স্কেবিস বা খুজলি-পাঁচড়া কেউ কেউ চুলকানি রোগ বলে থাকেন। এ রোগটি হয় সারকপটিস স্কেবিয়া দিয়ে। এ জীবাণুর বিশেষত্ব হলো, পুরুষ কীটটি যৌনমিলনের পরপরই মারা যায়। বেঁচে থাকে স্ত্রী কীট। সেটি থাকে চামড়ার বহির্ত¡কে; সুতার মতো লম্বাকৃতির গর্তনালির মধ্যে। সেখানে প্রায় দুসপ্তাহ থাকার পর কীটটি ডিম পাড়তে শুরু করে। গড়ে প্রায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি করে ডিম পাড়ে। ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে আবার সেগুলো শুককীট আকারে বেরিয়ে আসে। ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই এ শিশু কীটগুলো পূর্ণবয়স্ক কীটে পরিণত হয়।
স্কেবিস হওয়ার কারণ : স্কেবিস ত্বকের অন্য সমস্যার মতো নয়। বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যাই হয়ে থাকে অ্যালার্জি, ভাইরাস বা জিনগত কারণে। স্কেবিস হয় মাইটের কারণে। সারকোপটেস স্কেবি নামক আণুবীক্ষণিক জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে এ রোগ। নার্সিং হোম, কারাগার, চাইল্ড কেয়ার ইত্যাদি স্থানগুলোয় প্রায়ই স্কেবিসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা বা কাপড় ব্যবহার করলে বা যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এটি একজন থেকে আরেক জনে ছড়াতে পারে।
স্কেবিসের লক্ষণ : স্কেবিসের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হচ্ছে চুলকানি হওয়া এবং ত্বকের ওপর ফোঁসকা পরা বা লাল হয়ে ফুলে ওঠা। সাধারণত আঙুলের ফাঁকে ও ত্বকের ভাঁজের মধ্যে হয়ে থাকে পাঁচড়া। নবজাতক ও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নিচে হয়ে থাকে স্কেবিস। যদি কারও একবার স্কেবিস হয়, তাহলে আবার এটি হলে লক্ষণ কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়। যাদের আগে কখনো হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশিত হতে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।
উপসর্গ : প্রধান উপসর্গ হলো- চুলকানি এবং রাতে বেশি চুলকায়। স্কেবিন নামক পদার্থ জীবাণু দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। মূলত এটাই চুলকানির জন্য দায়ী। রোগীর দেহে গোটা গোটা দানা দেখা দেয়। শরীরের যে কোনো স্থানেই তা দেখা দিতে পারে। তবে হাতের আঙুলের ভাঁজে, কনুই, তলপেটে, পুরুষাঙ্গে, পা, হাতের তালুর প্রান্তে এ রোগ বেশি সুতার মতো লম্বা দাগ দেখা যায়। বিশেষ করে হাতের ত্বকে। সেই নালির শেষপ্রান্তে একটি অতি ক্ষুদ্র কালো দাগ দেখা দেয়।
যদি দাগের মাথায় কালো বিত্তের মতো দাগ দেখা যায়- সেটা হলো সারকপটিক স্কেবিয়াই নামক কীট। যে কোনো স্থানে এ বারোস বা নালি গর্ত দেখা গেলেও মূলত হাতের কনুই, নাভীর প্রান্তে, যৌনাঙ্গ, স্তনের বোঁটায়, বগলের ত্বকে এবং লোমকূপের গোড়া বিভিন্ন জীবাণুর মাধ্যমে আক্রান্ত হয়। এতে ফোঁড়ার মতো গোটা দেখা দেয় ক্রমে তা পেকে যায়।
চিকিৎসা : বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। যেমনÑ ৫% পারিমিথ্রিন, ১% গামা বেনজিন, হেক্সাহকোরাইড কিংবা ২৫% সালফার ব্যাসিলিনের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।এসব ওষুধ ব্যবহারের আগে রোগীকে খুব ভালো করে সাবান মেখে গোসল করিয়ে নিতে হবে। তারপর মুখমণ্ডল বাদে ঘাড় থেকে শুরু করে সারা শরীরে ওই ওষুধ মাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় ধরে গায়ে মেখে রাখতে হবে এবং আগে ব্যবহার করা সব কাপড়চোপড় ১০ মিনিট ধরে গরম পানিতে ফুটিয়ে ধুয়ে নিতে হবে অথবা খুব ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর ইস্ত্রি করে সেসব কাপড় ব্যবহার করলে পুনঃআক্রমণের ঝুঁকি অনেকটা কম থাকে।
লেখক : চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
Leave a Reply