সাধারণত সব কোষ সুবিন্যস্ত পদ্ধতিতে বিভাজিত এবং কোষকলার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করে। অবিন্যস্ত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষকলার বৃদ্ধি হলো টিউমার। এটি দুধরনের বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যানসার। জরায়ুমুখের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো জরায়ুমুখের ক্যানসার। তবে থেকে শুরুতেই চিকিৎসা প্রয়োজন।
রোগের কারণ : ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে বা যৌনমিলন, বিভিন্নজনের সঙ্গে যৌনমিলন, অপরিচ্ছন্ন জননেন্দ্রিয়, জননেন্দ্রিয়ের সংক্রামক রোগ (হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, টাইপ-২ ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস), ২০ বছরের কম বয়সে গর্ভধারণ ও মা হওয়া, ধূমপান ও নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থা।
লক্ষণ : অনিয়মিত রক্তস্রাব, ঋতুবন্ধের এক বছর পরও রক্তস্রাব, যৌনসঙ্গমের পর রক্তস্রাব, যোনিপথে বাদামি বা রক্তমাখা স্রাবের আধিক্য ও দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব। মনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের কোনোটিই ক্যানসার নিশ্চিতকরণের চিহ্ন নয়। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন দেখে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় রোগটি কোন ধরনের এবং কোন অবস্থায় রয়েছে।
চিকিৎসা : ক্যানসারের আগের স্তরের শুরুতেই যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা যায়। ক্যানসারের আগের স্তরে জরায়ুমুখের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের চিকিৎসা করা হয় ক্রায়োথেরাপির মাধ্যমে। এ সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা প্রয়োগ করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইলেকট্রোকোওয়াগুলেশন বা বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমেও প্রচণ্ড উত্তাপ সৃষ্টি করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করা যায়। চিকিৎসার এ প্রক্রিয়ায় রোগীর সন্তান ধারণক্ষমতা অটুট থাকে।
সার্জারি : ক্যানসার যখন উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন সার্জারি চিকিৎসা বেছে নেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ চিকিৎসায় রোগীর সম্পূর্ণ জরায়ু অপসারণ করা হয়। এ পদ্ধতিকে হিস্টারেক্টমি বলা হয়। কখনো কখনো যোনিপথের ওপরের অংশ এবং কাছের কোষকলা ও লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করা হয়, যাতে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষ দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে না পড়ে।
রেডিয়েশন থেরাপি : এ চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো, বিকিরণের মাধ্যমে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের ধ্বংস করা। অনেক সময় এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় টিউমার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে বা ব্যথা কমাতে। যখন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলো সার্জারি করার পরও অপসারিত হয় না, সার্জারির পর আবার রেডিয়েশন দেওয়া হয়।
চিকিৎসাপরবর্তী করণীয় : সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা করাতে হয়। যৌনমিলন থেকে কিছুদিন বিরত থাকতে হয়। সব নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চললে চিকিৎসার দু-তিন মাসের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
প্রতিরোধ : বিবাহিত জীবন বা যৌনজীবনে প্রবেশ করা প্রত্যেক নারীকে অবশ্যই প্রতি তিনবছরে একবার শারীরিক কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। এ রোগের উপসর্গগুলো, যেমন মাসিক অবস্থায় বা ঋতুবন্ধের পর অস্বাভাবিক রক্ত স্রাব, স্রাব ইত্যাদি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এভাবে প্রত্যেক নারী যদি নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন, তবে জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য কোনো নারীকেই আর এর চরম মূল্য দিতে হবে না। ক্যানসারের সার্বিক প্রতিরোধ, সঠিক রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট এবং অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল
কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার
Leave a Reply