রাসূলুল্লাহ সা: নিজের সৈন্যবাহিনী ও মুসলমানদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করছেন। হজরত আবু বকর রা:-এর পিতা আবু কুহাফা তখনো ঈমান আনেননি। তার ছোট মেয়েকে কুবাইস পাহাড়ের ওপর নিয়ে যেতে বললেন। সত্যি কি মুহাম্মাদ সা: তাঁর দলবল নিয়ে মক্কার দিকে আসছেন কিনা- তা যাচাই করার জন্য। অবশেষে মেয়ে পিতাকে নিয়ে পাহাড়ে উঠল। আবু কুহাফা চোখে কম দেখতেন, তাই তার মেয়ে অগ্রসরমান বিরাট এক লশকরের ব্যাপারে পিতাকে জানাল।
এদিকে লোকজন বলছিল, যে তার ঘরে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ। তাই নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আবু কুহাফাও পাহাড় থেকে নেমে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। অমনি তার পুত্র আবুবকর সামনে হাজির। কত বছর হলো নিজের ছেলে থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন। দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগে ছেলে ব্যস্ত আর পিতা এখনো দ্বীনের আলো থেকে বঞ্চিত। ছেলে তার পিতার হাত ধরে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে নিয়ে এলেন। নবীজি সা: বৃদ্ধ পিতা আবু কুহাফার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন। তাই পিতার প্রতি সম্মান রক্ষার্থে ও মনোরঞ্জনের জন্য আবুবকরকে বললেন- ‘মুরুব্বিকে তুমি ঘরেই থাকতে দিলে না কেন? আমি নিজেই তার কাছে উপস্থিত হতাম।’ নবীজির মমতা দেখে আবু কুহাফার চেহারা দীপ্ত হয়ে উঠল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর নবীজি বৃদ্ধ পিতার সাদা চুলের দিকে তাকিয়ে তাকে আরো একটু স্বস্তি ও আনন্দ দিতে বললেন, এই চুলগুলোর রং বদলে দাও, তবে এতে কালো রং লাগিও না।
সুতরাং, আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সা: মানুষের মনমানসিকতা বুঝে কথা বলতেন, অথচ আমরা কী করি? অন্যের অবস্থা না বুঝেই কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলি ও প্রচার করি। যেমন ধরুন, আপনার কোনো এক বন্ধুর হয়তো শারীরিক বা আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। এদিকে গল্পের মধ্যে ছুটির দিন কিভাবে কাটল প্রশ্নে, আপনি একের পর এক এভাবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট আর দামি দামি রিসোর্টে যাওয়ার গল্প শেয়ার করতে লাগলেন। আপনি কি চিন্তা করে দেখেছেন-তার মনের অবস্থা? অথচ সে হয়তো হতাশায় মরে যাচ্ছে।
আবার ধরুন, আপনার কোনো আত্মীয় অনেক কষ্টে ৭-৮ হাজার টাকা দামের স্মার্টফোন কিনে তা দিয়েই নিজের প্রয়োজন পূরণ করছে আর আপনি তার অবস্থা জানা সত্ত্বেও তাকে বলছেন- ‘এই মডেল তো ওল্ড ফ্যাশন, আইফোন কিনে নে।’ এতে আপনার বন্ধুর কেমন লাগবে? মানসিকভাবে কষ্টই পাবে। যেটা ইসলামের সৌন্দর্য নয়। সুতরাং, মানুষের অবস্থা বুঝে কথা বলে, মানুষের মনের চাপ বা কষ্ট দূর করে দেয়াটাই ইসলাম। যে শিক্ষাটা আমরা নবীজি সা:-এর জীবন থেকেও পাই।
Leave a Reply