রাজধানীর বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে এক লাফে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে গত শুক্রবার পণ্যটির দাম পৌঁছায় ৬০ টাকায়। গতকাল তা আরেক দফায় পাঁচ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারে এখন প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এদিকে প্রতিদিনের রান্নায় বহুল ব্যবহৃত মসলাজাতীয় এ পণ্যটির দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের মেসার্স গাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ রানা গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আড়তে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। তাই যা পাওয়া যাচ্ছে তা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।
তিন দিন আগেও এক দফা দাম বেড়েছে। শুক্রবার খুচরায় তা ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। শনিবার আবার বেড়েছে। আজ (রবিবার) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬৫ টাকা কেজি। এর কমে বিক্রি করা সম্ভব না।
কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারের মিলন স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মিলন হোসেনও জানান, শুক্রবারের পর গতকাল পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বেশিরভাগ দোকানে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা বিক্রি হলেও কোনো কোনো দোকানে বাছাই করা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার কোনো ছাপ পড়ছে না। দাম কমার বদলে কেবল বাড়ছেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা যথারীতি সরবরাহ সংকটের অজুহাত দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম সহসা কমবে না।
শ্যামবাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান আজমীর ভা-ারের ব্যবসায়ী তপু সেন বলেন, বাজারে এখন দেশি যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে তা মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজের সরবরাহ এখন প্রায় শেষের পথে। অন্যদিকে ভারতে পেঁয়াজের দাম ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কমে গেছে। ফলে দামটাও বেড়ে গেছে। বাজারে হালি পেঁয়াজ আসতে আরও ১৫-২০ দিন লাগবে। তখন দাম কিছুটা কমতে পারে। এ জন্য ভারতেও পেঁয়াজের দাম কমতে হবে।
রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোয় কিছুদিন আগেও ৩৬ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লাগাতার বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ভোক্তা। মালিবাগ বাজারের এক ক্রেতা মো. আলী আজম বলেন, একটা পণ্যের দাম বাড়বে, আবার কমবে- এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা এক দফায় কতটা বাড়তে পারে? এক লাফে ১৫-২০ টাকা বেড়ে যায় কীভাবে? বুঝে পাই না। এই তো সেদিন পেঁয়াজের কেজি ৪০-৪৫ টাকা কিনেছি। এখন ৬৫ টাকা। সরকার কি এসব দেখে না? আমাদের কষ্ট দেখার কি কেউ নেই?
রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মো. আমিন বলেন, পাইকারিতে ৬০-৬২ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনে এনেছি। সেই সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও দোকান ভাড়া যোগ করলে প্রতিকেজি পেঁয়াজে আমাদের খরচ পড়ছে ৬৪ টাকা। সেখান থেকে ভালো পেঁয়াজ বাছাই করলে তা ৬৮ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। সাধারণ মানের পেঁয়াজ ৬৫-৬৬ টাকার নিচে বিক্রি করলে লোকসান হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়া বা কমা আমাদের হাতে থাকে না। এটা সম্পূর্ণ পাইকাররাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আড়তদাররা আমাদের বলছেন- দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ এখন কম। তাই দাম বাড়তি। তবে কিছুদিনের মধ্যে হালি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম কমে আসবে।
Leave a Reply