গত সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে প্রাইজবন্ডের লটারিতে পুরস্কার পাওয়া ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পুরস্কার পাওয়ার পরও এ সময় প্রাপ্ত টাকার কোনো দাবিদার আসেনি। ফলে প্রাইজবন্ডের কোটি কোটি টাকার পুরস্কার তামাদি হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অধিদপ্তরের এক হিসাবে বলা হয়, গত সাড়ে তিন বছরে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার কোনো দাবি আসেনি। ফলে সরকার এ টাকা বিতরণ করতে পারেনি। প্রতিবছর এ রকম ঘটনা ঘটছে। যদিও লটারির তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের টাকার দাবি করার নিয়ম রয়েছে।
তবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রাইজবন্ডের লটারির ফলাফল অনুসন্ধানে ওয়েবভিত্তিক সফ্টওয়্যার চালু করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ্ আলম বলেন, প্রাইজবন্ডের সকল পুরস্কার বিতরণ না হওয়ার অন্যতম কারণ প্রাইজবন্ডের গ্রাহকরা পুরস্কার সম্পর্কে অবহিত থাকেন না। অনেকে লটারির ফলাফল খুঁজে দেখেন না। এতে অনেক টাকা আনক্লেইমড থেকে যাচ্ছে। আবার প্রাইজবন্ড ড্রয়ের তারিখটি অনেকেই ভুলে যান। তবে এই ওয়েব সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে কারও কাছে যদি ৫ হাজার প্রাইজবন্ড থাকে, তিনিও ১ মিনিটের মাধ্যমেই জানতে পারবেন কোনো পুরস্কার জিতেছেন কি না।
বর্তমানে সর্বশেষ দুই বছরের লটারির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এই ওয়েবসাইটে। দেশে বর্তমানে ৬৭টি সিরিজের প্রাইজবন্ড রয়েছে। প্রতিটি সিরিজ থেকে ৪৬টি করে পুরস্কার দেয়া হয়। প্রতি তিনমাস পরপর লটারি হয় প্রাইজবন্ডের। একটি লটারি সকল সিরিজে মোট ৩ হাজার ৮২টি প্রাইজবন্ড পুরস্কার পেয়ে থাকে।
সরকার প্রাইজবন্ড বিক্রি করে জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এটি যে কোনো সময় ভাঙানো যায়। প্রতিটি প্রাইজবন্ডের মূল্য ১০০ টাকা। এর বিপরীতে সরাসরি কোনো লভ্যাংশ নেই। বন্ডের ক্রেতাদের লটারির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা। প্রতি লটারিতে প্রত্যেক সিরিজ থেকে একটি করে মোট ৬৭টি প্রাইজবন্ড প্রথম পুরস্কার পেয়ে থাকে। দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রেও প্রতিটি সিরিজ থেকে একটি করে পুরস্কার দেওয়া হয়। তৃতীয় পুরস্কার এক লাখ টাকা। প্রতিটি সিরিজ থেকে দু’টি করে প্রাইজবন্ড এ পুরস্কার পায়। চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা, যার প্রতি সিরিজ থেকে দু’টি করে পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি সিরিজ থেকে ৪০টি করে প্রাইজবন্ড পুরস্কার পায়। প্রতি তিন মাস পরপর লটারি হয় প্রাইজবন্ডের। একটি লটারিতে সব সিরিজে মোট ৩ হাজার ৮২টি প্রাইজবন্ড পুরস্কার পেয়ে থাকে। প্রতি লটারির মোট পুরস্কার মূল্য ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বছরের চারটি লটারিতে মোট পুরস্কার মূল্য ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু এই পরিমাণ টাকা কোনো বছরই বিতরণ হয় না।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাইজবন্ডের গ্রাহকরা পুরস্কারের ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। ওই অর্থবছরে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার পুরস্কারের কোনো দাবি আসেনি। পরের অর্থবছরে গ্রাহকরা পুরস্কার নিয়েছেন ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার। ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার পুরস্কার গ্রাহকরা নেননি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকার পুরস্কার দেয়া হয়েছে। আর ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার পুরস্কারের কেউ দাবি করেনি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দু’টি লটারির বিপরীতে গ্রাহকরা ১৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা নিয়েছেন। দাবি আসেনি ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার।
ফলাফল জানার ওয়েবসাইট চালু: প্রাইজবন্ডের লটারির ফলাফল জানতে চালু করা হয়েছে ‘প্রাইজবন্ড রেজাল্ট ইনকোয়ারি সফ্টওয়্যার বা পিবিআরইএস’ নামের বিশেষ সফ্টওয়্যার। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর’র চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, প্রাইজবন্ডের ক্রেতারা যাতে সহজেই ড্রয়ের ফলাফল মেলাতে পারেন সেজন্য সফ্টওয়্যার তৈরি করা হয়েছে।
যেভাবে জানা যাবে ফলাফল: অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ই-সেবা অংশে প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’-এর ফলাফল অনুসন্ধানে ওয়েবভিত্তিক সফ্টওয়্যারে প্রবেশ করে ফল জানা যাবে। িি.িরৎফনফ.ড়হষরহব থেকে এই ফল জানা যাবে। ওয়েবসাইটে দুই পদ্ধতিতে প্রাইজবন্ডের ফলাফল জানা যাবে। একটি হচ্ছে সার্চ বক্সে সরাসরি নম্বর লিখে। অন্য পদ্ধতি হচ্ছে মাইক্রোসফ্ট এক্সেল ফাইল-এ নম্বর আপলোড করে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ফলাফল অনুসন্ধানের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রথম পদ্ধতিতে প্রাইজবন্ডের নম্বরটি (সিরিজ ব্যতীত) বাংলায় অথবা ইংরেজিতে সার্চ বক্সে লিখে অনুসন্ধান করা যাবে। একাধিক নম্বর একসঙ্গে অনুসন্ধান করতে হলে নম্বরগুলোকে কমা (,) দিয়ে আলাদা করতে হবে। ধারাবাহিক (সিরিজ) নম্বর অনুসন্ধানের জন্য প্রথম ও শেষ সংখ্যার মাঝে হাইফেন (-) ব্যবহার করতে হবে।
আর দ্বিতীয় পদ্ধতিতে প্রাইজবন্ডের নম্বরগুলো (সিরিজ ব্যতীত) মাইক্রোসফ্ট এক্সেল সিটের কলাম ‘এ’-তে ইংরেজিতে লিখতে হবে এবং সরাসরি এক্সেল ফাইলটি সফ্টওয়্যারে আপলোড করতে হবে। সফ্টওয়্যারে অনুসন্ধানের তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ২ বছরের মধ্যে প্রকাশিত সব ফলাফলের বিপরীতে কোনো মিল পেলে তার ফলাফলের কপি দেখাবে।
প্রাইজবন্ড ক্রেতারা এই সফ্টওয়্যার থেকে পুরস্কারের টাকা দাবি ফরম ডাউনলোড করতে পারবেন এবং প্রাইজবন্ডের ড্র সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়া এই সফ্টওয়্যারে ক্রেতারা বিনামূল্যে ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন করতে পারবেন। যার মাধ্যমে প্রতি ৩ মাস পরপর (৩১শে জানুয়ারি, ৩০শে এপ্রিল, ৩১শে জুলাই ও ৩১শে অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফল সম্পর্কে সাবস্ক্রিপশন প্রাপ্ত গ্রাহকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-মেইলে অবহিত হতে পারবেন।
এদিকে একই অবস্থা বিরাজ করছে এবিআর’র ইএফডি লটারিতে: প্রতিমাসে সারা দেশে ইএফডি মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধকারীদের মধ্য থেকে ১০১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এর প্রথম পুরস্কার এক লাখ টাকা। বাকি ১০০ জনকে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেয়া হয়। এই পুরস্কারও যারা পাচ্ছেন তারা নিতে আসছেন না। গত ১৩টি লটারি থেকে মোট ৮৯ জন পুরস্কার নিয়েছেন। অথচ পুরস্কার পেয়েছেন ১৩১৩ জন। ইএফডি’র ১৪তম ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআর জানায়, এনবিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে ইএফডিকে পরিচিত করানোর।
Leave a Reply