তখন ১৪-১৫ বছর বয়স ময়ফুল বিবির। ভয়ার্ত চোখে স্বামী আবদুল হামিদ হাওলাদারের হাত ধরে পা রেখেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। এর পর মান-অভিমান আর ভালোবাসায় কেটে গেছে প্রায় ৫৫ বছর। কেউ কখনো একে অন্যকে একদিনও ছেড়ে থাকেননি; কিন্তু ৫৫ বছর শেষে বিচ্ছেদ ঘটল, হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ। সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকা-ে থেমে গেছে দুজনের একসঙ্গে পথচলা। কোনো রকমে ময়ফুল বিবি নদীর তীরে উঠতে পারলেও হারিয়ে গেছেন আবদুল হামিদ। কান্না থামছে না ময়ফুল বিবির। যে কোনো মূল্যে ফিরে পেতে চান স্বামীকে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ময়ফুল বিবি সাংবাদিকদের বলছিলেন সেই ভয়ঙ্কর কাহিনি। তিনি বলেন, লঞ্চে আগুন লাগার সময় নিচতলার ইঞ্জিন রুমের পাশে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ চারদিকে ধোঁয়া। বৃদ্ধ মানুষ, শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। দ্রুত উঠে দেখি লঞ্চের চারদিকে আগুন। পরে তিনতলায় উঠে স্বামী আর মেয়েকে নিয়ে নদীতে লাফ দিয়েছি। দুই ঘণ্টা নদীতে ভেসে ছিলাম। পরে এলাকার মানুষ আমাকে উদ্ধার করেছে। জ্ঞান ফেরার পর মেয়েকে পেলেও স্বামীকে পাইনি। মানুষটারে একটু খুঁজে দেন। কোথায় আছে, কে জানে। কথাগুলো যখন ময়ফুল বিবি বলছিলেন, দুই চোখে ঝরছিল অশ্রু। তিনি আরও বলেন, ‘স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে গেছিলাম। অনেক দিন পর লঞ্চে গ্রামে ফিরছিলাম; কিন্তু আমার স্বামী তো ফিরল না।’
ময়ফুলের মেয়ে হালিমা বেগম বলেন, ‘নদীতে ঝাঁপ দিয়ে দেখি চারদিকে কুয়াশা। দুই হাত দূরেও কিছু দেখা যায় না। মাকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ নদীতে ভেসে ছিলাম। পরে তীরে উঠতে পারলেও আমার বৃদ্ধ বাবাকে আর পাইলাম না।’
Leave a Reply