ছোট্ট শিশু সাবিহা। কাদামাটির সঙ্গে নিবিড় মগ্নে খেলছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ঈদুল ফিতরের কথা সে জানলেও নতুন পোশাক মেলেনি। তাই এবারের ঈদে তার বাড়তি আনন্দও নেই।
সাবিহার মতো রঙহীন ঈদ কাটবে উপকূলের অসংখ্য গরিব জেলে পরিবারের সদস্য। সারা দেশে ঈদের আমেজ থাকলেও সেখানকার অনেক জেলে পরিবারের চিত্র ভিন্ন।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ঈদের নতুন পোশাকের কথা চিন্তা করতে পারছে না তারা। দারিদ্র্যের কারণে উৎসবের জন্য বিশেষ খাবার তৈরি হবে না তাদের অনেকের বাড়িতে।
করোনা মহামারিতে গত দুই বছর ঈদের আনন্দ ম্লান ছিল। এবার দুই মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ঈদ উৎসব। তাই ঈদের আমেজ নেই উপকূলীয় হাজার হাজার জেলের।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফজলু আকন বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের আনন্দ আসে। সেটা আমাদের জন্য আসে না, ওটা বড় লোকদের। নদীতে মাছ নেই। ৬ সদস্যদের নিয়ে সংসার। ঋণে জর্জরিত। কারও জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারি নাই।’
মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুরের জেলে মো. সোহেল বলেন, ‘এবারে ইলিশের দেখা মেলেনি। মহাজনরাই লোকসানে ছিল। নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। আমরা সারা বছর মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার চালাই। এবারে ঈদের আমেজ নেই। কোনো রকম সেমাই-চিনি কিনে খাবো। নতুন জামা-কাপড় কেনার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই।’
কুয়াকাটার হোসেন পাড়ার জেলে রফিক বলেন, ‘এবারে কষ্টের শেষ নেই। ঈদের বাজার করতে পারি নাই। এমনিতেই ঋণে আটকাইয়া আছি।’
রাসেল ফিসের পরিচালক রাসেল জানালেন, জেলেদের অনেক টাকা দাদন দিয়েছেন। কিন্তু মাছের দেখা নেই। তাই অনেক কষ্টে দিন পার করছেন।
আলিপুর বাজারের ভাই ভাই বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী মহসিন বলেন, ‘এবারে যে পরিমাণ মালামাল দোকানে উঠাইছি, তার অর্ধেকও বিক্রি হবে না। মাঝে মাঝে কিছু কাস্টমার আসে দোকানে, তাও দামাদামি করে চলে যায়।’
উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘ইলিশসহ অন্য মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঈদ মৌসুম। এর জন্য কিছুটা হলেও জেলেদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা অভিযানকালীন নিবন্ধিত জেলেদের দুই মাসে ৮০ কেজি করে চাল দিয়েছি। পরবর্তীতে আরও সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
Leave a Reply