পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাসে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে অতিসংক্রামক ওমিক্রন এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কিছু জিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সাইপ্রাসের বিজ্ঞানীরা নতুন শনাক্ত এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ডেল্টাক্রন’ নাম দিয়েছেন।
তবে এই মুহূর্তে ‘ডেল্টাক্রন’ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছে সাইপ্রাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম সাইপ্রাস মেইলের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইপ্রাসে ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের ডেল্টাক্রন শনাক্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের ১১ জনের এবং সাধারণ ১৪ জনের নমুনা নেয়া হয়েছিল।
ইউনিভার্সিটি অব সাইপ্রাসের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড মলিকিউলার ল্যাবরেটরির প্রধান ডা. লিওনডিওস কোস্ত্রিকিস বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেহে এই ভ্যারিয়েন্টের বারবার মিউটেশন ঘটেছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ধারণা করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, আগের ডেল্টা এবং বহুবার রূপ বদলে ফেলা ওমিক্রনের কিছু জিনগত সাদৃশ্য নতুন ডেল্টাক্রন ভ্যারিয়েন্টে মিলেছে। তবে এই মুহূর্তে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সাইপ্রাসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিকালিস হাজিপ্যানডেলাস।
নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করায় সাইপ্রাসের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের নিয়ে গর্ব করেছেন মিকালিস। তিনি বলেন, ডা. কোস্ত্রিকিস নেতৃত্বাধীন দলের যুগান্তকারী গবেষণা এবং ফলাফল আমাদের বিজ্ঞানীদের জন্য গর্বের। এই গবেষণা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সাইপ্রাসকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে নিয়ে গেছে।
সাইপ্রাসের বিজ্ঞানীরা নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ডেল্টাক্রন’ বললেও এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো নাম ঘোষণা করা হয়নি।
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো করোনার অতি-সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনার বি.১.১.৫২৯ নামের এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকে মৃদু বা হালকা বলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।
টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলছেন, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় বিপজ্জনক না হলেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে মৃদু ভাবার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য। তিনি বলেন, যারা ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন কম ক্ষতিকারক হিসেবে দেখা দিলেও ভ্যারিয়েন্টটিকে মোটেই মৃদু হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
তার ভাষায়, ‘অন্য ভ্যারিয়েন্টদের মতো ওমিক্রনও মানুষকে হাসপাতালে যেতে বাধ্য করছে, এমনকি মানুষ মারাও যাচ্ছে। আসলে এতো তাড়াতাড়ি এবং বিশালসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন যে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ওপর চাপ বাড়ছে।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়। দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, ওই বছরের ডিসেম্বরে উহান শহরের হুনান সি ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছিল করোনা। সি ফুড মার্কেটে গৃহপালিত ও সামুদ্রিক প্রাণী ছাড়াও বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মাংস বিক্রি হতো।
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন বা এই জাতীয় কোনো বন্য প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রথম সংক্রমিত হয় সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, যা পরে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে।
Leave a Reply