মাগুরার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ চালু করতে চায় রেলওয়ে। কিন্তু নির্মাণকাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে। রয়েছে মহামারী করোনার অজুহাত। আরও বলা হচ্ছে ঠিকাদারের সঙ্গে দেরিতে চুক্তি এবং সময়মতো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এখনো প্রকল্পের কিছু জমি অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে। ফলে ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি।
২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ আগামী এপ্রিলে শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও তা পূরণ হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২৬ মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
ফরিদপুরের ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ করা হবে। ৪৫ মাসে মাত্র ৩৩ ভাগ কাজ করা গেছে। বিলম্বের জন্য জমি অধিগ্রহণে দেরি ও করোনা মহামারীকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদিও প্রকল্পটি বৈদেশিক ঋণ নয় সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী ১৮ মাসে অর্থাৎ আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা কথা ছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৩২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। মূল লাইন নির্মাণকাজে অগ্রগতি মাত্র ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। দ্বিতীয় প্যাকেজে দুই সেতু ও আন্ডারপাস নির্মাণের কাজের অগ্রগতি ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ চলছে। দুই মাসে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই মেয়াদ বাড়াতেই হচ্ছে।
সম্প্রতি রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, প্রকল্প ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে প্রস্তাব রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পিএসসি সভায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
মেয়াদ শেষ হতে চললেও কাজ শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক আসাদুল হক পিএসসি সভায় বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে দেরিতে চুক্তি এবং সময়মতো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এখনো প্রকল্পের কিছু জমি অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে। ফলে ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি।
চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে তা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা চাওয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে।
প্রকল্পের সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা ও দরপত্রের ডকুমেন্ট তৈরিতে পরের বছরের মে মাসে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে রেলওয়ে। এর দুই বছর পর ২০২১ সালের মে মাসে দুই প্যাকেজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। ৪৩৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় মূল রেলপথ তৈরির কাজ পেয়েছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) এবং বাংলাদেশের ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিএল)। দ্বিতীয় প্যাকেজে ৪৪৯ কোটি টাকায় একটি আন্ডারপাস, ৯০ মিটার দীর্ঘ চন্দনা সেতু ও ৫৪৯ মিটার দীর্ঘ গড়াই সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে চীনের চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) ও বাংলাদেশের মীর আকতার হোসেন লিমিটেড (এমএএইচএল)।
২০১৮ সালের ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন পায়। দুটি প্যাকেজে ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার মূল রেলপথ, কামারখালী ও মাগুরা স্টেশনে চার দশমিক ৯ কিলোমিটার লুপ লাইন, কামারখালী ও মাগুরায় স্টেশন ভবন নির্মাণ, ২৭টি ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, সিগন্যালিং ও ইলেকট্রিক কাজের সংস্থান রয়েছে। মাগুরা জেলাকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে এক হাজার ২০২ কোটি টাকায় ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ ৪৫ মাসে মাত্র ৩৩ শতাংশ হয়েছে।
Leave a Reply