1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায় একাকীত্ব, দূর করার ৫টি উপায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ মে, ২০২২

পৃথিবীর সকল মানুষ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে একা বোধ করেন। এটি এক ধরনের অনুভূতি। সেটি দীর্ঘমেয়াদি হলে তখনই তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কারণে একজন মানুষের জীবনে একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসে। একাকীত্ব ডেকে আনতে পারে হার্টের অসুখসহ স্বাস্থ্যের জন্য নানা ক্ষতি।

অনেক ছোটবেলায় মা-বাবা দু’জনকেই হারিয়েছেন সুলতানা শিকদার অহনা। সে সময় তার ভাই বোনেরাও ছোট ছিল। বলতে গেলে একাই বড় হয়েছেন তিনি।

কিশোরী বয়সেই ঢাকায় এসে আত্মীয়দের বাড়ি অথবা হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছেন।

সেই বয়স থেকেই ছাত্র পড়িয়ে, পার্ট টাইম কাজ করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালিয়েছেন।

নিঃসঙ্গ জীবন এবং একাকী পথ চলায় তার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা।

সুলতানা শিকদার বলছেন, ‘ওই সময় সাপোর্ট দেয়ার মতো কেউ ছিল না আমার। আমার ভাই-বোনদের সাথে সেভাবে বন্ডিংটা গড়ে ওঠেনি। আমি চেয়েছিলাম পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, ওরা চেয়েছিল আমি যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলি। ১৭ বছর বয়সেই তাই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছি। এরপর থেকে ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা আর কখনো ঠিক হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেছেন তারপর আরো পড়াশুনা করেছেন। ব্যাংকে চাকরী করেছেন দীর্ঘদিন। এখন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বিয়ে করেছিলেন বছর ১৬ আগে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা সুখের ছিল না। তাই বিচ্ছেদের পথ বেছে নিয়েছেন।

সবকিছু মিলিয়ে একাকীত্ব তাকে কোনোদিন ছাড়েনি।

সুলতানা শিকদার বলছিলেন, ‘২০১১ সালে আমার খুব ভয়াবহভাবে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। তখন আমার ডাক্তার খুব নির্দিষ্ট করেই বলেছিল যে অসুখটা বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণই হলো আমি একা এবং সবকিছু আমাকে একাই করতে হয়। নিজের সবকিছুর দায়িত্ব নিতে হয়। এই কারণে আমি খুব স্ট্রেসে থাকি।’

‘২০১৮ সালে আমার থাইরয়েডের সমস্যা ধরা পরে। থাইরয়েড সমস্যার অন্যতম কারণও হচ্ছে স্ট্রেস।’

একাকীত্ব যেসব অসুখ বাড়িয়ে দেয়
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার পর ডিজিস কন্ট্রোল বা সিডিসি বলছে, এখন বেশ শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণাদি রয়েছে যে একাকীত্ব নানা অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

সংস্থাটি বলছে, একাকীত্বের কারণে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে ২৯ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৩২ শতাংশ।

দীর্ঘদিনের একাকীত্ব মস্তিষ্কের কিছু মনে রাখতে না পারার মারাত্মক অসুখ ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের মধ্যে বিষাদ, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যা প্রবণতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে।

এসব কারণে নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের তাড়াতাড়ি মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন বলছেন, ‘অনেক মানুষ আছে যারা বাধ্য হয়ে একা থাকে। তাদের অনেকের জন্য একাকীত্ব একটা কারাগারের মতো। নিঃসঙ্গ মানুষ অনেক কিছু নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগে।’

‘তার মনে বেশি উদ্বেগ ও মানসিক চাপ তৈরি হয়। যা শরীরে কিছু স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, হার্টের উপর চাপ বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস বাড়াতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির অসুখও বাড়িয়ে দেয়।’

তিনি আরো বলছেন, একাকীত্ব মানুষের সামাজিক দক্ষতা কমিয়ে দেয়। ব্যক্তিত্বের সমস্যা তৈরি করে। তাতে সে আরো একা হয়ে পড়ে।

তার ভাষায়, মনের মধ্যে একাকীত্বের পাহাড় যখন জমতে থাকে তখন ক্রোধও তৈরি হতে পারে।

পরিবারে থেকেও যখন একা
পরিবারের সদস্যদের সাথে থেকেও একা বোধ করেন এমন অনেক মানুষ রয়েছেন। তাদের একজন নাজিয়া হোসেন।

‘আমার মায়ের স্ক্রিৎসোফ্রেনিয়া আছে। তার এই মানসিক রোগের জন্য সে অন্য মানুষজনের মতো স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে না। তার অন্য আরো অসুখ আছে। আমার একমাত্র ভাই অটিস্টিক। এই কারণে পরিবারের সবাই মিলে বলতে যে বিষয়টা আছে, আমার তেমন কিছু নেই।’

‘আমি তাদের সবধরনের দেখাশুনা করি, একই বাড়িতে থাকি। কিন্তু আমি তাদের সাথে থেকেও একা। পরিবারের সদস্য থাকা সত্বেও বাসায় গিয়ে আমি কারো সাথে বলতে পারি না। কথা বলার মতো একমাত্র ব্যক্তি আমার বাবা আলাদা হয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন,’ বলছিলেন তিনি।

২৫ বছর বয়সী নাজিয়া হোসেন ঢাকার একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কাজ করেন। একই সাথে পড়াশুনা করছেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও তার জীবনের সঙ্গী একাকীত্ব এবং বিষাদ কোনোভাবেই যেন কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।

একাকীত্ব আরো বেশি জেঁকে বসে যখন পরিবারের দু’জন অসুস্থ মানুষের দেখাশোনার মতো গুরুদায়িত্ব, চাকরি, পড়াশুনা সবকিছু একাই করতে হয়। কিন্তু সে নিয়ে কারো সাথে কথাও বলতে পারেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাকীত্ব ও বিষণ্ণতার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রয়েছে।

নাজিয়া হোসেন বলছিলেন, ‘এমন অনেক দিন আছে সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠার মতো মানসিক শক্তি পাই না। সব কিছু খুব শূন্য লাগে। মাথার মধ্যে সবসময় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করে।’

‘মনের মধ্যে অনেক ধরনের নেতিবাচক চিন্তা ঘোরে। কোনো কিছুতে খুশি লাগে না। অনেক দিন হলো ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না। খাবারে কোনো রুচি পাই না। খেতে হবে তাই জোর করে খাই। কোনো কিছু করার স্পৃহা পাই না। তাই মনে হয় বিছানা ছেড়ে উঠে কি হবে?’

নিঃসঙ্গতা দুর করতে যা করতে পারেন

সুলতানা শিকদার বলছিলেন, ‘বুড়ো হলে আমার কি হবে? আমাকে কে দেখবে? তাহলে মনে হয় আমাকে একটা সময় এলে নিজের জীবন শেষ করে দিতে হবে। একসময় এরকম অনুভব করতাম। পরে বুঝতে পেরেছি এটা কোনো সমাধান হতে পারে না।’

‘এখন আমি একটা রানার্স গ্রুপে যোগ দিয়েছে। আমরা একসাথে দৌড়াই, বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেই। এক্সারসাইজ হয়। আমার এক দল সঙ্গী তৈরি হয়েছে যারা একে অপরের বাসায় দাওয়াত খেতে যাই। এসব করলে অনেক ভালো বোধ করি।’

ডা. হেলাল উদ্দিন এই পরামর্শই দিচ্ছেন।

তিনি বলছেন :

– ভাল লাগে এমন কিছু করার মতো খুঁজে বের করুন। এমন কিছু করুন যাতে খারাপ চিন্তা থেকে মনোযোগ সরে যায়। সেটা হতে পারে গান শোনা, বই পড়া অথবা বাগান করা। তবে তা যেন ক্ষতিকর ভালো লাগার কিছু না হয়।

– নিজের এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, সংগঠনে যোগ দিন। কিছুক্ষণের জন্য ভালো থাকবেন। সেখানে নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগ হবে, বন্ধুত্ব বাড়বে।

– আত্মতুষ্টি বোধ করবেন এমন কোনো দানশীল কাজে যোগ দিন। ইতিবাচক চিন্তা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

– কথা চেপে না রেখে কথা বলার চেষ্টা করুন, আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সাথে কথা বলুন।

– একাকীত্বের চাপ কমাতে সেটি উপভোগ করতে শেখার কথাও বলছেন ডা. হেলাল উদ্দিন।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com