নিন্দুকেরা বলে প্রতিপক্ষ হিসেবে জিম্বাবুয়েকে পেলেই তেতে ওঠে বাংলাদেশ। তাদের এমন মন্তব্য অমূলক নয়। ইতিহাস-পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত সাত বছরে একটি ওয়ানডেতেও হারেনি মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এসময়ের মধ্যে জিতেছে টানা ১৪টি ম্যাচে। এবার ক্যাপ্টেন মাশরাফির অবসর নিয়ে সব ফোকাস তার দিকেই। টাইগার বাহিনী মুখিয়ে আছে সিরিজ জয়ের জন্যই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি শুরু হবে আজ বেলা ১টায়।
প্রথম ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে জিতে ১-০তে এগিয়ে আছে টাইগাররা। আজ জয় পেলেই আরো একটি রেকর্ডের মালা গাঁথবে মাশরাফির দল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবারকার সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জয়টি ছিল বাংলাদেশের হয়ে মুশফিকের ৯৯তম জয়। আজ প্রত্যাশিত জয়টি পেলেই জয়ের সেঞ্চুরি হয়ে যাবে মুশফিকের।
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে ইনিংস জয়ের পর উজ্জীবিত বাংলাদেশ দল। সিলেটে প্রথম ওয়ানডেতে সেটিরই ধারাবাহিকতায় বড় জয় পেয়েছেন টাইগাররা। দলের তিন ডিপার্টমেন্টেই অবদান রেখে সফরকারীদের দাঁড়াতে দেয়নি।
ব্যাট হাতে লিটন দাস, মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ অবদান রাখার পর বল হাতে পেস ডিপার্টমেন্টে জ্বলে ওঠেন ইনজুরি থেকে ফেরা সাইফউদ্দিন, উইকেট না পাওয়ার বেদনায় আচ্ছন্ন থাকা দেশের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। মেহেদী হাসান মিরাজের অবদানও কম নয়।
আলাদা করে নজর কেড়েছেন সাইফউদ্দিন। তিন উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও করেছেন ২৮ রান। বিশেষ করে শেষ ওভারে ২২ রান নিয়ে জিম্বাবুয়েকে আরো চাপে ফেলেছে মাশরাফি বাহিনীর উইলোবাজরা। সে ধারাবাহিকতায় আজ আরো একটি সিরিজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে টাইগাররা।
দলপতি মাশরাফি বলেছেন, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। ব্যাটে রান আসার পর বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতার কারণে ম্যাচ হারতে হয়। আমরা চাই সব বিভাগে সেরাটা খেলে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জিততে। প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়া জিম্বাবুয়ে চাইবে ঘুরে দাঁড়াতে। তারা মরণকামড় দিতে চাইবে।
ওই দিকে জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক চামু চিবাবা বলেছেন, আমরা অনেক দিন ধরেই মাঠে নেই। যে কারণে পারফর্ম করতে সমস্যা হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে সময়মতো বাংলাদেশে না পৌঁছানোর কারণে খেলতে পারেননি শন উইলিয়ামস। সে আসাতে আমাদের দলের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে সেরাটা খেলেই সিরিজে সমতা আনার চেষ্টা করব।
টাইগার ব্যাটসম্যান-বোলাররাও নিজেদের সমৃদ্ধ করে নেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে। সবশেষ ১৪ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি সংখ্যা ছয়টি। এর মধ্যে তিনটিই হয়েছিল ২০১৮ সালের সিরিজে। আর সবশেষটি হলো সিলেটে চলতি সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে, যার একমাত্র দাবিদার লিটন দাস। ১২৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে রিটায়ার্ড হাট হয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান।
২১৭ ওয়ানডে খেলে আপাতত ৯৯ জয় মুশফিকের। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তার পরেই আছেন মাশরাফি। ৯৭টি ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি, তবে বাংলাদেশের হয়ে জিতেছেন ২১৬ ম্যাচের ৯৫টি। তার বাকি দু’টি জয় এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে।
শততম জয়ের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত মুশফিক, ‘লম্বা সময় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পেরেছি বলেই ১০০ জয় হতে যাচ্ছে। মাশরাফি ভাই, সাকিব-তামিমরাও অনেক বছর ধরে খেলছে। আমি সৌভাগ্যবান যে সব ঠিক থাকলে সবার আগে ১০০ জয় আমারই হচ্ছে। ক্যারিয়ারের সেরা অর্জনগুলোর একটি হবে এটি।’
মাশরাফির কথায়, ‘এক সময় জয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো আমাদের। পরে নিয়মিত জিততে শিখেছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এত লম্বা সময় ধরে খেলতে পারাও বড় ব্যাপার। ফর্ম-ফিটনেস সবকিছু মিলিয়ে এত দিন ধরে খেলা সহজ নয়।’
দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘এখানকার ক্রিকেটারদের দেখার পর আমার একটা উপলব্ধি হলো, আমরা যখন ওপরের দিকে থাকি তখন শুধু ওপরের কথাই ভাবি। আর যখন খারাপ সময় আসে তখন পুরোপুরি হতাশায় ডুবে যাই। কোচিং স্টাফে রাসেল ডোমিঙ্গোকে নিয়ে আমি চেষ্টা করি, খেলোয়াড়দের আবেগের মাত্রা ঠিক রাখতে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনার ব্যক্তিত্ব কিন্তু স্কোরবোর্ডে ফুটে উঠবে না। রান করতে হবে আপনাকে। একইসাথে আপনাকে ভালো টিমম্যান হতে হবে, আবার বড় রানও করতে হবে।’
Leave a Reply