মামলা ও জিডির প্রতিদিনের তথ্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসককে (ডিসি) দিতে পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এসপিদের মধ্যে। পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী, থানার প্রতিদিনের মামলা ও জিডির তথ্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেটি পাঠানো হয় না বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব জুবাইদা মান্নান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল-১৯৪৩-এর ১৯২ প্রবিধান অনুসারে সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে মামলার এফআইআর ও জিডি থেকে তথ্যের ভিত্তিতে বিপি ফরম-১৬ পূরণ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতিদিন দিতে হবে। তবে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে নিয়মিত তথ্য না দেওয়ায় জেলা পর্যায়ে স্থানীয় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফলপ্রসূভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন করা অনুশাসন রয়েছে।
এ বিষয়ে একজন এসপি আমাদের সময়কে বলেন, সাধারণত প্রতিদিন মামলার তথ্য জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয় না। প্রতি মাসে জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিং হয়। এর ১-২ দিন আগে জেলার মামলার সংখ্যা এবং কোন থানায় কী ধরনের কত মামলা হয়েছে এর সারাংশ পাঠানো হয়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক থানা পরিদর্শনে এলে এসবের খোঁজখবর নেন। প্রতিদিন মামলা ও জিডির তথ্য পাঠানো কীভাবে সম্ভব? এ ছাড়া প্রতিদিন তথ্য পাঠানোর সঙ্গে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্পর্ক কী- সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। আরেকজন এসপি বলেন, আমরা সাধারণত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ের সময় এক মাসের তথ্য দেই। কিন্তু হঠাৎ করে কেন প্রতিদিন মামলা ও জিডির তথ্য চাওয়া হচ্ছে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের ডিসি আনোয়ার হোছাইন আকন্দ আমাদের সময়কে বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাগুলোতে পুলিশ সুপার মামলা ও জিডির তথ্য উপস্থাপন করেন। সোমবার আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলার হাতে পেয়েছি। এই সার্কুলারে এসপিদের প্রতিদিনই মামলা ও জিডির তথ্য দিতে বলা হয়েছে। আশা করছি, তারা আমাদের মামলা ও জিডির তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। মামলা ও জিডির তথ্য দেওয়া না দেওয়া নিয়ে এসপিদের সঙ্গে আপনাদের কোনো দ্বন্দ্ব আছে কিনা এমন প্রশ্নে ডিসি বলেন- না, কোনো সমস্যা বা দ্বন্দ্ব নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জেলায় ডিসি ও এসপির মধ্যে নানা বিষয়ে মতানৈক্য ও বিরোধ দেখা দিয়েছে। গত মে মাসের দ্বিতীয়পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনেও নানা ধরনের বিরোধ ও মতানৈক্য সংক্রান্ত অনেক তথ্য এসেছে। এসব মতানৈক্যের কারণে জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ দৈনন্দিন নানা কাজে বিঘœ ঘটছে। কোনো কোনো জেলায় ডিসি-এসপির মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ডিসিদের কথা শুনতে চান না এসপিরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে এসপিদেরও কথা শোনেন না জেলা প্রশাসকরা। কোথাও কোথাও ডিসিকে মামলা বা জিডির তথ্য পর্যন্ত দিতে রাজি হন না এসপি। এ অবস্থায় পিআরবিতে উল্লিখিত প্রবিধান স্মরণ করিয়ে দিয়ে এসপিদের ডিসিদের কাছে মামলা ও জিডির সংক্ষিপ্ত তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply