পৃথিবীর চোখ ধাঁধানো সব আবিষ্কার যেন দুবাইয়েরই। বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের দরজায় প্রথম ধাক্কা দিয়েছিল বুর্জ আল-খলিফা। সেই থেকেই শুরু। এবার বই আকৃতির এক বিরাট লাইব্রেরি বানিয়ে স্থাপত্যশিল্পের বাহাদুরিতে আরও একটি মোহর বসাল দুবাই। সচরাচর লাইব্রেরিতে সাজানো থাকে বই। এখানে তার উলটো। বইয়ের ভেতরে থাকবে লাইব্রেরি! শহরটির ‘ঐতিহাসিক গ্রাম’ আল জাদ্দাফের মধ্যমণি এখন সাততলার এ গ্রন্থাগার। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ রশিদ আল মাখতুমের নামে নামকরণ করা হয়েছে ‘মোহাম্মদ বিন রশিদ লাইব্রেরি’।
মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভসের (এমবিআরজিআই) অংশ হিসাবে পরিবেশবান্ধব এ লাইব্রেরিটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা হয়েছে। লাইব্রেরিটির ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে ছাদে বসানো সোলার প্যানেল থেকে। আরব আমিরাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাখদুম সোমবার দুবাই সংস্কৃতির নতুন এ বাতিঘর উদ্বোধন করেন। আগামীকাল (১৬ জুন) জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। গ্রন্থাগারটি একটি কাঠের স্ট্যান্ডের আকারে ডিজাইন করা হয়েছে। দেখতে রেহালের মতো। এর মোট আয়তন ৫৪ হাজার বর্গমিটার। সাদতলাবিশিষ্ট লাইব্রেরির ভেতরে রয়েছে আরবি ও বিদেশি ভাষার ১.১ মিলিয়নেরও বেশি মুদ্রিত এবং ডিজিটাল বই। ৬ মিলিয়নের বেশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ। প্রায় ৭৩ হাজার মিউজিক স্কোর। ৭৫ হাজার ভিডিও। ১৩ হাজার নিবন্ধ। এ ছাড়াও আর্কাইভ করা আছে ৩২৫ বছরের বেশি সময়ের পাঁচ হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক প্রিন্ট এবং ডিজিটাল জার্নাল। সারা বিশ্বের প্রায় ৩৫ হাজার মুদ্রণ এবং ডিজিটাল সংবাদপত্রের সংগ্রহ রয়েছে এই বই দালানে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত এ গ্রন্থাগারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে। রয়েছে স্বয়ংক্রিয় একটি স্টোরেজ এবং ইলেকট্রনিক বই পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা। এ ছাড়াও রয়েছে বই ডিজিটাইজেশন ল্যাব। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো লাইব্রেরিবিষয়ক দর্শনার্থীদের সবরকম প্রশ্নের উত্তর দেবে রোবট। লাইব্রেরি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশে এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী জানান, ডিএইচ ওয়ান প্রজেক্টির ভেতরে নয়টি মূল লাইব্রেরি রয়েছে। বিরল এই গ্রন্থাগারটিকে ‘জ্ঞানের বাতিঘর’ বলে অভিহিত করে দুবাইয়ের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছি যার মাধ্যমে সবার মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। লাইব্রেরিটি গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সহায়ক হবে। আমাদের লক্ষ্য মানুষের মনকে আলোকিত করা।’ লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহম্মাদ আল মুর বলেন, মোহাম্মদ বিন রশিদ লাইব্রেরি এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের অন্যতম অনন্য পাবলিক লাইব্রেরি। গ্রান্থাগারটি সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরব বিশ্বের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি প্রদর্শন করে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। বদলে দেবে ২১ শতকের গ্রন্থাগারের ধারণা।’
Leave a Reply