আফগানিস্তানের নতুন সরকারের প্রধান হচ্ছেন তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদার। সরকারের শীর্ষপদে দেখা যেতে পারে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব ও দোহায় রাজনীতিক কার্যালয়ের শীর্ষ নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাইকেও। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে থাকছেন হাবিয়াতুল্লাহ আখুনজাদা। তালেবানের তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। রয়টার্স ছাড়াও প্রথম সারির প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গতকাল এ খবর জানিয়েছে।
তালেবানের পক্ষ থেকে কয়েক দিন থেকেই বলা হচ্ছে, নতুন সরকার গঠন সময়ের ব্যাপার মাত্র। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছিল, তালেবান সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে। কাবুলে প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছিল। তবে দিনের শেষভাগে তা পিছিয়ে যায়। আজ শনিবার নতুন সরকারের ঘোষণা আসছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
তালেবান সরকার গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আফগানিস্তানে নতুন সরকারে ৮০ ভাগ আসনই থাকছে দোহা কার্যালয়ের সদস্যদের দখলে। ওই কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে এতদিন দায়িত্ব পালন করে আসছেন মোল্লা বারাদার- আর তিনিই তালেবান সরকারের প্রধান। দোহা কার্যালয়ের সামরিক শাখার দায়িত্ব পালন করছেন মোল্লা ইয়াকুব। ওই কার্যালয়ের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্তানিকজাই। এ দুজনকেই নতুন সরকারের শীর্ষপদে দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতারা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা আহমাদুল্লাহ মুত্তাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, রাজধানী কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রসাদে নতুন সরকারের ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, শুক্রবার নামাজের পর সরকার ঘোষণা হতে যাচ্ছে। পরে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ নিশ্চিত করেন, নতুন সরকারের ঘোষণা একদিন পিছিয়ে শনিবার ঘোষণা আসছে। গতকাল শুক্রবারই নতুন সরকারের সম্ভাব্য প্রতিনিধিরা রাজধানী কাবুলে পৌঁছেছেন।
তালেবান এমন সময় সরকার গঠন করতে যাচ্ছে যখন পানশির উপত্যকায় তালেবানবিরোধীদের সঙ্গে লড়াই চলছে। কয়েক দিন থেকে চলমান এ লড়াইয়ে উভয়পক্ষের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তালেবানবিরোধীদের অস্ত্র নামিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। কারজাই বলেন, এ লড়াইয়ের পরিণতিতে দেশ ও জনগণের স্বার্থসিদ্ধি হবে বলে মনে করি না। এ কারণে দুই পক্ষকেই বলছি, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, এতে শুধু আফগানিস্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রসঙ্গত, আগে ধারণা করা হয়েছিল, হামিদ কারজাই হয়তো তালেবান সরকারে থাকতে পারেন। পরে তালেবান নেতা স্তানিকজাই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, গত দুই দশকের সরকারে যারা ছিলেন তাদের কাউকে নতুন সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এতে সরকারে কারজাই থাকছেন না এটি প্রায় পরিষ্কার। তবে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, কারজাইকে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হতে পারে।
দুই দশকের যুদ্ধ শেষে সরকারে বসতে যাচ্ছে তালেবান। এর আগে নব্বই দশকে প্রথম সরকার গঠন করেছিল। সে সময় তাদের বিরুদ্ধে নারী অধিকার হরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এবার তালেবান নেতারা বলছেন, অতীতের ভুল তারা করবে না। নতুন সরকারে নারী প্রতিনিধি রাখার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। তবে নারীদের মন্ত্রী পর্যায়ে রাখা হবে না। এ ছাড়া নারী অধিকার বাস্তবায়নের ব্যাপারে ‘শরিয়া আইন’ অনুযায়ী নিয়ম করা হবে বলে বলা হয়েছে। যদিও এসব বিষয়ে এখনো স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই গতকাল কাবুলে নারীরা বিক্ষোভ করেছে। এর আগের দিন হেরাতে বিক্ষোভ হয়েছে। কাজেই নতুন সরকারের ওপর আস্থা ফেরানোই হবে তালেবানের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ।
Leave a Reply