এক সময়ে মাঠ কাঁপানো ছাত্রলীগ নেতারা এখন সিলেট আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক। তাদের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে নেতৃত্বের ভার। সামনেই তাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। সিলেটে অনেক জল্পনা এই নির্বাচন নিয়ে। আলোচনার ডালপালা ছড়াচ্ছে দেশেও। নতুন প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে নিয়ে মাঠে আওয়ামী লীগ। তার পিছু ছাড়ছে না শরিক দল জাতীয় পার্টিও। প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নেমেছে ভোটের মাঠে। নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে জাতীয় পার্টি। ভেতরে ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করেছেন বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীও। তিনিও ছেড়ে কথা বলছেন না। ভোটের মাঠে প্রভাব রাখতে শুরু করেছেন তিনি। ফলে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের জন্য কঠিন পরীক্ষা। প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে আছে প্রশ্ন। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ জন্য প্রার্থী হাবিবকে নিয়ে মাঠে আওয়ামী লীগ। সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুরনো শত্রু বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গেই। ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এই দুই দলের নেতারা। প্রার্থীও নেই নির্বাচনে। এরপরও ভেতরে ভেতরে তারা সক্রিয়। ভোটাররাও পর্যবেক্ষণ করছেন। সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। জাতীয় পার্টির পক্ষেই তাদের বেশি অবস্থান। অনেকেই আবার শফি চৌধুরীর পক্ষেও একাট্টা। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বাস্তবে ভোটের মাঠে প্রশাসনের কোনো আধিপত্য নেই। বরং এখনো নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে প্রশাসন। উত্তাপ-উত্তেজনার আশঙ্কা আছে। কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালানো হলে আসতে পারে বাধাও। এমন আশঙ্কা এই উপনির্বাচনের শুরু থেকেই। এ কারণে ২৮শে জুলাই ভোট গ্রহণ স্থগিত হওয়ার আগে বিএনপি ও যুবদলের নেতারা হুমকি-ধমকির অভিযোগ তুলেছিলেন। বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশির অভিযোগও করেন কেউ কেউ। এ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সক্রিয় হওয়ার কারণও ভিন্ন। সিলেট-৩ আসনে সবাই সমানে সমান। এখন পর্যন্ত এ আসনে একক আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি কোনো দলই। জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সবারই আছে ভোট ব্যাংক। জামায়াত ও খেলাফতের আলাদা ভোট ব্যাংক রয়েছে। দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে বিগত দিনে জামায়াতের দুই নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডে খেলাফত মজলিস সক্রিয় রয়েছে। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর মধ্যবর্তী এই উপনির্বাচনকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ভোটাররা মনে করছেন- এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের একাংশ ও বিএনপি ও জামায়াতের ভবিষ্যৎ প্রার্থীদের জন্য পথ মসৃণ হবে না। তাদের আশঙ্কা নির্বাচিত হলে হাবিব আগামী আড়াই বছরে এ আসনে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করে ফেলবেন। এতে করে আওয়ামী লীগেও নতুন কোনো প্রার্থী সুযোগ পাবে না। দীর্ঘ দিন এ আসন শাসন করেছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মতো অবস্থান গড়ে তুললে হাবিবকে টলানো সম্ভব হবে না। এতে করে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির জন্য সামনের দিন আরও কঠিন হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই এবারের ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিপরীত মেরুর ভোটাররা। এরই মধ্যে নানা ঘটনাও ঘটে ঘটেছে। ক্ষণে ক্ষণে পরিবেশও পাল্টেছে। আতিকের পক্ষেও জোয়ার তোলা হয়েছে। সেই জোয়ারে এখনো ভাসছেন আতিক। উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সব বলয়ই হাবিবের সঙ্গে একাট্টা। কিন্তু মাঠের পরিসংখ্যান তা বলছে না। সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সহ অনেকেরই অনুসারী ভেতরে ভেতরে বিদ্রোহী। তারা এখনো হাবিবকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেননি। ভোটের মাঠেও পড়েছে এর প্রভাব। এ ছাড়া, হাবিব প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও নিজ থেকে ভোটে সমন্বয় করতে পারেননি। নির্বাচনে নতুন প্রার্থী হওয়ার কারণে তার পক্ষ থেকে ঘাটতি রয়ে গেছে। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণের পর সিলেট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ের নেতাদের একেক ইউনিয়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে সমন্বয় করছে জেলা ও মহানগরের পদবিধারী নেতারা। কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে- তারা এখন পর্যন্ত নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ প্রচারণায় গতি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রহস্যজনক ভাবে নীরব হয়ে পড়েছেন ভোটাররা। অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেভাবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালানো হয়েছে; এর ফলাফল ভোটের আগেই নিশ্চিত হওয়া যেতো। কিন্তু সেই নিশ্চয়তা এখনো মিলছে না। প্রচারণায় পিছিয়ে থেকেও প্রতিপক্ষ আলোচনায়। এ ছাড়া ইভিএমে হবে এই ভোটগ্রহণ। ফলে ইভিএম পদ্ধতি নিয়েও ভোটারদের মধ্যে অনাগ্রহতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান। তিনি জানিয়েছেন, ‘দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। প্রচারণা কিংবা সমন্বয়ে কোনো ঘাটতি নেই। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা ভোট প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও এসে ভোট প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। উন্নয়নের জন্য মানুষ নৌকার পক্ষে রয়েছে বলে জানান তিনি।’
Leave a Reply