টিপুকে যখন রাস্তায় এলোপাতাড়ি গুলিতে হত্যা করা হয়, তখন কাইল্যা পলাশ রাজধানীর ইস্কাটনের গোল্ডেন ড্রাগন বারে অবস্থান করছিলেন। তার সাথে ছিলেন আরো দু’জন। ওই দু’জন কারা তা এখনো জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে খুনের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে ওই দু’জনও ছিলেন। এ দিকে এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন আকাশ ওরফে মাসুমকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। টিপু হত্যাকাণ্ডে যারা লাভবান হয়েছে তাদের প্রত্যেককে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যাদের নাম প্রকাশ পেয়েছে তাদের মধ্যে সালেহ ও তার ভাই মুছা, ওমর ফারুক ওরফে কানা ফারুক ও কাইল্যা পলাশ অন্যতম। শ্যুটার হিসেবে নাম উঠে এসেছে সালেহ-মুছার। এরা দু’জন মতিঝিলের বোচা বাবু হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি। আরেকজন হলো ওমর ফারুক ওরফে কানা ফারুক। সেও বোচা বাবু হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
এ মামলা তুলে নেয়ার জন্য বোচা বাবুর বাবা আবুল কালামকে তারা অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু কালাম মামলা তুলতে অপারগতা প্রকাশ করে আসছিলেন। কালাম ছিলেন নিহত টিপুর ঘনিষ্ঠ লোক। মামলা তুলে না নেয়ায় ওই গ্রুপের টার্গেটে পড়েন টিপু। তার সঙ্গে যুক্ত হয় এলাকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। যারা দীর্ঘ দিন টিপুকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। বিশেষ করে মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কী হত্যার পর টিপু যখন ওই মামলায় জেলে যান তখন থেকেই একটি পক্ষ টিপুকে রাজনীতি থেকে চিরবিদায় জানাতে মাঠে নামেন। মিল্কী হত্যা মামলার তদন্তে টিপুর নাম বাদ পড়লেও ২০১৩ সাল থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডেই তাকে আর রাখা হয়নি। এই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইশারাতেই এজিবি কলোনির কাইল্যা পলাশ খুনিদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করে। ঘটনার সময় কাইল্যা পলাশ ইস্কাটনের গোল্ডেন ড্রাগনে অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়। তার সাথে আরো দু’জন ছিলেন। তাদের সম্পর্কেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানায়।
এ দিকে গ্রেফতার মাসুম ওরফে আকাশকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাসুমের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য দিকে মাসুম সম্পর্কেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তার বাবা স্কুলশিক্ষক। এলাকায় তাদের পরিবারকে ভদ্র বলেই সবাই জানে। নিজেদের বাড়ি থাকার পরও মাসুম বসবাস করতেন রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেকের ৬০/১৫ নম্বর বাসায়। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা দাবি করেন, বেপরোয়া হয়ে ওঠার কারণে ১৪-১৫ বছর আগে তার বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। এর পর থেকে তাকে আর ওই এলাকায় দেখা যায়নি। ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে মাসুম দ্বিতীয়। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তার মা একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সে ভালো ছাত্র ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করে এবং বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত আড্ডা দিতে শুরু করে। তাকে এ বিষয়ে বারবার নিষেধ করা হয়। তার বাবা যখন দেখলেন শাসন করেও কাজ হচ্ছে না, তখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের আর যোগাযোগ নেই বলে জানান তার মা। মাসুম কাউকে হত্যা করতে পারে বিষয়টি মেনে নেয়া পরিবারটির জন্য কষ্টকর দাবি করে মাসুমের ভাবি বলেন, ‘আমরা জানি না সে আদৌ এই হত্যা করেছে কি না। আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে সে এতটাই খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ হত্যা করার মতো কাজ সে করতে পারে, সেটা মানতেই পারছি না।’
এ ছাড়া টিপু হত্যায় যারা লাভবান হয়েছে তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কেই খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ গোয়েন্দারা। আইডিয়ালে ভর্তিবাণিজ্য, এলাকার আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ অপরাধ সাম্রাজ্য কাদের দখলে তা নিয়েও খোঁজখবর চলছে। এসব তথ্যের সুরাহা হলেই খুনিচক্র বেরিয়ে পড়বে বলে একাধিক সূত্র জানান।
গত বৃহস্পতিবার মতিঝিল এজিবি কলোনিতে গ্রান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাজাহানপুরের মানামা ভবনস্থ বাটা দোকানের সামনে টিপুর মাইক্রো বাসটি থামে। এ সময় রাস্তার বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলে দু’জন অপেক্ষা করছিল। হেলমেট পরিহিত এক মোটরসাইকেল আরোহী থেমে থাকা মাইক্রোবাসের বামপাশে গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। গুলি গাড়ির গ্লাস ভেঙে টিপুর শরীরে বিদ্ধ হয়। এতে তিনি নিহত হন। এই ঘটনায় পথচারী সামিয়া আফরান প্রীতি নামের এক কলেজছাত্রীও নিহত হন।
Leave a Reply