখুন আল্লাহ তায়ালা ওই একই আয়াতের পরবর্তী অংশে কতই না সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন- তবে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠির শাস্তিদাতা। (সূরা আল মায়িদা-২) একটু ভেবে দেখুন, যে আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এত সুন্দর করে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করতে বললেন, আবার ওই একই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করতে নিষেধের পাশাপাশি শাস্তির কথা কেন আলোচনা করলেন?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হলো- উল্লিখিত বিষয়ের সাথে আমরা বিষয়টি মিলিয়ে দেখলে সহজে বোঝা যায় যে, একটি উত্তম কাজ (ভুল সংশোধন) করতে গিয়ে আমরা এমন কিছু কাজ করে ফেলি যা সীমা অতিক্রম বা সীমালঙ্ঘন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আর এই সীমালঙ্ঘন বা সীমা অতিক্রম করার কারণেই আজকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট হওয়ার পরিবর্তে সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে।
ভাবতে পারেন, ভাই আপনি কি নিজেকে বড় মাপের পণ্ডিত ভাবছেন যে আপনার ভুল ধরা যাবে না?
ভাই সত্যি করে বলছি, আমি কাউকে নিচু করতে/অসম্মানিত করতে এটি লিখছি না।
শাইখ সিফাত ভাইয়ের একটি কথা মনে পড়ে গেল। যার সারনির্যাস হচ্ছে- আমাকে ভালো কোনো পরামর্শ দেয়ার অধিকার ইসলাম অবশ্যই আপনাকে দিয়েছে। আমার মধ্যে কোনো ভুল দেখতে পেলে বা আমার কোনো ভুল আপনার কাছে ধরা পড়লে আমার ভুলকে সংশোধন করে দেয়ার অধিকার ইসলাম অবশ্যই আপনাকে দিয়েছে।
আমার মতামতের সাথে যদি আপনার মতামত না মিলে, তাহলে আমার মতামতের বিপরীতে আপনার মতামত ব্যক্ত করার অধিকার ইসলাম অবশ্যই আপনাকে দিয়েছে।
তবে পরামর্শ দেয়ার নামে, ভুল ধরিয়ে দেয়ার নামে, সংশোধনের নামে, মতামত ব্যক্ত করার নামে
যদি আপনি আমাকে আক্রমণ করেন, আমাকে ছোট করেন, আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, আমাকে গালাগালি করেন, তাহলে অবশ্যই এর জন্য আপনাকে গুনাহগার হতে হবে, আপনি নিন্দিত হবেন।
আর যদি আমাকে আক্রমণ না করে, আমাকে ছোট না করে, আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে, আমাকে গালাগালি না করে, আমার সম্মান রক্ষা করে সুন্দর ভাষায়, আমার প্রতি আন্তরিকতা রেখে আমার ভুল ধরিয়ে দেন, আমাকে সংশোধন করে দেন, ভালো কোনো পরামর্শ দেন, তাহলে অবশ্যই এর জন্য আপনি নেকি পাবেন, আপনি প্রশংসিত হবেন এবং আপনি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুতে পরিণত হবেন। আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া পাবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে, আপনাকে ও আমাদের সবাইকে ভুল সংশোধনের সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখার তাওফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
Leave a Reply