স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই সন্তানের সাথে কথা বলতে চায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কথা বলার অনুমতি চেয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে আদালতে আবেদন করেন পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। শুনানি না হওয়ায় বিষয়টি এতদন জানা যায়নি।
মিতু হত্যা মামলায় গত ৯ জানুয়ারি বাবুলকে তারই দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পিবিআই। বাবুল আক্তার এখন ফেনী জেলা কারাগারে আছেন। এর আগে গত বছর মিতুর বাবাও এ ঘটনায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায়ও বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পিবিআই।
আদালত সূত্র জানায়, মিতু হত্যা মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ চাকমাও বাবুল আক্তার এবং মাহমুদা খানম মিতুর দুই সন্তানের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত গত বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মাগুরায় গিয়ে মিতু-বাবুলের সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষ্যগ্রহণের আদেশ দিয়েছিলেন। তবে আদালতের ওই আদেশের পরও তদন্ত কর্মকর্তা বাবুলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি বলে দাবি বাবুলের ভাইয়ের।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, সপ্তাহখানেক আগে আবেদনটি করা হয়েছে। এখনো আদালত কোনো আদেশ দেননি। তিনি বলেন, আগের আবেদনটি করা হয়েছিল মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায়। এবারের আবেদন বাবুল আক্তারের করা মামলায়। তিনি বলেন, ‘ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছেলের সঙ্গে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ের সাথেও আমরা কথা বলতে চাই। সে জন্যই আবেদন করা হয়েছে।’
বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আদালত আগেই আদেশ দিয়েছেন। তখন যেহেততু করোনার প্রকোপ ছিল- আমরা বলেছিলাম মাগুরায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। আদালত তা মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু তখনকার আইও আর যোগাযোগ করেননি। পরে আমরা আইওর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তার পরও তিনি মাগুরা আসেননি। এখন যদি কথা বলার প্রয়োজন হয় বলবে। তবে এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছুই জানি না।’
এ ব্যাপারে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘যে আবেদনের কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না। কাল আদালতে গিয়ে খোঁজ নেব। নিশ্চয় আদালত শুনানির দিন ধার্য করবেন। তখন শুনানি করব।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আগের একটি আদেশ আছে, তার পরও আরেকটি আবেদন মানসিক টর্চারের শামিল। আগের আদেশের অগ্রগতি কী, সেটাও আমরা আদালতের মাধ্যমে জানতে চাইব।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন মিতুর স্বামী তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি। হত্যাকা-ের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তার হত্যা মামলা করেন। কয়েক মাস পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয় তাকে। একই সময় ওই হত্যাকা-ে বাবুলের সম্পৃক্ততার খবরটি উঠে আসে। ঘটনার তিন বছর পর দায়িত্ব নিয়ে পিবিআই হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন শুরু করে।
Leave a Reply