রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল ২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে। ওই দিনই তার ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেছিলেন।
এই হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ।
রায়ে অধ্যাপক তাহেরের ছাত্র ও পরে বিভাগের সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল।
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন, কর্মসূচি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য ও একই বিভাগের শিক্ষক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু। আপিল বিভাগের রায়ে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করে কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ অনেক বছর পর তাহের স্যারের হত্যাকাণ্ডের রায় হলো। আমরা মনে করি, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর মিথ্যা ও অপপ্রচারের পরাজয় হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের একজন প্রিয় স্বনামধন্য শিক্ষককে হত্যা করে সত্যকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই দেশে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়ে প্রমাণ হলো, হত্যা করে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে না এবং সত্য ও ন্যায় সব সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। তার ছাত্র ও সহকর্মী হিসেবে আমরা যারা ছিলাম, যারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছিলাম রায়ের মাধ্যমে তারা কিছু হলেও শান্তি পাবো। যদিও আমরা আমাদের প্রিয় তাহের স্যারকে আর ফিরে পাবো না।’
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটা পবিত্র ক্যাম্পাস। এখানে এমন জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলো যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, এটি আমাদের প্রত্যাশা। যারাই এই ধরনের কাজে জড়িত থাকে, সঠিক শাস্তি যেন তারা পায় এটাই আমাদের চাওয়া। এই ক্যাম্পাসের এক সময়ের ছাত্র, এখন শিক্ষক ও প্রশাসক হিসেবে বলতে পারি, এই পবিত্র অঙ্গনকে যারা কলুষিত করবে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেন এই ধরনের প্রতিবাদ করে, সেটাই চাওয়া।‘
অধ্যাপক তাহেরের ছাত্র ও একসময়ের সহকর্মী সুলতান-উল-ইসলাম আরও বলেন, ‘তাহের স্যারের হত্যাকাণ্ডের পর তখনকার জামায়াত-বিএনপিপন্থী কয়েকজন আমাকে ও বর্তমান উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপুকে দোষারোপ করেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হয়তো তারা সহযোগী ছিল। না হলে তারা এটা করবে কেন? তাদের সেই মিথ্যাচার ঠেকাতে এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমি ও তাপু স্যার সব সময় সহায়তা করেছি, যাতে করে তাহের স্যারের হত্যাকাণ্ডের বিচার সুষ্ঠুভাবে হয়। আমরা সবাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে প্রথম থেকে লড়াই করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা মনে করি, এখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, অন্যায় করে টিকে থাকা যায় না।‘
Leave a Reply