পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া বিডিআর সদস্যদের মধ্যে ১২ জনসহ ৩৮ জন কারাগারে মারা গেছেন। ২০০৯ সালের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত রায় দেন। এতে ৮৩৪ আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে ফাঁসি ও ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৬০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২৭৭ জন বিডিআর সদস্যকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। দণ্ডিতরা আপিল করলে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪ জন, যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের মধ্যে ১২ জন এবং বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিতদের মধ্যে ২৯ জনকে খালাস দেন। এ ছাড়া নিম্ন আদালতে খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে; হাইকোর্ট ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখেন। তবে একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলা বিচারাধীন থাকায় তাদের কেউই মুক্তি পাননি।
খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে কারাগারে মারা যাওয়া ১২ জন হলেন- নায়েব সুবেদার আব্দুল মতিন মিয়া, ল্যান্স নায়েক আশরাফুল ইসলাম, হাবিলদার মাহতাব উদ্দিন জি ক্লার্ক, এনসি সানু চন্দ্র, ল্যান্স নায়েক মেডিক্যাল (জিডি) সৈয়দ এনামুল হক, সিপাহী আলিমুজ্জামান, হাবিলদার মেডিক্যাল সহকারী হাসেম সরোয়ার, হাবিলদার হাবিবুর রহমান, জেসিও সুবেদার মেজর জাকির হোসেন, হাবিলদার শহিদুল ইসলাম, জেসিও সুবেদার আব্দুল মালেক ও সিপাহী কামরুল হাসান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন। তারা হলেন- ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান, নায়েক শহী আক্তার, জেসিও নায়েব সুবেদার সাইদুর রহমান, সিপাহী শামীম আল মামুন জুয়েল, জেসিও নায়েব সুবেদার ফজলুল করিম ও হাবিলদার আনিসুজ্জামান। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত ৩ জন। তারা হলেন- সিপাহী শফিকুল ইসলাম, জেসিও নায়েব সুবেদার ইউনুছ আলী ও জেসিও সুবেদার শেখ আশরাফ আলী।
অন্য মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জেসিও নায়েব সুবেদার শহীদুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক আব্দুল বারেক, নায়েক ইন্তাজ আলী, নায়েক শামসুল হক মোল্লা, সিপাহী আশরাফুল আলম, হাবিলদার আনোয়ার হোসেন ও জেসিও নায়েব সুবেদার আবুল কাশেম এবং ৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জেসিও সুবেদার মেজর আব্দুল কাইয়ুম। আর মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান ডিএডি আব্দুর রহিম, হাবিলদার শফিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান, ফরহাদ হোসেন ও জেসিও নায়েব সুবেদার আব্দুল মতিন মিয়া। এ ছাড়া মারা যান আসামি হাবিলদার আব্দুস সালাম, ল্যান্স নায়েক শহিদ, হাবিলদার নুরুল ইসলাম ও নায়েক গোলজার হোসেন। তবে তারা দণ্ডিত না খালাসপ্রাপ্ত তা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, বিস্ফোরক আইনের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় হত্যা মামলায় খালাস পেয়েও ১২ জন কারাগার থেকে বের হতে পারেননি। যেখানে ২০১৩ সালে হত্যা মামলার রায় হয়েছে, সেখানে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারাধীন। প্রায় ১৩শ জন সাক্ষীর মধ্যে হত্যা মামলায় ৬৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছিল। প্রায় একই সংখ্যক সাক্ষীর এ মামলায় মাত্র ১৯৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। তাই মামলাটির বিচার কবে শেষ হবে তা জানি না। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো খালাস পাওয়া বাকি আসামিদেরও কারাগারেই মৃত্যু হবে। তাই দ্রুত বিস্ফোরক আইনের মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান তিনি।
২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দেয় সিআইডি। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় ৪ বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।
Leave a Reply