ময়মনসিংহবাসীর চাহিদা পূরণে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক পরিবহন হিসাবে সবসময় যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও বিলাসবহুল কোনো কোচ ছিল না এ ট্রেনে। ফলে যাত্রীদের মধ্যে আক্ষেপ দেখা দিয়েছিল। তবে যাত্রীদের সেই অপেক্ষার পালাও শেষ হচ্ছে। আজ সোমবার থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচ ও বার্থ নিয়ে চলাচল শুরু করছে বিজয় এক্সপ্রেস। এতে যাত্রীসেবার পাশাপাশি বাড়বে রেলের আয়।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিরতিহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীতাসহ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য ২০০৮ সালে চীন থেকে বিভিন্ন টাইপের ৮০টি বগি আমদানি করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৮ সালে আনা হয়েছিল ৬৭টি ইরানি কোচ। বিভিন্ন রুটে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কোচের আয়ুকাল ফুরিয়ে আসায় ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে লাল সবুজের ৬০০ কোচ আনা হয়। এসব কোচ পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রথম সারির আন্তঃনগর ট্রেনে যুক্ত করা হয়। এতে ক্রমান্বয়ে ইরানি ও চায়না কোচগুলো অবমুক্ত হতে থাকে। ইরানি বগির তুলনায় চায়না কোচের অবস্থা ভালো হওয়ায় চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ১৪ বগির কম্পোজিশন রেক নিয়ে আজ সোমবার সকাল ৯টায় ময়মনসিংহের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে বিজয় এক্সপ্রেস। যাত্রার আগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। চায়না কোচ দিয়ে ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারবেন। একই সঙ্গে রেলের যাত্রী খাতের আয়ও বাড়বে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনবান্ধব সরকার রেলে আধুনিক ও উন্নত সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর। যার ধারাবাহিকতায় আধুনিক ছয়টি এসি বগিসহ চাইনিজ বগি দিয়ে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটির আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এজন্য ময়মনসিংহবাসীর পক্ষ থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেলমন্ত্রীসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
রেল কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে বিজয় এক্সপ্রেসে চায়না কোচ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব পাঠাতে রেলভবন থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে চিঠি দেওয়া হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ের উপ-পরিচালক (মার্কেটিং) কালিকান্ত ঘোষ স্বাক্ষরিত চিঠিতে অবমুক্ত চায়না কোচ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা (সিওপিএস) কার্যালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেস অবমুক্ত চায়না কোচ দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ময়মনসিংহ স্টেশনে চায়না কোচের সার্ভিসিং ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যার কারণে বিজয় এক্সপ্রেসের বেইজ স্টেশন চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া চায়না কোচ সংযুক্তির পর থেকে সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে। বিজয় এক্সপ্রেসের সময়সূচি পরিবর্তনের ফলে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের উদয়ন-পাহাড়িকা ট্রেনের সূচিতেও পরিবর্তন এসেছে। উদয়ন এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে সিলেট ছাড়বে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সকাল ৯টার পরিবর্তে ৭টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম ছাড়বে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনসার আলী আমাদের সময়কে জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বার্থের প্রতি আসনে টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ৮৪৩ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচের প্রতি আসনের মূল্য ৭৩৬ টাকা, নন এসি শোভন চেয়ারের মূল্য ৩৮৫ টাকা।
Leave a Reply