1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ঝুলে গেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২

সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ঝুলে গেছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। এ সিন্ডিকেটের হোতা বলা হয়ে থাকে বেস্টিনেটকে। ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে দেদার চলছে প্রতিষ্ঠানটির অপতৎপরতা। ২০১৮ সালে বিপুল রেমিট্যান্সের সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল এই চক্রের অপতৎপরতার কারণেই। ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি মিলে করা সিন্ডিকেট এ খাতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমন সিন্ডিকেট গঠন প্রবাসী শ্রমিকের স্বার্থ ও দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করবে। বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিসহ পুরো খাতকেই খাদে ফেলবে- এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সিন্ডিকেট হলে ফের অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা ধরনের অনিয়ম হবে। ব্যবসাবঞ্চিত হবে প্রায় দুই হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি। শুধু তা-ই নয়, অর্থপাচারেরও আশঙ্কা রয়েছে। সে সময় কর্মী প্রেরণে বেস্টিনেট যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল, তাতে কর্মীদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি হয়। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একপর্যায়ে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার খোলার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর থেকে তৎপর হয়ে উঠেছে সেই পুরনো হোতা আমিন-স্বপন সিন্ডিকেট। সরকারের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির এতে মদদ রয়েছে বলে তারা নিজেরাই বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। তাদের নানা অপতৎপরতা, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে সরকারের ভাবমূর্তি ও সুনাম দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সরকারের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে আমিন-স্বপন চক্রটি। সিন্ডিকেটের ২৫টি লাইসেন্সের নাম অন্তর্ভুক্তির নামে ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন ও মানি লন্ডারিং করেছে বলে একাধিক মাধ্যম থেকে শোনা যাচ্ছে। যা দ্রুত সরকারের গভীর নজরদারির আওতায় আনা প্রয়োজন।

মালয়েশিয়ান মানবসম্পদমন্ত্রীর সমঝোতা স্মারক শর্তের বাইরে ২৫টি লাইসেন্সের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর অন্যায় প্রস্তাবের কারণে সিন্ডিকেট বিষয়ে শুরু হয় নানা প্রকারের জটিলতা। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর চিঠির জবাবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক অনুসরণ করা বা সব লাইসেন্স সমঅধিকার এবং বাংলাদেশের ‘কম্পিটিশন অ্যাক্ট’-এর কথা উল্লেখ করে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে রিক্রুটমেন্ট প্রসেস, সিস্টেম চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সব সময় আইএলও সনদ অনুযায়ী ট্রান্সপারেন্ট, ফেয়ার অ্যান্ড সেফ মাইগ্রেশনের পক্ষে।

বায়রার একাধিক নেতা বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সিন্ডিকেট বাস্তবায়িত হলে আগের মতো অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের কিছুসংখ্যক ব্যক্তির দেশবিরোধী তৎপরতা চরিতার্থ হওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় এক হাজার কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে।

এ ছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে, যা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ফলে সরকার ও দেশের সুনাম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নেতারা আরও বলেন, সীমিতসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করলে কর্মী প্রেরণের গতি যেমন কমে যাবে, তেমনি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের ব্যবসার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। শ্রমবাজার দীর্ঘায়িত না হয়ে আগের মতো যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরে অনিয়ম, অরাজকতা, পারস্পরিক রেষারেষি বৃদ্ধি পাবে। তারা আরও বলেন, মালয়েশিয়া আরও ১৩টি সোর্স কান্ট্রি থেকে সিন্ডিকেটবিহীন স্বাভাবিক নিয়মে কর্মী আমদানির বিপরীতে শুধু বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক আমদানি করলে, সেটি হবে স্বাধীন দেশের জন্য অমর্যাদাকর। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ও শ্রমিক শোষণের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে সে দেশের কিছু কিছু কোম্পানির প্রোডাক্ট কানাডা, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে। যা পরবর্তী সময় বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে প্রভাবিত করবে।

বায়রার সাবেক অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ কোনো প্রকার সিন্ডিকেটকে অনুমোদন দেবে না মর্মে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এবং মালয়েশিয়ান মন্ত্রীকে পুনরায় জানিয়ে দেওয়া দরকার- বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে হলে অন্য ১৩টি দেশের জন্য যে সিস্টেম, সেই সিস্টেমেই নিতে হবে। তা হলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বিলম্বিত হবে না। সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে, একবার এই সাহসী ভূমিকা নিতে পারলেই ভবিষ্যতে আর কখনো সিন্ডিকেটের প্রস্তাব আসবে না। যেখানে প্রতিবেশী দেশ নেপাল শ্রমিক পাঠাতে কোনো বিশেষ নিয়ম বা সিন্ডিকেটের প্রয়োজন হয় না সেখানে বাংলাদেশ থেকে কেন সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠাতে হবে? আমরা কি নেপালের চেয়েও দুর্বল দেশ? এটি আমাদের দেশের জন্য সম্মানের বিষয়। মালয়েশিয়ায় আমরা কর্মী প্রেরণ করতে চাই, তবে সেটা যে কোনো মূল্যে নয়, আত্মমর্যাদা বিসর্জন ও দেশকে বিকিয়ে দিয়ে নয়, কিছু লোকের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যও নয় অথবা এই সেক্টরকে বিশাল দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার জন্যও নয় বরং বাজার খুলতে হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে।

জানা গেছে, ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ফর্মুলার হোতাদের নজর পড়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবসার দিকেও। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। তাদের সবাইকেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এই ১০ লাখ শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে হাতিয়ার করে ব্যবসায়িক ফায়দা হাসিলের জন্যই ৩৫টি মেডিক্যাল সেন্টারের সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। অথচ সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশে শ্রমিকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো বিদেশি কোম্পানির খবরদারির বাধ্যবাধকতা নেই। সমঝোতা স্মারকে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত ও নির্ধারিত মেডিক্যাল সেন্টার দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারী এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) একটি বড় অংশ বরাবরই এ সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে মালয়েশিয়ান কোম্পানি বেস্টিনেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত। এ অপকর্মে নেপথ্যে থেকে মদদ দিচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো শ্রী আমিন ও তার বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অংশীদার রুহুল আমিন স্বপন। সাড়ে তিন বছর আগে বিপুল রেমিট্যান্সের সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল এ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায়। যে ৩৫টি মেডিক্যাল সেন্টার নিয়ে সিন্ডিকেশনের চেষ্টা চলছে, তার মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নামে-বেনামে সরাসরি রুহুল আমিন স্বপন জড়িত। চক্রটি মেডিক্যাল সেন্টারের স্বত্বাধিকারীদের কাছ থেকে নিবন্ধনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। বিতর্কিত সব কিছুই হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়া।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, শিগগিরই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হবে বলে আশা করি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না কবে চালু হবে। বাজার চালু হলে সবার আগে আমার দেশ ও শ্রমিকের স্বার্থ দেখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মেডিক্যাল সেন্টারকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।

২০১৯ সালে বিদেশগামী শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়োজিত মেডিক্যাল সেন্টারগুলোকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নথিভুক্ত করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তখন তড়িঘড়ি করে মান যাচাইয়ের জন্য কমিটি করা হয়। কমিটি অনেক মেডিক্যাল সেন্টারও পরিদর্শন করে।

পরে ২০২২ সালের শুরুতে বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২২ (সংশোধিত)-এর আলোকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পরীক্ষাকেন্দ্র তালিকাভুক্তির জন্য পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে দেওয়া বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রাপ্ত আবেদনপত্রগুলো সময়োপযোগী না হওয়ায় বাতিল করে নতুনভাবে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

সরকারের কাজের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে মালয়েশিয়ার বিতর্কিত আইটি প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট। তাদের কিছু কর্মকর্তা ঢাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টার ভিজিট করে যাচ্ছে। এখন বেস্টিনেট মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদনের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। অথচ মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একমাত্র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ফোমেমা, যার সঙ্গে বেস্টিনেটের কোনো ধরনের চুক্তি বা সম্পর্কই নেই। ১৪টি দেশের সব শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়, যার পুরোটাই ফোমেমার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশের মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদ্ধতি ও মান ফোমেমার সমমান না হওয়ায় অনেক কর্মীকে মেডিক্যালি আনফিট হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরতেও হয়েছে। যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষার মান ফোমেমার সমমান হতো তা হলে শত শত কর্মী দেশে ফেরত আসত না।

বায়রার সাধারণ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফরেন ওয়ার্কার সেন্টারালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, তাদের ওয়েবসাইটে ৩৫টি মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা প্রকাশ করেছে। যার অধিকাংশই মানহীন ও অনুমোদনহীন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কীসের ভিত্তিতে এফডব্লিউসিএমএস এ তালিকা করল? কে অনুমোদন দিল? বাংলাদেশ সরকারকে না জানিয়ে এবং সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিদেশি কোম্পানির এ ধরনের কর্মকা- বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য। এ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো কাদের মদদপুষ্ট? কেন এ লিস্টে দেশের প্রথম সারির কোনো সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নেই? সাধারণ সদস্যরা প্রশ্ন করেন, একটি বিদেশি কোম্পানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন কিংবা অনাপত্তি ছাড়া টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দুঃসাহস কী করে পায়। এখানে স্বাস্থ্য ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো ইন্ধন আছে কিনা তারও তদন্ত হওয়া দরকার। যদি শ্রমিকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার মান নিশ্চয়তার জন্য মালয়েশিয়া সরকার কোনো প্রাইভেট কোম্পানিকে নিয়োগ করে, তবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর আবার কর্মীর দ্বিতীয় দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়।

এসব কারণে শ্রমবাজারে অসন্তোষ ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বায়রার একাধিক বর্তমান ও সাবেক নেতা অভিযোগ করছেন, মেডিক্যাল সেন্টারকে কেন্দ্র করে বিপুল অঙ্কের টাকা বিভিন্ন মহলে লেনদেন হয়েছে এবং হচ্ছে। বায়রার নেতারা বলেন, যদি মালয়েশিয়া সরকারের দোহাই দিয়ে এফডব্লিউসিএমএস এ তালিকা করে, তবে কেন আবার শ্রমিককে মালয়েশিয়া গিয়ে দ্বিতীয় দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে? এত কিছুর পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে বারবার সিন্ডিকেটের নাম ভাঙিয়ে হচ্ছে প্রতারণা।

বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির এক সিনিয়র সদস্য বলেন, অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা যদি ফোমেমার সমমান নিশ্চিত করা যায় তা হলে মালয়েশিয়া গিয়ে দ্বিতীয়বার মেডিক্যাল করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবে তা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে মালয়েশিয়া সরকার ও ফোমেমার সহযোগিতা চাইতে হবে। গুটিকয়েক ব্যক্তি মিলে করা এ সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য ও জনশক্তি রপ্তানি খাতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমন সিন্ডিকেট গঠন বিদেশগামী শ্রমিকের স্বার্থ ও দেশের সুনাম ক্ষুণœ করবে। অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেট মানেই অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা ধরনের অনিয়ম। শুধু তা-ই নয়, এখানে অর্থপাচারের আশঙ্কা ও ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর মান যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য মেডিক্যাল সেন্টার নির্বাচন করতে হবে। এখানে বায়োমেডিক্যাল নাম দিয়ে কোনো বিদেশি সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে জিম্মি হওয়া যাবে না। গতবার বায়োমেডিক্যাল এবং মালয়েশিয়া ডাক্তারের অনলাইনে এক্সরে রিপোর্ট পরীক্ষাসহ নানা অজুহাতে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি সিস্টেম প্রোভাইডার। ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতে একটি ভিসার জন্য চারজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তথাকথিত ডিজিটাইজেশন ও উন্নত পদ্ধতির পরও হাজার হাজার লোক মালয়েশিয়া থেকে মেডিক্যালি আনফিট হয়েছে। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, এফডব্লিউসিএমএসের বায়োমেডিক্যাল পোর্টালের দুর্বলতার কারণে শত শত কর্মীর রিপোর্ট রেকর্ড থেকে মুছে যায়। হাজার হাজার কর্মীর মেডিক্যাল রিপোর্ট মাস পেরোলেও হাতে পাওয়া যায়নি। ফলে নিয়োগকর্তা অন্য দেশ থেকে কর্মী নিয়ে নেয়। এ স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে ব্যবসা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টার কারণেই ভাগ্যবঞ্চিত হয় লাখো কর্মী।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতিতে ২ লাখ ৭৫ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া যায়। বিপরীতে এফডব্লিউসিএমএসের কারসাজি ও মেডিক্যাল সেন্টার সিন্ডিকেটের কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। জনপ্রতি ৫ হাজার ৩০০ টাকা বায়োমেডিক্যাল ফি হিসেবে এফডব্লিউসিএমএস লুটে নিয়েছে শতকোটি টাকা। হাজার হাজার কর্মী মেডিক্যালি ফিট হয়েও এফডব্লিউসিএমএস সিন্ডিকেটের বিভিন্ন জটিলতায় মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি। তারা সে সময় কোনো ক্ষতিপূরণও পায়নি। সেই একই সিন্ডিকেটের একই ফর্মুলা মেনে নেওয়া মানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া ও শ্রমিকের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করা।

তীব্র শ্রমিক সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘জিরো কস্ট মাইগ্রেশন সিস্টেম’ পদ্ধতি গ্রহণ করে। তাই সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রথমেই শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বল্প খরচে অভিবাসন বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই জনশক্তি রপ্তানিতে যেমন মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে, তেমনি সেফ মাইগ্রেশনের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন আমাদের সময়কে বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে কোনো অবস্থাতেই সিন্ডিকেশনকে বাংলাদেশ মেনে নেবে না। তিনি জানান, স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে বিঘ্নসৃষ্টিকারী বিষয়গুলোর সমাধানে তারা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, সিন্ডিকেশন ছাড়াই কীভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি করা যায় এসব বিষয়ে আমরা ঢাকায় ১২ মে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসার প্রস্তাব করেছি। সচিব বলেন, ঢাকা ও কুয়ালালামপুর উভয়েই কর্মী পাঠাতে ও নিতে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের এখনো কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলোর সমাধান করতে হবে। প্রস্তাবিত বৈঠকে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেট ছাড়াই কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো যায় সে প্রক্রিয়া নির্ধারণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তার প্রত্যাশা, দেশের স্বার্থ, শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনা করে হয়তো শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার বাজার খুলবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com