ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা ত্বকের নানা ধরনের গুরুতর সমস্যায় খুব বেশিই ভুগে থাকেন। কিছু কিছু সমস্যা আছে, যা শুধু ডায়াবেটিস রোগীরই বেশি হয়ে থাকে। আবার সাধারণ ত্বকের সংক্রমণও ডায়াবেটিসের কারণে জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্তদের ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের দেহের যে কোনো জায়গায় ফোঁড়া, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। নখের গোড়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। দেহের যে কোনো ভাঁজে, কুঁচকিতে ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে ত্বকে মারাত্মক চুলকানি দেখা দিতে পারে। রক্তে উচ্চমাত্রায় সুগার ত্বক পানিশূন্য করে ফেলে দিতে পারে। এতে ডায়াবেটিস রোগীর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং ফেটে যেতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে ত্বকে মারাত্মক চুলকানি।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের একটি গুরুতর লক্ষণ হলো- গলার পেছনে, কুঁচকিতে কালো, খসখসে আবরণ, যা অ্যাকানথোসিস নেগ্রিকানস নামে পরিচিত। এ ছাড়া পায়ের সামনের ত্বকে গোলাকৃতি কালো-ছোপ দাগ পড়তে পারে।
ত্বকের গভীর স্তরে চর্বি ও অন্যান্য স্তর ক্ষয় হতে থাকে। কিছু সমস্যা আবার চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত। যেমন- কারও কারও ইনসুলিন দেওয়ার স্থানে ত্বক মোটা, উঁচু বা পাতলা হয়ে যায়। ইনসুলিন অ্যালার্জিও হতে পারে।
ত্বকের যত্নে সতর্কতা : যে কোনো ডায়াবেটিসের রোগীর ত্বকে কাটাছেঁড়া, প্রদাহ, ফুসকুড়ি বা ঘা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে নিজে কখনো ফোঁড়া গালানো বা কাঁটা তোলার যাবে না। কাটলে বা আঘাত পেলে আক্রান্ত জায়গা সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। গোসলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা মোটেও উচিত হবে না। মৃদু ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো এবং গোসলের পর আর্দ্রতা রক্ষাকারী লোশন ব্যবহার করা উত্তম। এতে ত্বক ভালো থাকবে। আঙুলের ফাঁকে লোশন ব্যবহার করবেন না মোটেও। রোজ গোসলের সময় বা রাতে নিজের পা পরখ করে দেখুন নতুন কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা। আর যদি তেমন কোনো কিছু খেয়াল করে থাকেন, দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন।
বছরে অন্তত দুবার চিকিৎসকের কাছে পা পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস রোগীদের উপযোগী মোজা-জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। খালি পায়ে হাঁটবেন না। পায়ের যত্ন নিন। ত্বক ভেজা বা আর্দ্র রাখবেন না। ইনসুলিন ব্যবহারের সময় ত্বক পরিষ্কার করে নেবেন। একই সুই বা নিডল অনেকবার ব্যবহার করবেন না। ইনসুলিন দেওয়ার পর স্থানটি ডলা বা ঘষা যাবে না। তারপরও ওই স্থানে কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ডায়াবেটিসের রোগীদের ছত্রাক সংক্রমণ খুব বেশি হয়ে থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করুন। সব সময় রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখলে সংক্রমণ কম হয়। নখ বা ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে মলম ও ওষুধ ব্যবহার করুন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক
চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ
Leave a Reply