1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন

কোরবানি দেয়া কার ওপর ওয়াজিব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

কোরবানি একটি বড় ইবাদত। কুরআনে সূরা কাউসারে কোরবানি করতে আদেশ করা হয়েছে এবং অনেকগুলো সহিহ হাদিসে কোরবানি করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি পরিত্যাগকারীকে ধমক দেয়া হয়েছে।

কোরবানি দেয়া অধিকাংশ আলেমের মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না করা মাকরুহ। এই বিষয়ে বিখ্যাত ফিকহি বিশ্বকোষ আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ এর ভাষ্য হলো- অধিকাংশ ফকিহ মত পোষণ করেছেন, কোরবানি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তাদের মধ্যে আছেন, শাফেয়ি ও হাম্বলিগণ, ইমাম মালেক (দুই মতের মধ্যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত), আবু ইউসুফ (এক মতানুযায়ী) রহ.। একই মত পোষণ করেছেন, আবুবকর রা:, উমার রা:, বিল্লাল রা:, আবু মাসউদ আল-বাদারি, সুয়াইদ ইবনে গফলাহ, সাঈদ ইবনে মুসায়াব, আতা, আলকামাহ, আসওয়াদ, ইসহাক, আবু সাওর ইবনে মুনযির। (আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৫/৭৬)
কেননা রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যখন জিলহজের ১০ তারিখ আসবে আর তোমাদের কেউ কোরবানি করতে চাইবে তখন সে যেন তার চুল এবং চামড়ার কোনো কিছু স্পর্শ না করে। (সহিহ মুসলিম-৫২৩২)

ওই হাদিসে কোরবানি করাকে চাওয়া তথা ইচ্ছা এর ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং কোরবানি ওয়জিব নয় সুন্নত।
আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত (তিনি রাসূলুল্লাহ সা:কে পেয়েছিলেন), যায়নাব বিনতে হুমাইদ তাকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা:কে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি ওকে বায়াত করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, সে তো ছোট। তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। আর তিনি তার পরিবারের সবার পক্ষ থেকে একটি ছাগল দ্বারা কোরবানি করেছিলেন। (সহিহ বুখারি-৭২১০)

রাসূলুল্লাহ সা: যখন কোরবানি দেয়ার ইচ্ছা করতেন তখন দু’টি বড় সাইজের সুন্দর দেখতে খাসি করা পুরুষ মেষ বা ভেড়া ক্রয় করতেন। তাঁর উম্মতের যারা তাওহিদ ও তাঁর রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি করতেন এবং অন্যটি মুহাম্মাদ সা: এবং মুহামাদ সা:-এর পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (ইবনে মাজাহ-৩১২২, মুসনাদ আহমাদ)

এই হাদিস দু’টির ভিত্তিতে ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেয়ি রহ. প্রমুখ ফকিহ বলেন, একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি যথেষ্ট হবে। ইমাম শাফেয়ি রহ. আরো বলেন, প্রত্যেকের জন্য জীবনে একবার কোরবানি দেয়া সুন্নত।

হানাফি মাজহাবের আলেমদের মতে, কোরবানি ওয়াজিব। এই বিষয়ে বিখ্যাত ফিকহি বিশ্বকোষ আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ এর ভাষ্য হলো- আবু হানিফা রহ.-এর মতে কোরবানি ওয়াজিব। আরো যে সব ফকিহ এ মত পোষণ করেছেন তারা হলেন- ইমাম মুহাম্মাদ, আবু ইউসুফ (এক মতানুযায়ী), যুফার রহ.। অন্যদের মধ্যে এই মত পোষণ করেছেন, রবি, লাইস ইবনে সাদ, আওযায়ি, ছাওরি এবং ইমাম মালেক রহ. (এক মতানুযায়ী)। (আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৫/৭৭)
তাদের দলিল হলো রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার সামর্থ্য আছে অথচ কোরবানি করছে না সে যেন ঈদগাহে (সালাত আদায় করতে) না আসে। (ইবনে মাজাহ-৩১২৩, আল-মুসতাদরাক-৭৫৬৫)

সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে আমাদের দেশে নিসাব পরিমাণ মালিক বলা হয়। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী সামর্থ্য আছে অর্থাৎ নিসাবের অধিকারী প্রত্যেকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এক পরিবারের একাধিক সদস্যদের সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেকের ওপরই কোরবানি ওয়াজিব। যার কোরবানি করার সামর্থ্য বা সক্ষমতা আছে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

সামর্থ্য বা সক্ষমতা কোন ব্যক্তির আছে তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। এই বিষয়ে আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিলাতুহু এর ভাষ্য হলো- হানাফি আলেমদের নিকট সক্ষমতা দ্বারা উদ্দেশ্য কারো কাছে তার এবং তার অধীনস্থ অন্যদের বাসস্থান, পোশাক এবং নিতপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাইরে ২০০ দিরহাম রোপা বা এই পরিমাণ সম্পদ থাকা। (২০০ দিরহাম হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা)।

মালেকিদের নিকট কারো কাছে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর কোরবানি দেয়ার মতো সম্পদ থাকে, যা এক বছরের মধ্যে তার প্রয়োজন হবে না তাহলে সে সক্ষম বলে বিবেচিত।

শাফেয়ি আলেমদের নিকট কোরবানির দিনগুলোতে যদি কোনো ব্যক্তির কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর কোরবানি দেয়ার মতো সম্পদ থাকে তাহলে সে-ই সামর্থ্যবান ব্যক্তি।

হাম্বলিদের নিকট যদি কোনো ব্যক্তি কোরবানি দেয়ার মতো সম্পদ অর্জন করতে পারে সে সামর্থ্যবান ব্যক্তি। এমনকি ঋণ নিয়ে কোরবানি করে যদি ঋণ পরিষোধ করতে সক্ষম হয় তাহলে সেও তাদের নিকট কোরবানি করতে সক্ষম বলে বিবেচিত। (আল-ফিকহুল ইসলামিয়্যু ও আদিলাতুহু, ৪/২৫০)

হানাফি মাজহাবে সক্ষম ব্যক্তির (অর্থাৎ কোরবানির নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে এমন ব্যক্তির) পরিচয় আরো বিস্তারিত এভাবে বলা যায়- প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যকে মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্তি (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অন্যান্য জরুরি জিনিসপত্রের অতিরিক্ত) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) তোলা, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রের নিসাব হলো এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব (আলমুহিতুল বুরহানি-৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া-১৭/৪০৫)

[আস সুন্নাহ ট্রাস্টের ফতোয়া বিভাগ থেকে সঙ্কলিত]

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com